ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে দুই প্রার্থী নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ জুলাই ২০১৮

সিলেটে দুই প্রার্থী নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সিটি নির্বাচনে চলছে প্রার্থীদের প্রচার। বিচার বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে। ভোটারদের দৃষ্টি উন্নয়নের দিকে। বড় দুদলের প্রার্থীর অবস্থান ভোটারের একেবারে কাছাকাছি। দুই প্রার্থীই নগর শাসন করেছেন। দুজনের কর্মকা- ভোটারদের কাছে খোলাসা। এরপরও রয়েছে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন। বিচার বিশ্লেষণে দুই প্রার্থীকে নিয়ে চলছে আলোচনা। বৃহস্পতিবার নগরীতে গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন কামরান বলেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে জনমুখী প্রতিষ্ঠান করা হবে। বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন আমার বাকি জীবন সিলেটের উন্নয়নে সঁপে দিয়েছি। পরিবর্তনের সুর তুলে ২০১৩ সালের নির্বাচনে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে বিজয়ী হওয়া আরিফুল হক চৌধুরীর অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল- সিলেটকে সাইবার সিটিতে পরিণত করা। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও জনবহুল স্থান ওয়াইফাইয়ের আওতায় নিয়ে আসা। জনগণকে দেয়া এই আশ্বাস বাস্তবায়ন করতে পারেননি আরিফ। আরিফের আগে দুই মেয়াদে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। দুবারই নির্বাচনী ইশতাহারেই তিনি সিলেট নগরীকে জলাবদ্ধমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। টানা প্রায় এগারো বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি কামরান। গত নির্বাচনে ১৪ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আরিফুল হক চৌধুরী। একই নির্বাচনে কামরান ২০ দফা ইশতেহার দেন। ওই নির্বাচনে কামরানকে হারিয়ে বিজয়ী হন আরিফুল হক চৌধুরী। তবে মেয়াদ কালে প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করতে পারেননি আরিফুল হক। সুপেয় পানি সঙ্কট, যানজট, গণপরিবহন সঙ্কটÑ এগুলো এখনও নগরীর প্রধান সমস্যা। জলাবদ্ধতা নিরসনে কিছু উদ্যোাগ নিলেও এখনও বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নগর বিশ^বিদ্যালয়, ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজের মতো বৃহৎ আশ^াসের কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। ইশতেহারের পূর্ণ বাস্তবায়ন না করতে পারা প্রসঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর একে একে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পরই নানা ষড়যন্ত্র আর মামলার মাধ্যমে আমার উন্নয়ন কর্মকা- ব্যাহত হয়। প্রায় আড়াই বছর আমাকে কারাগারে আটকে রেখে নগরবাসীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তারপরও যেটুকু সময় পেয়েছি সেই সময়ে নগরবাসীর জন্য কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে চেষ্টা করছি। নগরবাসী আবার আমাকে মূল্যায়ন করলে বাকিগুলোও বাস্তবায়ন করব। এ ব্যাপারে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সিংহভাগ প্রতিশ্রুতিই আমি বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলাম। যে প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা সম্ভব হয়নি তা পূরণ করতে গত নির্বাচনের ইশতেহারে সংযুক্ত করেছিলাম। কিন্তু পরাজিত হওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। বদর উদ্দিন কামরান ॥ বৃৃহস্পতিবার নগরীতে গণসংযোগ কালে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে জনমুখী প্রতিষ্ঠান করা হবে। জনগণকে সেবা দেয়াই আমার মূল লক্ষ্য। নির্বাচিত হলে জনগণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে কাজ করব। তিনি আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তিনি আম্বরখানা থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত বিভিন্ন পথচারী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। শেখ হেলাল ॥ সিলেট সিটি নির্বাচনে বদর উদ্দিন কামরানের পক্ষে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য, বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ হেলাল উদ্দিন সিলেট সফর করেছেন। তিনি সিলেট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নগরীর মির্জাজাঙ্গালস্থ একটি অভিজাত হোটেলের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ হেলাল উদ্দিন নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন- শেখ হাসিনা নির্দেশে আজ আমি এখানে এসেছি। সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাকে অর্থাৎ নৌকাকে বিজয়ী করার দায়িত্ব আপনাদের। তিনি বলেন- ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে হবে। মিসবাহ সিরাজ ॥ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের যত উন্নয়ন ও সফলতা আছে তার সঠিক বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ একমাত্র এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। এ সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ সংগঠনের জনসমর্থন বাড়াতে হবে। তিনি আগামী সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংঠনের উদ্যোগে দরগাগেটস্থ হোটেল পায়রায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থনে মতবিনিময় সভায় কথাগুলো বলেন। ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জুনেদ আহমদ শওকতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবুল খাবিরের পরিচালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে কামরানকে বিজয়ী করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার রাতে নবাব রোডে ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে নির্বাচনী সভায় কথাগুলো বলেন। ছাত্রলীগ ॥ বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রচার মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ নির্বাহী সংসদ। বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি দল প্রচারে অংশ নেয়। সকালে নগরীর দরগাহ মহল্লা এলাকায় কামরান ও অন্য নেতাকর্মীর সঙ্গে নৌকার লিফলেট বিতরণ করেন জাকির। আরিফুল হক চৌধুরী ॥ ২০ দলীয় ঐক্যজোটের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘সিলেটের পবিত্র ভূমিতে যারা অতীতে অন্যায় অবিচার করেছেন তারা পেশাজীবন, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ধ্বংস হয়েছেন। সুতরাং সাবধান, এই সিলেটের মানুষ যেমন অন্যায়কে সহ্য করেন না, তেমনি এই পবিত্র মাটির সঙ্গে প্রতারণা-প্রবঞ্চনা করে কেউ শান্তিতে থাকতে পারেননি।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট মহানগরী এলাকার লতিফ সেন্টার, সিটি সেন্টার, ওভারসিজ সেন্টার, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, জালালাবাদ মার্কেট, ইদ্রিস মার্কেট, সিলেট প্লাজাসহ সংলগ্ন মার্কেট ও বিপণি বিতানে গণসংযোগকালে আরিফুল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন। বদরুজ্জামান সেলিম ॥ সিলেট নাগরিক কমিটি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বলেছেন, দীর্ঘ ৩৯ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সবটুকু নগরবাসীর কল্যাণে উজাড় করে দিতেই আমি মেয়র প্রার্থী হয়েছি। সিলেটের সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ ভালবাসা ও উদ্দীপনা পেয়ে যাচ্ছি তা আমার বিজয়ের পথকে শাণিত করবে। পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে দুর্নীতি মুক্ত তিলোত্তমা সিলেট নগরী উপহার দিতে ৩০ জুলাই বাস মার্কায় ভোট চাই। বৃহস্পতিবার আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে নগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ২৭টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কোর্ট পয়েন্ট থেকে গণসংযোগ কর্মসূচী শুরু করে নগরীর জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা আম্বরখানা হয়ে শাহী ঈদগাহস্থ প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়। এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাতপাখা মার্কা প্রার্থী প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন খান বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে নগরীর লালদিঘীরপাড়, হকার্স মার্কেট, বন্দরবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও হাতপাখা মার্কায় ভোট চান। এ সময় তার সঙ্গে কর্মী ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
×