ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ কর্মজীবী নারীর ঘর-গেরস্তালি

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১২ জুলাই ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ কর্মজীবী নারীর ঘর-গেরস্তালি

একজন কর্মজীবী নারীর সংসার কি করে চলে তিনি যখন তার কর্মক্ষেত্রে যান কিংবা কাজ থেকে ফিরে কি করেই তা সামলান? আজ এসব নিয়ে চিন্তা চলছে। আজ এত বছর চাকরি জীবনে এই বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে কত কথাই। প্রায়ই আমি বলি, আমার দশটি হাত। ভোর থেকে শুরু হয় আল্লাহর ইবাদত দিয়ে। সবার জন্য রান্না, সন্তানকে শিক্ষা ক্ষেত্রে পাঠানো, স্বামীর ক্ষেত্রেও দায়িত্ব পালন। যদি গৃহকর্মী থাকে তো অনেকটাই সাহায্য হয় কিন্তু যার কোন সাহায্যকারী নেই তার তো ঘড়ি দেখে সময় মেপে সব করে তবেই অফিসের দিকে ছুটে যাওয়া। তারপর যানজট পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব কাজ সামলিয়ে কাজের ফাঁকে বাসার জন্য চিন্তা। সন্তান ঠিক মতো শিক্ষা ক্ষেত্রে থেকে ফিরল কিনা? বাসায় ফিরে ঠিকমতো খেলো কিনা? কিংবা সে বিকেলে কোচিং এ গেল কিনা? সব বোঝাই মাথায় নিতে হয় নারীটির। আর পুরুষ ‘গৃহকর্তা’ কি তা গভীরভাবে ভাবেন? অনেকেই ভাবেন না। অফিস শেষে তিনিও ঘরে ফেরেন কিংবা তার কাজ থেকে ফিরে তিনি বিশ্রাম করেন তার মতো করে। টিভি দেখে, খবরের কাগজ পড়ে। আর কর্মজীবী নারী তিনিও ফেরেন পরিশ্রম করে। কিন্তু এসেই ঢুকতে হয় রান্না ঘরে। ফাঁকে ফাঁকে সন্তানের লেখাপড়ার দেখভাল। ফাঁকে ইবাদত। সকালের রান্নার আয়োজন ঠিক রেখে তবে মধ্যরাতে শুতে যাওয়া। এই যে জীবনযাত্রা এরই মাঝে রয়েছে সামাজিকতা, আছে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার কাজ। কর্মজীবী নারী ঘড়ির কাঁটা দেখে চলতে চলতে মানুষ থেকে ‘রোবট’ হতে চলেছে তা কি কেউ বুঝতে চায়? না ঘর না বাহির। তবে কি তার ‘নিজের জন্য আলাদা’ জীবন নেই? অনেকেই বলবেন ‘নিজের জন্য সময়’ সে আবার কি? আর এই না বোঝাটাই হলো ‘অবিবেচনা’। আজ দেখা যায় যিনি শুধুই ‘গৃহকর্ত্রী’ তিনি আজ তার ঘর সংসার সামলানোর জন্য বেতন-ভাতা চাচ্ছেন। তার কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে না বলে। আমি মনে করি যিনি শুধুই ‘গৃহকর্ত্রী’ তিনি অবশ্যই অনেক দায় দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু সেই ফাঁকে প্রয়োজনমাফিক বিশ্রামের সুযোগ করে নিতে পারেন। কিন্তু একজন ‘কর্মজীবী’ নারীর সে সুযোগ কোথায়? তাকে যে ঘড়ির কাঁটা ধরে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে সংসারের সবাইকে। কর্মজীবী একজন মহিলা তিনগুণ বেশি কাজ করেও তার প্রাপ্য মর্যাদার সঙ্গে সহমর্মিতাই চান। তিনি সংসার সামলানোর জন্য বেতন-ভাতার দাবি করেন না। আর এই বিষয়গুলো সংসারের ‘গৃহকর্তার’ খেয়াল রাখা উচিত। সবশেষে বুঝতে হবে সংসারের কাজ নারী কিংবা পুরুষের বলে কিছু নেই। দায়িত্ব সবার ভাগ করে নিলে এতে শুধু সংসার স্বস্তির নয়, শান্তির জায়গা বললেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ পৃথিবী যে দ্রুত বদলে যাচ্ছে তাই আমাদের পুরনো ধ্যান-ধারণা ছেড়ে নতুন দিগন্তের দিকে তাকাতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। আগারগাঁও, ঢাকা থেকে
×