ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিল আর্জেন্টিনার ক্ষত ভুলে ফাইনালে মন, নব উত্তাপ উন্মাদনা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১২ জুলাই ২০১৮

ব্রাজিল আর্জেন্টিনার ক্ষত ভুলে ফাইনালে মন, নব উত্তাপ উন্মাদনা

মোরসালিন মিজান ॥ আর্জেন্টিনা বিদায় নিয়েছে সেই কবে। ব্রাজিলও নেই। এর পর আর কিসের বিশ্বকাপ? বাংলাদেশ থেকে দেখলে এভাবেই বলতে হয়। প্রিয় দুই দলের বাইরে আর কারও কথা যেন ভাবতেই পারে না বাঙালী। কিন্তু হায়, মেসি এবং নেইমার দুজনই ব্যর্থ। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছে তাদের দেশ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল। দেশ দুটির নাগরিক মাত্রই। হ্যাঁ, মন খারাপ করে আছে। কিন্তু বাংলাদেশী সমর্থকদের ক্ষত যেন আরও গভীর! অনেকদিন তারা হতাশায় ডুবেছিল। একটু কট্টর যারা, খেলাই দেখেননি। দেখলেও সেটি ছিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার মতো। চাওয়া-পাওয়া ছিল না কোন। আগের রাতের খেলা নিয়ে পরের দিন যে আলোচনা, চুলচেরা বিশ্লেষণ, চুলোয় গিয়েছিল। তবে এ পর্যায়ে এসে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেমিফাইনালের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মাঝেও। ব্যর্থতা ক্ষত ভুলে অন্য দলের খেলা উপভোগের চেষ্টা করছেন তারা। কেউ নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে খেলা দেখছেন। কেউ এই যুক্তি, ওই যুক্তি খুঁজে নিয়ে নতুন দলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। অলস আড্ডায় গল্পে ফিরে এসেছে বিশ্বকাপ। সেমিফাইনাল থেকে দেখা যাচ্ছে এই পরিবর্তন। এ পর্বের প্রথম ম্যাচটি ছিল গত মঙ্গলবার। মধ্যরাতে খেলা। তার আগে দিনভর ছিল নানা আলোচনা। কে যাবে ফাইনালে? ফ্রান্স? নাকি বেলজিয়াম? দু’দলই চমৎকার খেলে এতদূর এসেছিল। তাই উভয় দলের ব্যাপারেই ছিল আশাবাদ। বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে বেলজিয়াম। অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে আসা দেশটি বহু বাঙালীর সমীহ আদায় করে নেয়। ফ্রান্সের খেলা পরিচ্ছন্ন, সুন্দর। দেশটির প্রতিও সমর্থন ছিল। ফলে বাংলাদেশীদের কাছে প্রথম সেমিফাইনাল দারুণ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। খেলা চলাকালীন ঢাকার বাসাবাড়ি থেকে ভেসে আসে উল্লাস ধ্বনি। তবে শেষ হাসিটি হাসে একবারের বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স। ১-০ গোলে বেলজিয়ামকে পরাজিত করে ফাইনালে পৌঁছে যায় তারা। বুধবার ঢাকার অলিতে গলিতে, রেস্তরাঁয়, গণপরিবহনে ছিল এ আলোচনা। বেলজিয়ামের জন্য আক্ষেপ করলেও, ফ্রান্সের শক্তি কেউ অস্বীকার করছেন না। একাধিক গল্প, আড্ডায় শোনা গেলÑ ফ্রান্সেই যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। অবশ্য, দিনের প্রথমভাগের আলোচনা শেষভাগে এসে বদলে যায়। রাতে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড- ক্রোয়েশিয়া। কোনটি যাবে ফাইনালে? সমর্থকদের একদলকে নিরপেক্ষ বলে মনে হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ দেখাই ছিল তাদের চাওয়া। তবে অন্য অংশটি ইংল্যান্ডের জয় দেখার জন্য উন্মুখ ছিল। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের মানুষ ইংল্যান্ডের একনিষ্ঠ সমর্থক। আরও কয়েকটি অঞ্চলে ইংল্যান্ডের বিশেষ সমর্থন লক্ষ্য করা যায়। এবারও শুরু থেকেই পছন্দের দলের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছিল। কারণটি অজানা নয় কারও। হ্যাঁ, সিলেটের মানুষ বহুকাল ধরে ইংল্যান্ডমুখী। সে দেশে বসতি স্থাপন করেছে। অনেকেই গ্রহণ করেছেন নাগরিকত্ব। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে সূত্রে প্রবাসীদের আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-সুহৃদরা ইংল্যান্ডের সমর্থনে সব করেছেন। দেশটির পতাকা উড়িয়েছেন সারাদিন। জার্সি পরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আর আজ বৃহস্পতিবার থেকে ফাইনালে মন। আগামী রবিবার রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। ম্যাচের আগে সঙ্গত কারণেই গতি পেয়েছে এ সংক্রান্ত আলোচনা। নতুন মাত্রা লাভ করেছে। পাশাপাশি দৃশ্যমান হচ্ছে আরও কিছু পরিবর্তন। শহর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পরিবর্তে নতুন নতুন দলের পতাকা ওড়ানো হচ্ছে। দেয়ালচিত্রেও দেখা যাচ্ছে মেসি-নেইমারের বিকল্প মুখ। বিশেষ করে পুরান ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে বিশ্বকাপ। বুধবার কলতাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, নতুন করে কিছু দেয়ালচিত্র আঁকা হয়েছে। এসবের কোনটিতেই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার একচেটিয়া প্রচার নেই। এর বদলে সব দলের জার্সি ও পতাকার রং থেকে নিয়ে চমৎকার দেয়ালচিত্র আঁকা হয়েছে। উদ্যোগটি থাউজেন্ড মাইলস ক্লাব বাংলাদেশের। উদ্যোক্তারা জানালেন, বিশ্বকাপে তাদের প্রত্যেকেরই পছন্দের দল ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছে তারা। তাই বলে খেলা দেখা থেকে সরে আসার মানে হয় না। নিজেদের গুটিয়ে নিতে চান না তারা। তাই নতুন করে দেয়াল আঁকা। এবার নির্দিষ্ট কোন দেশ বা দলের নয়, ফুটবলের জয়গান করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান তারা। আগ্রহ হারাতে বসা বিশ্বকাপ ফুটবলের উজ্জীবন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ চেষ্টা সফল হোক। বার বার ফিরে আসুক আবেগ, ভালভসা উৎসবের ফিফা বিশ্বকাপ।
×