ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে সমাপনী ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ॥ জনগণ আবারও নৌকায় ভোট দেবে বলে আশাবাদ ॥ কোটা আন্দোলনের নামে উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

অশুভ শক্তি যেন দেশের মানুষের সুখ কেড়ে নিতে না পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ জুলাই ২০১৮

অশুভ শক্তি যেন দেশের মানুষের সুখ কেড়ে নিতে না পারে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে এবং সব দিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। দেশের মানুষ একটু সুখের মুখ দেখেছে। কোন অশুভ শক্তি যেন দেশের জনগণের এই সুখটা কেড়ে না নিতে পারে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাব। দেশে যেন আবারও মারামারি, খিস্তিখেউর, আগুন দিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো পরিবেশ ফিরে না আসে সেজন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। দেশবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসী যদি মনে করেন তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে ভুল করেননি, তারা দেশকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করছেন, তাহলে দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও তাদের সেবার করার সুযোগ দেবেন। আমাদের বিরোধী দল এবং যারা আছে আমি আশা করি সকলে নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশকে আমরা বিশ্বের দরবারে যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছি সেটা আমরা ধরে রেখে এগিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলব। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। কোটা নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীরা যে কী চায় বারবার জিজ্ঞাসা করা হলেও সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। এ বিষয়ে সরকার থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাহলে এদের (আন্দোলনকারী) অসুবিধাটা কোথায় আমার সেটাই প্রশ্ন? তবে আন্দোলনের নামে যারা ভিসির বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। আন্দোলনের নামে উচ্ছৃঙ্খলাটা তো বরদাশ্ত করা যায় না। যতই আন্দোলন করুক, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। এসব কাজ কোন শিক্ষার্থী করতে পারে না। কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তারা যে কী চায় বারবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেটা কিন্তু সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বুধবারই বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায় রয়েছে। যেখানে হাইকোর্টের রায় আছে যে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ওইভাবে সংরক্ষণ থাকবে। আমরা হাইকোর্টের রায় কিভাবে লঙ্ঘন করব। কিভাবে হাইকোর্টের রায় বাদ দেব? সেটা তো আমরা করতে পারছি না। তবে তো হাইকোর্টের রায় অবমাননা হবে। তবে কোটা যেটাই থাকুক, কোটা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে যে জায়গায় খালি থাকবে সেখানে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে এবং সেটাই করা হচ্ছে। কোটা আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে ভাল কথা, কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়া, গাড়িতে আগুন দেয়া, বাড়িতে আগুন দেয়া, ভাংচুর এবং লুটপাট করা, এমনকি ভিসির পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এটা কি কোন শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কি কোন শিক্ষার্থী করতে পারে? তিনি বলেন, আজকে তারা কথায় কথায় আন্দোলনের নামে ক্লাসে তালা দেয়, ক্লাস করবে না, পরীক্ষা দেবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কে হবে? সেশন জট আগে অনেক ছিল, অন্তত আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেশন জট দূর করেছি। সেশন জট ছিল না। কিন্তু এখন তাদের (আন্দোলনকারী) কারণেই আজকে আবার সেশনজট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আমরা করব। আমি তো বললাম সব বাদ দিতে। কিন্তু হাইকোর্টের রায় রয়েছে। হাইকোর্টের রায় আমি অবমাননা করলে তখন তো আমি আদালত অবমাননায় পড়ে যাব। এটা কেউ করতে পারবে না। আমরা মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে দিয়ে একটা কমিটি করে দিয়েছি। তাহলে এদের অসুবিধাটা কোথায় আমার সেটাই প্রশ্ন। ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ নেতা বলেন, মাত্র ১৫ টাকা হলের সিট ভাড়া, আর ৩০ টাকার খাবার পৃথিবীর কোথায় আছে? আজকে যারা হলে থাকে, তাদের জন্য নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টার সিট ভাড়া দিয়ে আর ৩০ টাকার খাবার খেয়ে যারা লাফালাফি করে, তাহলে সিট ভাড়া আর খাবার যে বাজার দর আছে সেইভাবেই দিতে হবে তাদের। সেটা না করে তারা হলের গেট ভেঙ্গে ফেলবে, মধ্য রাতে ছাত্রীরা বের হয়ে যাবে- এটা কি আন্দোলন? উচ্ছৃঙ্খলাটা তো বরদাশ্ত করা যায় না। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভিসির বাড়িতে সিসি ক্যামেরা ছিল, হামলার সময় সেটা ভেঙ্গে ফেলেছে। চিপটা পর্যন্ত নিয়ে গেছে যেন হামলাকারীদের দেখা না যায়। কিন্তু তারা জানতো না আশপাশে আরও অনেক ক্যামেরা ছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা ছিল, সেই ক্যামেরার ফুটেজ দেখে একটা একটা করে হামলাকারীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। এখানে যারা ভাংচুর করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে- তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তদন্ত করা হচ্ছে। অনেকে স্বীকারও করেছে। যেখানেই যারা থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে, তারা যতই আন্দোলন করুক। তিনি বলেন, শিক্ষার নীতিমালা তো সরকার করবে। সেটা আমাদের দেখার বিষয়, শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করবে। অনেক জায়গায় চাকরি খালি আছে, যারা মেধা তালিকায় থাকছে, কেউই বাদ যাচ্ছে না। যারাই মেধাবী তারা কোন কোনভাবে চাকরি পাচ্ছে।
×