ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফখরুলের অভিযোগ

১১ দিন ধরে কাউকে খালেদার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১২ জুলাই ২০১৮

১১ দিন ধরে কাউকে খালেদার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সাংবিধানিক অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১১ দিন ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। ৩০ জুনের পর থেকে পরিবারের সদস্যরাও দেখা করতে পারছেন না। বিএনপি নেতারাতো পারছেনই না, এমনকি আইনজীবী ও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও দেখা করতে পারছেন না। এ অবস্থায় আমরা আশঙ্কা করছি তাকে রাজনীতি, নির্বাচন এবং পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা। মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হোক। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলছি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার ফাঁদ পাতা হয়েছিল। আলাদা আদালত বানিয়ে তাকে দ্রুত সাজা দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই তাদের পথের কাঁটা দূর হবে। তিনি বলেন, জেলকোডের বিধানমতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আত্মীয় স্বজনদের দেখা করতে না দেয়া তার এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দের প্রতি মানবাধিকার লংঘন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশে সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়েছিল। আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হয়েছিল ৪টি মামলা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার নামে করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আর খালেদা জিয়ার মামলাগুলোতো প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং নতুন করে আরও অনেক মামলা দিয়েছে এই সরকার। বিএনপি নেতাকর্মীদের পুরনো মামলায় নতুন করে হয়রানি করা হচ্ছে। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে কেন কাউকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এটি নিয়ে তারা কোন কথা না বলে কারাবিধির অজুহাত দেখাচ্ছে। ১০ দিন পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বার বার যোগাযোগ করা হলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। অথচ কারাবিধি অনুসারে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য জেল সুপারই যথেষ্ট। কিন্তু জেল সুপারকে বললে তিনি বলেন, আইজি প্রিজনের কাছে যান। আইজি প্রিজনের কাছে গেলে তিনি বলেন, মন্ত্রীর কাছে যান। মন্ত্রীর কাছে গেলে বলেন, ১ নম্বর ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য যদি সরকারের প্রধানের কাছে অনুমতির জন্য যেতে হয়, তাহলে এটা কি আইনের শাসন? জেলকোড লঙ্ঘন করে খালেদা জিয়াকে তার পরিবার ও বন্ধু এবং রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ফখরুল বলেন, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। যদিও তিনি মূল মামলায় জামিন পেয়েছেন, কিন্তু অন্য মামলায় তার জামিন বিলম্বিত করা হচ্ছে। যাতে তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা যায়। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের শুভচিন্তার উদয় হোক। সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। না হলে জনগণের তুমুল জনরোষ থেকে রেহাই পাবেন না। খালেদার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না- গয়েশ্বর ॥ কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার: জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে না। তাই নির্বাচনের জন্য তার মুক্তি জাতির জন্য অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতা-অযোগ্যতা বুঝা যায়। ১০ বছর তো দেশ চালালেন একটাবার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখতেন জনগণ আপনাদেরকে কতটুকু চায়। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ। খালেদার মুক্তির দাবিতে হেঁটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হেঁটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন ছাত্রদল ও যুবদলের ছয় নেতাকর্মী। ৫ জুলাই ঢাকার উদ্দেশে হেঁটে রওনা দিয়ে বুধবার বেলা ২ টা ৫ মিনিটে রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে পৌঁছান তারা। এ সময় তাদের স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা ৬ জন হলেন- মোঃ শহীদুজ্জামান, সাইফুল আলম রানা, আজিম উদ্দিন, সোহেল, সাদ্দাম মজুমদার ও সোহেল রানা।
×