ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে ফ্রান্স ॥ বেলজিয়ামের স্বপ্নভঙ্গ

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১১ জুলাই ২০১৮

ফাইনালে ফ্রান্স ॥ বেলজিয়ামের স্বপ্নভঙ্গ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ষষ্ঠবারের মতো সেমিফাইনাল খেলতে নেমে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে একবারই শিরোপা জেতা দলটি ২০০৬ সালে রানার্সআপ হয়েছিল। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপেও ফাইনালে উঠল তারা। বুধবার মস্কোর ক্রেস্টোভস্কি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ফ্রান্স। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর ম্যাচের ৫১ মিনিটে ফরাসি ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতি দারুণ হেডে জয়সূচক গোলটি করেন। ফলে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয়বার সেমিতে ওঠা বেলজিয়াম আবারও বিদায় নিল শেষ চার থেকেই। ৩২ বছর (১৯৮৬ বিশ্বকাপ) পরও ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন অধরাই থাকল বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের। আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়ার বিজয়ী দল রবিবার শিরোপা লড়াইয়ে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে। সবাই বলছিলেন ফ্রান্স-বেলজিয়াম সেমিফাইনাল ম্যাচটিই আসলে চলতি বিশ্বকাপের ফাইনাল। সেই উত্তাপটা ছড়িয়ে পড়ে ম্যাচের শুরুতেই। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে নামা ফ্রান্স অলিভার জিরডকে নিয়ে শুরু থেকেই বেলজিয়াম রক্ষণভাগকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে টানা কিছু আক্রমণ করে। তবে একই ফরমেশনে নেমে ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নেয় বেলজিকরা। সমান তালে আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। বেলজিয়াম সর্বশেষবার ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নেমে ৪-৩ গোলের জয় পেয়েছিল ২০১৫ সালে প্যারিসে হওয়া এক প্রীতি ম্যাচে। সার্বিকভাবেও তারা ফ্রান্সের বিপক্ষে সফলতাই পেয়েছে ৩০ জয় নিয়ে। ফরাসিদের জয় ছিল মাত্র ২৪ ম্যাচে। ১৯৮৬ সালে বেলজিকরা একবারই সেমিফাইনাল খেলেছিল এবং আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যায়। তৃতীয় স্থানের প্লে-অফে ফ্রান্সের কাছে ৪-২ গোলে হেরে চতুর্থ হয়েছিল। ৩২ বছর পর সেমিতে উঠে আবার সেই ফরাসিদেরই মুখোমুখি হয় তারা। বিশ্বকাপে এ দুটিই সাক্ষাত দুদলের। সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্রেস্টোভস্কি স্টেডিয়ামে চলে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্যে দিয়ে গতিময় ফুটবল। রুদ্ধশ্বাস প্রতিটি মুহূর্তে অবশ্য গোছানো আক্রমণ বেশিরভাগ সময়ে করেছে বেলজিয়ামই। কেভিন ডি ব্রুইন আর মারুয়ান ফেলাইনির গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এডেন হ্যাজার্ড আর রোমেলু লুকাকু বেশকিছু সংঘবদ্ধ আক্রমণ রচনা করেন। কিন্তু ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিসের দুর্দান্ত দক্ষতায় বেঁচে যায় ফ্রান্স। ২২ মিনিটের সময় এমন একটি আক্রমণে গোলমুখে বেলজিকদের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন লরিস। কাউন্টার আক্রমণে বারবারই বেলজিক শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে যাচ্ছিলেন জিরড আর কিলিয়ান এমবাপে। তাদের বারবার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছিলেন এ্যান্টোনি গ্রিজম্যান। কিন্তু কোনটাই ফলপ্রসূ হয়নি। প্রথমার্ধের ৪৬ মিনিটের সময় ব্রুইনের ক্রসে পা লাগাতে পারেননি ছোট ডি বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো লুকাকু, তার হাতে লেগে বল চলে গেলে বেছে যায় ফ্রান্স আরেকবার। ৫৮ ভাগ সময় নিজেদের পায়ে বল রেখেছিল বেলজিয়াম, কিন্তু গোলের দেখা পায়নি অনেক চেষ্টাতেও। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্যভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম থেকেই দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে ফরাসিরা। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কাজানে গতির ঝড় তোলা মাতুইদি, এমবাপেরা ঝলসে ওঠে মুহুর্মুহু আক্রমণ করেন বেলজিয়ামের তাঁবুতে। তবে থিবাউ কুর্তোয়া ব্রাজিল ম্যাচের মতোই কার্তুজের মতো জ্বলে ওঠেন। তবে তাকে নিভিয়ে দিতে সময় লাগেনি, গ্রিজম্যানের কর্নার থেকে নেয়া বাঁকানো ক্রসে হেড করে কুর্তোয়ার প্রতিরোধ ভেঙ্গে বেলজিয়ামের জালে বল জড়িয়ে দেন ফরাসি ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতি (১-০)। এরপর ফরাসিদের আরেকটি সুযোগ নস্যাত করে দেন কুর্তোয়া। বেলজিয়াম গুছিয়ে ওঠে আবারও। আক্রমণ করতে থাকে গোছানো ফুটবল খেলে। ৬৪ মিনিটের সময় বক্সের ভেতরে দাড়ানো মারুয়ান ফেলাইনি অবশ্য দারুণ ক্রসে হেড করলেও সেটা সাইডবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। আশা ছাড়েনি বেলজিয়াম। ৮০ মিনিটে উইটসেলের আরেকটি দূরপাল্লার দুর্দান্ত শট লরিস পাঞ্চ করে ঠেকিয়ে দেন। সময় পেরিয়ে যেতে থাকে। আর বেলজিক শিবিরে বাড়তে থাকে হতাশা। ৮৮ মিনিটে এরপরও সুযোগ তৈরি করেছিল তারা। ডি ব্রুইনের করা ফ্রি কিকের ক্রসে বক্সের ভেতর দারুণ হেড নিয়েছিলেন স্টিভেন এনজোনজি। কিন্তু তা অকার্যকর হয়ে যায় ফরাসি রক্ষণভাগের দৃঢ়তায়। এরপর দারুণভাবে সেই বলটি বক্সের ভেতরে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লুকাকু সেটা পায়ে লাগাতে পারেননি। ৯৬ মিনিটে ফ্রান্স আরেকটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিল কাউন্টার এ্যাটাক থেকে। কিন্তু কুর্তোয়া ঠেকিয়ে দেন টোলিসোর শট। শেষ পর্যন্ত বেলজিকরা আর পারেনি। উমতিতির গোলেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আরেকবার। সেমি থেকেই ১৯৮৬ সালের মতো বিদায় নিয়েছে তারা। আর ১২ বছর পর (২০০৬ বিশ্বকাপ) আবার ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স।
×