ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়ায় ইউএনও ইউপি চেয়ারম্যান দ্বন্দ্ব

ঝুলে আছে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১২ জুলাই ২০১৮

ঝুলে আছে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, চট্টগ্রাম, ১১ জুলাই ॥ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরোধের জের ধরে পটিয়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ ঝুলে রয়েছে। তার মধ্যে এডিবি ও রাজস্বের কাজও রয়েছে। উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা প্রকল্পের নিয়মনীতি না মেনে কাজ করা ও এর টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে ইউএনও মোঃ রাসেলুল কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। ইউএনওর বদলি দাবি করে ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। তবে ইউএনওর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। শুধু জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনওর দ্বন্দ্বের কারণে উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা হচ্ছে না। গত একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর পক্ষে ফুল দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ইউএনও মোঃ রাসেলুল কাদেরের উত্তপ্ত বাগবিত-া হয়। এর পর থেকে চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ইউএনওর দূরত্ব বাড়ে। ২০১৮ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউএনও রাসেলুল কাদের পটিয়ায় যোগদান করেন। তিনি যোগদানের আগে উপজেলা পরিষদের ফান্ডে ৫ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। ৫ কোটি টাকা ঘাটতি থাকায় ২০১৭-১৮ বছরের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের হিস্যা অনুযায়ী প্রাপ্ত বরাদ্দকৃত অর্থের ১% এর প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার চেক ছাড় দেয়া হয়নি। তাছাড়া আরও ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প জমা রয়েছে। প্রকল্পের অর্থ ছাড় না দেয়া ছাড়াও ইউএনওর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানদের নানা বিষয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনওর দূরত্বের কারণে পটিয়া উপজেলায় এডিবি ও রাজস্বের প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ ঝুলে রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নে ১% এর ১৩ লাখ টাকা, জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে ৫ লাখ ৭৫ হাজার, কোলাগাঁও ইউনিয়নে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার, আশিয়া ইউনিয়নে ৭ লাখ ১৮ হাজার, শোভনদন্ডী ইউনিয়নে ৮ লাখ ৬২ হাজার, হাইদগাঁও ইউনিয়নে ১২ লাখ ৪৫ হাজার, ধলঘাট ইউনিয়নে ৯ লাখ ৩২ হাজার, দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নে ৫ লাখ ২০ হাজার, খরনা ইউনিয়নে ৮ লাখ ১৯ হাজার, কেলিশহর ইউনিয়নে ৮ লাখ ৬০ হাজার, ছনহরা ইউনিয়নে ৭ লাখ ৩২ হাজার, হাবিলাদ্বীপ ইউনিয়নে ১১ লাখ ৫ হাজার, বড়লিয়া ইউনিয়নে ১০ লাখ ১৬ হাজার, জিরি ইউনিয়নে ২০ লাখ ৫০ হাজার, ভাটিখাইন ইউনিয়নে ৪ লাখ ৭ হাজার টাকার প্রকল্পের কাজের তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প তদারকি না করে অগ্রিম অর্থ ছাড়ও দেয়া হয়েছে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের হিস্যার প্রাপ্ত বরাদ্দের টাকা প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে একবার ছাড় দেয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যানদের দাবি ইউএনও রাসেলুল কাদের যোগদানের আগে ১% এর টাকা বছরে ২/৩ বার ছাড় দিয়েছিল। তিনি (ইউএনও) যোগদানের পর প্রকল্প কাজের অর্থ ছাড় না দেয়ার কারণে উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে প্রায় ১০ কোটি টাকার কাজ ঝুলে রয়েছে। ইউএনও রাসেলুল কাদের যোগদানের আগে থেকেই উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। যার প্রেক্ষিতে তৎকালীন ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুনকে বদলি হয়ে অন্যত্র যেতে হয়েছে। একইভাবে বদলি হতে হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেমকে। ইউপি চেয়ারম্যানদের বিভিন্ন অযৌক্তিক প্রকল্প তদারকি করতে গেলে মূলত এই দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান। কচুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ইনজামুল হক জসিম বলেন, নতুন ইউএনও যোগদানের পর উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে। কচুয়াই ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে বর্তমানে ১% প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১% অর্থ ইউএনও ছাড় না দিয়ে নিজের নামে অর্ডার করে রেখে দিয়েছেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানরা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন; যা গত ৪ জুলাই এডিসি (জেনারেল) মোঃ হাবিবুর রহমান তদন্ত করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও মোঃ রাসেলুল কাদের বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানরা ১% এর যেসব প্রকল্প উপস্থাপন করেছেন তা কাজের অগ্রগতি দেখে প্রকল্পের টাকা ছাড় দেয়া হবে। অতীতে কোন ইউএনও বছরে ২/৩ বার টাকা ছাড় দিয়েছেন তা দেখার বিষয় নয়। সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করে তিনি প্রকল্পের টাকা ছাড় দিবেন। কিছু কিছু চেয়ারম্যান দলীয় প্রভাবখাটানোর চেষ্টা করছে; যা ইতোমধ্যে উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন।
×