ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীজুড়ে নৌকার আওয়াজ, ধানের শীষ পিছিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ জুলাই ২০১৮

রাজশাহীজুড়ে নৌকার আওয়াজ, ধানের শীষ পিছিয়ে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। পোস্টার, ব্যানার আর মাইকিংয়ে নগরজুড়ে নৌকার আওয়াজই কানে আসছে। এ নিয়ে ভোটের মাঠে লিটন ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও আগাম পরিকল্পনা না থাকায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। প্রচার দৌড়ে গতি হারিয়ে ফেলা বিএনপির অভিযোগ শুধু লিটনের কর্মীদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ করেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার কাশিয়াডাঙ্গা থানা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসির প্রত্যাহার দাবি করেছেন। বুলবুল বলেন, নির্বাচনী প্রচারের দুইদিনে লিটনের পক্ষে ‘অবৈধভাবে’ চার কোটি টাকার পোস্টার, ব্যানার ছাপানো হয়েছে। কে দিল এত টাকা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বিএনপির এক কর্মীকে মারধর করে যুবলীগের এক কর্মী পুলিশেও দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রশাসনও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন বুলবুল। এ সময় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সরকারের দালাল। নির্বাচন পরিচালনা করতে শতভাগ ব্যর্থ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোথাও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এদিকে লিটনের পক্ষেও বুলবুলের বিরুদ্ধে নির্বাচন অফিসে পাল্টা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভিযোগ বিএনপি সরকারের উন্নয়ন নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকালে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে প্রচারের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার নগরজুড়ে ছেয়ে গেছে সব প্রার্থীর পোস্টারে। এর মধ্যে নৌকার পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার চোখে পড়ছে বেশি। তবে এর তুলনায় ধানের শীষের পোস্টার অনেক কম। এ নিয়েও অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। তাদের অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুরো শহর নৌকার পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছে। নৌকার পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার বেশি টাঙ্গানোর কারণে ধানের শীষের পোস্টার সাঁটানোর জায়গা পাচ্ছেন না তারা। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, উৎসাহ-উদ্দীপনা না থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার লাগানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। এগুলো লাগানোর প্রচুর জায়গা রয়েছে। পরিকল্পনার অভাবে তারা প্রচারে পিছিয়ে পড়েছে। অভিমানে জামায়াত, বেকায়দায় বুলবুল ॥ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এখনও ‘অভিমান’ করেছে শরিক দল জামায়াত। মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও কাউন্সিলর পদে জামায়াতের নেতাদের বিএনপির ‘ছাড়’ না দেয়াটাই এই অভিমানের কারণ। এই অভিমানের জেরে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের আশপাশে জামায়াতের কোন নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। তবে বুলবুল বলছেন, পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে তারা প্রকাশ্যে আসছেন না। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত তাদের মহানগর কমিটির সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেনকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছিল অগেই। তার নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে দলের নেতারা বৈঠকে বসলে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। গ্রেফতার হন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান ও মহানগরের সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেনসহ ১২ নেতা। জামায়াতের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে তাদের মেয়র পদের প্রার্থিতা থেকে সরে আসার কারণ বুলবুলকে সমর্থন দেয়া। এর বিনিময়ে তারা বিএনপির কাছে জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের আশা ছিল, যেসব ওয়ার্ডে জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে, সেসব ওয়ার্ড থেকে মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। জামায়াত নেতারা নগরীর সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে মোট ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টিতে কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে। তাদের দাবি ছিল, তাদের সবাইকে সমর্থন দিতে হবে বিএনপিকে। কিন্তু তা হয়নি। এ নিয়ে অভিমান করেছেন জামায়াতের তৃণমূলের কর্মীরা। তারা কোনভাবেই বিএনপি প্রার্থী বুলবুলের জন্য মাঠে নামতে চাইছেন না। মহানগর জামায়াতের আমির আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, ‘শহরের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টিতে আমাদের ১৪ নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন দুই জন। এসব ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীরা আমাদের ছাড় দেয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড জামায়াতের নেতাকর্মীদের অভিমান হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ কারণেই এখন বুলবুলের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে জামায়াত। বুলবুলও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন তবে এখনও তার পাশে ভেড়েনি জামায়াত। তবে জামায়াত নেতা আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, ‘বুলবুলকে সমর্থনের ঘোষণা এসেছে ঢাকা থেকে। আমরা এখনও স্থানীয়ভাবে কোন ঘোষণা দেইনি। সে জন্য আমরা মাঠেও নামিনি। ফলে জামায়াত নেতাদের মান ভাঙ্গাতে না পারার কারণেও বেকায়দায় পড়েছেন বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভোটের মাঠে লিটন ॥ এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে নগরীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রচার শুরু করেন। নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে লিটনের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চান। রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি এ প্রচারে নগরীর বিশিষ্ট জনও অংশ নেন।
×