ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষ

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১২ জুলাই ২০১৮

কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার করালগ্রাসে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কয়েক শ’ পরিবার। গত এক সপ্তাহেই ভাঙ্গনে বাড়িভিটা ছাড়তে হয়েছে প্রায় ২শ’ পরিবারকে। বারবার নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব পরিবারগুলো এখন আশ্রয় হারিয়ে অন্যের ভিটায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। স্থানীয়ভাবে কাজকর্ম না থাকায় দু’বেলা খাবার জোটাতে পারছে না তারা। অসহায় এই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে ওই এলাকার সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার তারামণি রানী। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, লালমনিরহাটের তিস্তা সেতু থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার ব্যাপী উন্মুক্ত জায়গায় প্রতিবছর তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে নিঃস্ব হচ্ছে শতশত পরিবার। জেলায় ৭টি পয়েন্ট চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৪২ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তা এখন ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে আছে। ফলে ভাঙ্গনে দিশেহারা পরিবারগুলো পাচ্ছে না মাথা গোঁজার ঠাঁই। গত কয়েক দিনে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও গুনাইগাছ ইউনিয়নে প্রায় ১০টি পাড়ায় চলছে ভয়াবহ ভাঙ্গন। গত এক সপ্তাহেই থেতরাই ইউনিয়নের হোকোডাঙ্গা ওয়ার্ডের ফকিরপাড়া, ডাক্তারপাড়া, মেম্বারপাড়া, ভারতপাড়া, পাটোয়ারীপাড়া, মাঝিপাড়াসহ ৭টি গ্রামে প্রায় দু’শ বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে। নদ-নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভাঙ্গনের তীব্রতা। বিলীন হয়ে গেছে গাছপালা, রাস্তাসহ অনেক ফসলি জমি। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে বিপাকে পড়েছে ভাঙ্গনকবলিত মানুষ। মাথা গোঁজার জায়গা না পেয়ে বুক ফাটা কান্নায় ভারি হয়ে আসছে আকাশ-বাতাস। হোকোডাঙ্গা এলাকার মজিবর, জাহিদুল, আঞ্জুয়ারা ও রাখালচন্দ্র জানান, এক একটি পরিবারের প্রায় ৫ থেকে ৭ বার করে বাড়ি ভেঙ্গেছে। একবার মেইন ল্যান্ডে আরেকবার বালুচরে বাঁধতে হয়েছে বাসা। রাক্ষুসী তিস্তা মাইলের পর মাইল জমিন গ্রাস করেছে। ভূমিহীন পরিবারে পরিণত করেছে শত শত মানুষকে। কিন্তু সরকারীভাবে কোন ধরনের উদ্যোগ না নেয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকায় গৃহহীনদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। এই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান জানান, তিস্তার ভাঙ্গনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। আশ্রয়ের শেষ জায়গাটিও ভেঙ্গে গিয়ে এখন দিশেহারা ভিটেমাটি হারানো পরিবারগুলো। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভাঙ্গনরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় বাড়ছে ভুক্তভোগীর সংখ্যা। থেতরাই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার তারামণি রানী জানান, মাস খানেক আগে ৪৮টি বাড়ি নদীগর্ভে ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় দু’শ পরিবার বিলীনের পথে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি ভাঙ্গনকবলিতদের যেন সুব্যবস্থা করে এবং তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উলিপুর-চিলমারীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, তিস্তায় প্রায় ৭টি পয়েন্টে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এই নদীভাঙ্গন থেকে স্থানীয় জনগণকে রক্ষা করতে ২৪২ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা বোর্ডে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নদীর বাম তীরের ভাঙ্গন থেকে জনগণ রক্ষা পাবে। এতে এলাকার জনগণ অন্যান্য সুবিধাও পাবে।
×