ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত উন্নয়ন নীতিমালা করার তাগিদ

নীতিমালা ছাড়াই নগরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, নাগরিক দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৩ জুলাই ২০১৮

নীতিমালা ছাড়াই নগরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, নাগরিক দুর্ভোগ চরমে

মশিউর রহমান খান ॥ কোন প্রকার উন্নয়ন নীতিমালা ছাড়াই চলছে সারা দেশের নগরের ইচ্ছামতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও বৃহত নির্মাণকাজ। পরিকল্পনামাফিক নগর উন্নয়নের জন্য গত ১২ বছর আগে নগর উন্নয়নের খসড়া নীতিমালা তৈরি হলেও সরকার আজও তা অনুমোদন পর্যন্ত দেয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) বাস্তবায়নে পরিকল্পনাকে অন্যতম হাতিয়ার বলা হলেও দেশের ৩২৭ পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকা-ে পরিকল্পনাকে স্থানীয় সরকার আইনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। ফলে অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। এতে নগর এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ করায় রাস্তায় চলাচলে রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে নগরে বসবাসকারী নাগরিকদের ওপর। সঠিক ও পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমেই কেবল সুপরিকল্পিত নগর গড়া সম্ভব। তাই নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা ছাড়া কোনক্রমেই একটি দেশের সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনে নগর পরিকল্পনাবিদ থাকলেও উন্নয়ন কর্মকা-ে তাদের মতামত নেয়া বাধ্যতামূলক না থাকায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা পৌরসভার মেয়রদের ইচ্ছামতোই দেশের প্রতিটি শহর বা নগরের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকা- হচ্ছে। যা অনেকটা আশঙ্কার। ক্ষুদ্র বা বৃহত স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, বাড়ি বা আবাসিক এলাকায় বহুতল ভবন কিংবা রাস্তাঘাট নির্মাণ করা যাবে কি না অথবা প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণে কোন নির্দিষ্ট মাপকাঠি তথা নীতিমালা না থাকায় যত্রতত্র গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র ও বৃহত স্থাপনা। কোন প্রকার মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই দেশের প্রায় সব পৌরসভায়ই দিব্যি নগর উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে। সরকার এমনকি মাত্র একদিনের জাতীয় কর্মশালা করেই কোন প্রকার মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই দেশের বিভিন্ন পৌরসভার জন্য সরকার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের (সিআইপি) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে, যা ভবিষ্যতে সুন্দর পরিকল্পিত নগর সৃষ্টিতে ভয়ানক সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে অভিযোগ নগর পরিকল্পনাবিদদের। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ লোকই বা পাঁচ কোটি নাগরিক নগরে বাস করেন। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি নাগরিক দেশের বৃহত ১৭ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে বাস করেন। কিন্তু এসব নাগরিকের বসবাসের স্থান নিয়ে কারো যেন কোন মাথাব্যথা নেই। ইচ্ছামতো হচ্ছে নগরের সকল উন্নয়ন কর্মকা-। সরেজমিনে দেখা গেছে, সারাদেশের কোন পৌরসভায়ই পরিকল্পনামাফিক নগর উন্নয়ন করা হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত কয়েকটি ছাড়া কোন পৌরসভায়ই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগর উন্নয়ন হচ্ছে না। আবার অনেক পৌরসভায় অতি দুর্বল মাস্টারপ্ল্যান থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এমনকি খোদ রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনেই (ডিএনসিসি) কোন নগর পরিকল্পনাবিদ নেই। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়র বা স্থানীয়দের ইচ্ছামতো নগর উন্নয়ন কর্মকা- সম্পাদন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার অতি দ্রুত রাজনৈতিক বা প্রয়োজনের কারণে উন্নত ক্যাটাগরি অর্থাৎ ক শ্রেণিতে পৌরসভার ক্যাটাগরি নির্ধারণ করলেও শুধু সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকায় ও পরিকল্পনাবিদদের কাজে না লাগানোসহ তাদের কাজের ক্ষেত্র কমানোর কারণে সার্বিকভাবে তেমন উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। শুধু নীতিমালা না থাকায় অনেক সময় ড্রেন রাস্তা, স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কাজে পরিকল্পনাবিদদের যুক্ত না করে অন্য পেশার লোকদের যুক্ত করে এসব কাজ সম্পাদন করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে নগরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। এখন পর্যন্ত কোন নাগরিকের বা নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য কোন পৌরসভায়ই ভূমি ব্যবহারের জন্য আনুষ্ঠানিক কোন ছাড়পত্র প্রদান করতে দেখা যায়নি। নগর উন্নয়নে পরিকল্পনাবিদ মূল ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও পৌরসভা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনাবিদদের এড়িয়ে চলতে দেখা যায়, যা অপরিকল্পিত নগরায়নের প্রধান কারণ। রাজধানীর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ২০০৬ সালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান করা হলেও এর বাস্তবায়ন করা তেমন হয় না। উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা নগর পরিকল্পনাবিদদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করায় অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, টাউন প্ল্যানে নগর পরিকল্পনাবিদদের কোন ভূমিকাই নেই। সাভারের ধামরাই পৌরসভায় মাস্টারপ্ল্যান এখনও গেজেট না হওয়ায় নিজেদের সুবিধার্থে খসড়া প্ল্যানেই নগরের উন্নয়ন কর্মকা- পবিচালনা হচ্ছে। সুন্দর নগর বিনির্মাণে দেশের সকল নগরের জন্য উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য নগর উন্নয়ন নীতিমালা অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ সঠিক ও পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমেই কেবল সুপরিকল্পিত নগর গড়া সম্ভব। তাই নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা ছাড়া কোনক্রমেই একটি দেশের সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানে সময়ের চাহিদার কারণে এক যুগ আগের নগর উন্নয়ন নীতিমালা দ্রুত অনুমোদন দিতে হবে। যা পরিকল্পনামাফিক সুন্দর নগরের দেশ গড়তে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার নগরের উন্নয়ন কর্মকা-ে নীতিমালা তৈরিতে নিজস্ব উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও মেয়রদের নিয়ে কর্মশালা বা মতবিনিময় করতে পারে। সুন্দর নগর গড়তে নীতিমালা তৈরিসহ সকল সমস্যা উত্তরণে মেয়রদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এগিয়ে আসতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমেই কেবল নীতিমালায় দেয়া সঠিক নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
×