ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থবছর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১২ জুলাই ২০১৮

অর্থবছর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার অর্থ পাওয়ায় গেল ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে পুরো সময়ে ব্যাংকমুখী হয়নি সরকার। উল্টো ব্যাংক ঋণের একটা অংশ পরিশোধও করেছিল সরকার। তবে অর্থবছরের শেষে এসে ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে। ফলে অর্থবছর শেষে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯২৬ কোটি টাকা। আর মোট ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারের মোট ব্যাংকঋণের স্থিতি ছিল ৮৯ হাজার ৭১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুন শেষে সামান্য বেড়ে হয়েছে ৯০ হাজার ৬৪২ কোটি ছয় লাখ টাকা। সেই হিসাবে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ বেড়েছে ৯২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা এক দশমিক ৬ শতাংশ। তবে এই সময়ে সরকারের ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। পরে অর্থবছরের শেষ দিকে এই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ১৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু এই পরিমাণ ঋণেরও প্রয়োজন পড়েনি সরকারের। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেয়া ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২৩ হাজার ৬৭৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৬৬ হাজার ৯৬৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে সরকারের। সাধারণত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারী খাত নিরুৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য অর্থনীতিবিদরা বরাবরই সরকারকে ব্যাংক থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেয়ার পরামর্শ দেন। তবে বিদায়ী অর্থবছরে অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও বৈদেশিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা আসায় সরকারের ব্যাংক ঋণনির্ভরতা কমেছে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) শতভাগ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ঘাটতি অর্থায়নও কম হয়েছে। ব্যাংকের বাইরে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোসহ অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়ার কথা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসেই নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ২৫ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এদিকে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের পুরো সময়ে এক লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপির মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কোন ঋণ করতে হয়নি। ওই অর্থবছরে মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ চাহিদা কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৩১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের শুরুতে সরকার কিছু ঋণ করলেও পরে তা শোধ করায় অর্থবছর শেষে তা ঋণাত্মক ধারায় নেমে আসে। ওই অর্থবছরে সরকার আগের ঋণ থেকে ১৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে। যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রায় চার হাজার ৩২৬ কোটি টাকার ঋণ নিতে হয়েছিল সরকার।
×