ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বহ্নিশিখার আয়োজনে রবীন্দ্র নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৩ জুলাই ২০১৮

বহ্নিশিখার আয়োজনে রবীন্দ্র নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর মননের দিশারী দুই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। এক আয়োজনে স্মরণ করা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই মহান স্রষ্টাকে। নিবেদিত হলো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও জাতীয় কবি নজরুলের জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। গত মে মাসে ছিল কবিদ্বয়ের জন্মতিথি। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখা আয়োজন করেন ‘রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তী’। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও বিশিষ্টজনের কথনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বহ্নিশিখার সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আনিসুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্র ও নজরুলের রচনা প্রাচুর্যতা তুলনীয় নয়। বরং তাদের রচনার বৈচিত্র্য তুলনা করা যায়। তারা নানান বিষয়ে লিখেছেন। সবার উপরে তারা মানুষকে প্রাধান্য দিয়েছেন, মানুষের জয়গানকে গেয়েছেন। সমগ্র মানুষ জাতিকে এক করে দেখেছেন। পরিবেশনা পর্বের শুরুতেই ছিল সম্মেলক সঙ্গীত। বহ্নিশিখার শিল্পীরা কণ্ঠে তুলে নেন নজরুলের সুর। গেয়ে শোনান ‘গগনে সঘন চমিকেছে দামিনী’। পরের গানে শিল্পীরা আশ্রয় করেন রবীন্দ্রনাথের বাণী। পরিবেশন করেন ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো’। সুরের রেশ থামলে নাচ নিয়ে মঞ্চে আসে বহ্নিশিখার নৃত্যশিল্পীরা। একক ও দলীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি ছিল যুগল কণ্ঠের পরিবেশনা। আবিদা রহমান সেতু ও অমিতেষ দাশ অমি গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথের ‘ভালবেসে সখি নিভৃতে যতনে’ গানটি। রবীন্দ্রনাথের ‘পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন মাহফুজা আক্তার মীরা এবং তাসরুম জাহান জুঁই নজরুলের ‘সাম্যবাদী কবিতাটি পাঠ করেন। সব শেষে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান ও কবিতা নিয়ে একটি কোরিওগ্রাফি পরিবেশন করেন বহ্নিশিখার সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীরা। আয়োজনটির পরিকল্পনায় ছিলেন আবিদা রহমান সেতু। মঞ্চে এলো প্রাচ্যনাট স্কুলের ‘রাজরক্ত’ ॥ ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক ‘রাজরক্ত’। নাটকটি মঞ্চে এনেছে প্রাচ্যনাট স্কুল অব এ্যাক্টিং এ্যান্ড ডিজাইন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রযোজনাটির উদ্বোধনীয় মঞ্চায়ন হয়। প্রাচ্যনাট স্কুলের ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা সমাপনী প্রযোজনা হিসেবে নাটকটিতে অভিনয় করেছেন। নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায় রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রদ্যুৎ কুমার ঘোষ। নাটকটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সাইফুল ইসলাম জার্নাল। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন নাট্যজন কেরামত মওলা ও জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। নাটুকের এক যুগ পর্দাপণের আয়োজন ॥ ‘সুন্দরের চর্চায়-মানবতার গান গাই’ প্রতিপাদ্যে ১১ বছর আগে যাত্রা শুরু করে তারুণ্যনির্ভর নাট্য সংগঠন নাটুকে। অব্যাহত নাট্যচর্চার ¯্রােতধারায় বৃহস্পতিবার নাট্যদলটি পদার্পণ করেছে ১২ বছরে। এ উপলক্ষে ‘এক যুগে-নাটুকে’ শিরোনামে দুই দিনব্যাপী নাট্য আয়োজন করেছে নাট্যদলটি। রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি ভবনের ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এসব আয়োজনের মধ্যে ছিল নাট্যকর্মী ফরহাদ হোসাইন মিঠুর কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনে সাহায্যার্থে নাটক প্রদর্শনী, নাটুকে প্রণোদনা পদক এবং আলোচনা অনুষ্ঠান। আয়োজনের প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইটিআইর সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালি উর রহমান, শিল্পী সবিহ উল আলম, নাট্যজন লাকী ইনাম প্রমুখ। আলোচনা পর্ব শেষে মঞ্চস্থ হয় বিশ্বখ্যাত নাট্যকার মলিয়্যের রচিত, অরূপ রুদ্র রূপান্তরিত ও অসীম দাশ নির্দেশিত নাটক ‘বিয়ে বিড়ম্বনা’ নাটকের শততম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার আয়োজনের শেষ দিনে মার্ক ক্যামোলতি রচিত এবং আল নোমান অনূদিত ও নির্দেশিত ‘ঠাকুর ঘরে কে রে...!’র ৫০তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠি হবে। নৃত্য-গীতে বাংলাদেশ-নেপাল বন্ধুত্বের জয়গান ॥ বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকেই বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে নেপাল। সেই বন্ধুত্ব আবারও উদ্্যাপন করা হলো শিল্পকলা একাডেমিতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনার এ আয়োজন বসেছিল একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশস্থ নেপাল দূতাবাস। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন করে আয়োজনের উদ্বোধন করেন নেপালের রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. চুপ লাল ভূষাল ও ডেপুটি চিফ অব মিশন ধন বাহাদুর অলি। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই নেপালের ঐতিহ্যবাহী কুমারী নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসেন সুশীলা থাপা। নৃত্যের ছন্দে তিনি তুলে আনেন ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য। এর পর নেপালীদের শিল্পীদের আরও নৃত্য পরিবেশন করেন সুমন সাগর জং। এই দুই শিল্পী একে পরিবেশন করেন কউরা নৃত্য, টপ্পা নৃত্য, ভোজপুরি নৃত্য ও জাউর নৃত্য। কউরা নৃত্যের ছন্দে শিল্পীরা তুলে আনেন নেপালের মাগার, গুরাং ও দূরা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন আচারানুষ্ঠান। টপ্পা নৃত্যে নেপালের মাগার, ছেত্রী ও ঠাকুরি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। ভোজপুরি নৃত্যে ভোজপুরিদের উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা তুলে ধরেন শিল্পীরা। জাউর নৃত্যে নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নৃত্যধারার একটি। এটিতে শিল্পীরা তুলে আনেন নেপালের সংস্কৃতির। মাদল, বাঁশি ও মুজুরার পাহাড়ী সুরে এ নৃত্য মন জয় করে নেয় মিলনায়তন ভর্তি দর্শকদের। বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে অংশ নেন তনুশ্রী মাঞ্জি গোর্কা ও আমিনুল আশরাফ। তনুশ্রীর পরিবেশনার শুরুতেই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রেম পর্যায়ের গান ‘তুমি রবে নীরবে’র সঙ্গে নৃত্য। এর পর মণিপুরী নৃত্যে ছন্দে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমাখ্যান তুলে ধরেন দুই শিল্পী। সব শেষে ছিল লোকজ নৃত্য। তারা ‘ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা’ ও ‘বকুল ফুল’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন।
×