ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোটায় হাত দিতে হলে সরকারকে আগে রিভিউ করে আদালতের রায় পক্ষে নিতে হবে ॥ মন্ত্রী মোজাম্মেল হক

মুুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ ভাগ কোটা রাখতেই হবে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ জুলাই ২০১৮

মুুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ ভাগ কোটা রাখতেই হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখতেই হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হাত দিতে হলে সরকারকে আগে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করে রায় পক্ষে পেতে হবে। তবে কোটা পর্যালোচনা কমিটি মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদে অন্য কোটায় পরিবর্তন আনার সুপারিশ করতে পারবে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ বা গমনাগমনে কোন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খ-িত তথ্য প্রচারের ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ‘চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কার্যক্রম’ নিয়ে বুধবার সকালে সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আপীল বিভাগের এক আদেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা কোটা থেকে তা পূরণ করার সুযোগ দেয়া হলেও ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়ে গেছে। তাই এ আদেশ অগ্রাহ্য করে বা পাশ কাটিয়ে বা উপক্ষো করে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এটা করা হলে আদালত অবমাননার শামিল হবে বলে আমি মনে করি। মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকায় আদালতের আদেশে যতক্ষণ না পরিবর্তন আসছে, ততক্ষণ এর ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। আদালতে ভ্যাকেট করাতে হবে। সরকার আপীল বিভাগে রিভিউ পিটিশন করলে আদালত যদি রায় দেয় তবেই পারবে। এই আদেশ বহাল থাকা পর্যন্ত (মুক্তিযোদ্ধা কোটা পরিবর্তনের) কোন সুযোগ নাই। আদালতের রায়ের কপি বুধবার কোটা পর্যালোচনা কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারের ওই কমিটি ‘সচেতনতার সঙ্গে’ সিদ্ধান্ত নেবে বলে তারা আশা করছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন, তাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, এ সরকার যেহেতু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তাই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ করা হবে না এবং মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। তবে কোটা পর্যালোচনা কমিটি মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদে অন্য কোটায় পরির্বতন আনার সুপারিশ করতে পারবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। অন্যদের মধ্যে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গমনাগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি- কর্তৃপক্ষ ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কাউকে প্রবেশ বা গমনাগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে দেশের কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খ-িত তথ্য প্রচারের ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাউকে প্রবেশ বা গমনাগমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে উৎসাহিত না করার জন্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে। যেসব সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের কথা প্রভোস্ট কমিটি গ্রহণ করেছে, সেগুলো ঐতিহ্যবাহী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত রীতি, নীতি ও সিদ্ধান্তের আলোকে নেয়া হয়েছে। ঢাবি প্রশাসন ও সরকারের কাছে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ৬ দফা ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে ছয়টি দাবি জানিয়েছে। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের অধিকারে বাধা দেয়া যাবে না। মিছিল-মিটিং, বিক্ষোভ, সমাবেশের মতো আন্দোলনের গণতান্ত্রিক ধারাগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কোন ছাত্র সংগঠন বা পুলিশ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। কোটা সংস্কারের ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা দাবি করা যে সকল শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া ও হামলায় আহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় রাষ্ট্রকে নিতে হবে। অহিংস মানববন্ধন ও মিছিলগুলোতে বিনা উসকানিতে যারা হামলা করেছে তাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন, অবস্থান ॥ নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। মোকাররম ভবনের মূল ফটকের সামনে এ কর্মসূচী পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এ মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। কিন্তু সে আন্দোলনে কিছু দুর্বৃত্ত নিজেদের স্বার্থসিদ্ধ করতেই হামলা করেছে। শুধু তাই নয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ নির্যাতিত সেসব শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে, রিমান্ডে দিয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এমন পরিস্থিতিতে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে।
×