ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুতে ৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে ॥ দুটি এমওইউ সই

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১২ জুলাই ২০১৮

বিদ্যুতে ৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে ॥ দুটি এমওইউ সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত খাতে ৬০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), দেশের বেসরকারী কোম্পানি সামিট পাওয়ার, মার্কিন কোম্পানি জেনারেল ইলেক্ট্রিক (জিই) এবং জাপানের মিৎসুবিসি কর্পোরেশন যৌথভাবে এই বিনিয়োগ করছে। দুটি ভিন্ন প্রকল্পে মহেশখালীতে মোট ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের সঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্য স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। বুধবার রাজধানীতে পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সামিট এবং জিই আরের মধ্যে প্রথম এমওইউটি সই হয়। সামিট পাওয়ার জিইর সঙ্গে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। সামিট এবং জিইর সঙ্গে প্রকল্পটিতে জাপানের মিতসুবিসি কর্পোরেশন অংশীদার হিসেবে থাকছে। দ্বিতীয় এমওইউটিসই হয়েছে একই দিন বিকেলে রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে। যেখানে জিইর সঙ্গে পিডিবি যৌথভাবে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। উভয় এমওইউ সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিদ্যুত বিভাগ, পিডিবি, সামিট, জিই এবং মিতসুবিশির পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পিডিবি-জিই-এমওইউ- চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয় তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট প্রকল্পের ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে পিডিবির হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩০ ভাগের মালিকানা পাবে জিই। এছাড়া ১৯ ভাগ পিডিবি এবং জিইএর সমাঝোতার ভিত্তিতে অন্য কোম্পানিকে দেয়া হবে। মূল কাজের মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপের সঙ্গে মহেশখালীতে ৫ হাজার ৬০০ একর ভূমি উন্নয়ন। তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রর নির্মাণ ও পরিচালনা, এলএনজি আমদানি অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। তবে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন করা যাবে। অনুষ্ঠানে ১৯ ভাগ শেয়ার অন্য কোম্পানিকে হস্তান্তরের কথা বলা হলেও পিডিবি বলছে এখনও সেই কোম্পানি নির্ধারণ করা হয়নি। প্রকল্পটির ভূমি উন্নয়নে এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার এবং বিদ্যুত কেন্দ্র এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে দুই দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। জিই পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাসেল স্ট্রোকস এবং পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ স্ব স্ব পক্ষে এমওইউতে সই করেন। ভূমি উন্নয়ন এবং সমীক্ষার পর মূল চুক্তি সই হবে। মূল চুক্তি সইয়ের পর ৩৬ মাসের মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। তবে এমওইই সই এর পর মূল চুক্তি সই করতে বেশি সময় নেয়া হয়। সম্প্রতি পিডিবি একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন চুক্তি করেছে। চীনা হুদিয়ান হংকং কোম্পানি (সিএইচডিএইচকে) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২০১২ সালে এমওইউ সই করে। আর চলতি বছর ৬ মে যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন চুক্তি হয়। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, এলএনজির পাশাপাশি কয়লাচালিত বিদ্যুত গুলো এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আশাকরি ১০ বছর পর বাংলাদেশ গ্যাস টার্বাইন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারবে। এজন্য তিনি দেশীয় প্রকৌশলীদের উৎকর্ষ সাধনে জিই এর সহায়তা চান। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস বার্নিকার্ট বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক এই সমঝোতার মাধ্যেম আরও জোরালো হবে। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার বিদ্যুত উৎপাদন বাড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। জিইর সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব সরকারের লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে। এটি সরাসরি সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ আমেরিকার। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত সচিব ড.আহমেদ কায়কাউস, জিই পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাসেল স্ট্রোকস এবং পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বক্তব্য রাখেন। সামিট-জিই সমঝোতা ॥ অন্যদিকে সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে দেশের বেসরকারী খাতের বিদ্যুত উৎপাদনকারী সব থেকে বড় কোম্পানি সামিট পাওয়ার জেনারেল ইলেক্ট্রিক (জিই) কোম্পানি ও জাপানের মিতসুবিশি কর্পোরেশন মিলে তিন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। দেশীয় মুদ্রায় এই বিনিয়োগের পরিমান ২৪ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় জিইর প্রধান পণ্য ৯এইচএ গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করে ৬০০ মেগাওয়াট করে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এখানে মোট তিন লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার গ্যাস মজুদ ক্ষমতার দুটি এলএনজি টার্মিনাল, একলাখ মেট্রিক টন ক্ষমতার একটি তেলের সংরক্ষণাগার এবং ৩০০ মেগাওয়াটের একটি ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, মিতসুবিশি কর্পোরেশনের ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিজনেস ডিভিশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তেতসুজি নাকাগাওয়া, জিই পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাসেল স্টোকস স্ব স্ব কোম্পানির পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত, জ¦ালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বেসরকারী অন্য কোম্পানিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমরা বিদ্যুত উৎপাদনের সঙ্গে সঞ্চালন এবং বিতরণে বেসরকারী অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ছাড়াও সামিট, জিই এবং মিতসুবিশির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সরকার মহেশখালীতে বিদ্যুত হাব নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। শুরুতে মহেশখালীতে ১০ হাজার মেগাওয়াটের কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে কয়লার পাশাপাশি সেখানে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান অনুযায়ী মোট বিদ্যুত উৎপাদনের ৫০ ভাগ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসাতে এলএনজিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাতারবাড়িতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি একটি ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।
×