ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইরান যেন হাত গুটায়

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৩ জুলাই ২০১৮

ইরান যেন হাত গুটায়

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করবে না বলে ইসরাইল রাশিয়াকে জানিয়েছে। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানী বাহিনীগুলোকে সিরিয়া ছাড়তে মস্কোর উৎসাহিত করা উচিত। বুধবার মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে নেতানিয়াহু এসব বলেছেন। ইসরাইল চায়, ইরান পুরো সিরিয়া থেকে না সরুক, ইসরাইল সীমান্তের কাছাকাছি যেন না থাকে। টাইম, হারেৎস ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস। প্রতিবেশী সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর উপস্থিতি যেভাবে বাড়বে সেটি ইসরাইলের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। প্রবল গৃহযুদ্ধের মধ্যেও আসাদকে টিকিয়ে রাখাই এসব মিলিশিয়া গ্রুপের মূল লক্ষ্য। কিন্তু ইরান ও রাশিয়া উভয়ই মিত্র দেশ হওয়ায় এবং আসাদের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থাকায় পুতিন আসলে তেহরানের কতটা প্রভাব খাটাতে পারবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নিশ্চিত নন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ইসরাইলী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আসাদ সরকারকে স্থিতিশীল করতে সক্রিয় আগ্রহ দেখাচ্ছে তারা (রাশিয়া), আর আমরা চাই ইরানীদের বের করে দিতে। আমরা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব না,’ পুতিনকে নেতানিয়াহু এমনটি বলেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু নেতানিয়াহু পুতিনকে এমনটি বলেছেন বলে স্বীকার করেননি নেতানিয়াহুর মুখপাত্র ডেভিড কিস। সিরিয়ার বিষয়ে ইসরাইলী নীতি সংক্ষেপে তুলে ধরার অনুরোধ করা হলে কিস বলেন, ‘ওই গৃহযুদ্ধে আমরা জড়াব না। তবে আমাদের বিরুদ্ধে যারাই তৎপরতা চালাবে আমরা তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেব।’ ওই ইসরাইলী কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরানীদের গোলান মালভূমি থেকে দূরে রাখতে রাশিয়া কাজ করে যাচ্ছে এবং ইরানীদের গোলান থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে, ইসরাইলের দাবি এর চেয়ে বেশি কিছু, তারা চায় ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীসহ সব ইরানী বাহিনী পুরোপুরি সিরিয়া ছেড়ে চলে যাক। রাশিয়ার কর্মকর্তারা পুতিন- নেতানিয়াহু বৈঠক নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য করেননি। তবে ইরান বলেছে, তাদের কিছু করার জন্য কেউ বাধ্য করতে পারে না। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সিরিয়ায় যতদিন সন্ত্রাস থাকবে ইরান ততদিন সেখানে থাকবে। দামেস্কের পরামর্শ মতোই তেহরান কেবল সিরিয়া ত্যাগ করবে। ২০১৫ সালে রাশিয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জড়ানোর পর যুদ্ধের মোড় আসাদের পক্ষে ঘুরে যায়। কিন্তু রাশিয়া আসাদের পক্ষ হয়ে লড়াই করা ইরানী বাহিনীগুলো ও ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ মিলিশিয়াদের অবস্থান ও অস্ত্রের চালানের ওপর ইসরাইলী হামলাগুলোর বিষয়ে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে আসছে। রাশিয়া ও ইরানের সক্রিয় সমর্থনে প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করে সেসব স্থানে অবস্থান দৃঢ় করে তুলেছেন। সম্প্রতি আসাদের বাহিনীগুলো ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমির নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থানরত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এতে উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে ইসরাইলী বাহিনী। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমির অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছিল ইসরাইল। পরে গোলান মালভূমিকে নিজেদের সীমানাভুক্ত করে নিয়েছে, যদিও ইসরাইলের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। আসাদ তার ইরানী ও হিজবুল্লাহ মিত্র বাহিনীকে গোলানে ইসরাইলী লাইন বরাবর মোতায়েন করতে পারে কিংবা সিরীয় বাহিনী ১৯৭৪ সালে ঘোষিতগোলানের অসামরিকীকরণ অগ্রাহ্য করতে পারে, এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ইসরাইল। পুতিন-নেতানিয়াহু বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরাইল তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী একটি সিরীয় ড্রোনকে গুলি করে নামানোর কথা জানায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি ছিটমহলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য সিরিয়া ও রাশিয়া যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
×