ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্যাপ্টেন মডরিচকে ঘিরেই ক্রোয়েটদের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১১ জুলাই ২০১৮

ক্যাপ্টেন মডরিচকে ঘিরেই ক্রোয়েটদের স্বপ্ন

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ আর দুটি মাত্র ম্যাচ। তাহলেই স্বপ্নের শিরোপা। আর ক্রোয়েটদের স্বপ্ন একজনকে ঘিরে। তিনি লুকা মডরিচ। ক্রোয়েশিয়া ফুটবলের সুপার হিরো, দ্য ক্যাপ্টেন, দ্য লিডার। রাশিয়া বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ শক্তিধর ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে ক্রোয়েটরা। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্কের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয়ের পর কোচ জøাতকো দালিচ যেমন বলেছিলেন, ‘একবার ভাবুন, টাইব্রেকারে শট মিস করলে দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যেত। ক্রোয়েশিয়ার একটা প্রজন্মের কাছে খলনায়ক হয়ে থাকত আজীবন। এরপরও দায়িত্ব এড়ায়নি মডরিচ। এ জন্যই ও আমাদের নেতা।’ সেদিন নির্ধারিত সময়ে পেনাল্টি মিসের পরও টাইব্রেকের আগে কোচের কাছে গিয়ে মডরিচ বলেছিলেন, ‘আমি শট নেব। আমি যোদ্ধা, এখানেই থামতে আসিনি!’ এমন সেনাপতিকে ঘিরেই তো স্বপ্ন দেখা যায়। মডরিচ সতীর্থ বার্সিলোনা তারকা ইভান রকিটিচ বলেন, ‘মডরিচ কিংবদন্তি, নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার।’ ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েই সেমিফাইনালে খেলে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল ক্রোয়েটরা। সেবার গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন ডেভর সুকার। দেশটির ইতিহাসের সেরা সেই দলের অনেকেও মডরিচকে সর্বকালের সেরা ভাবেন। এ জন্যই হয়তো এবার সেমিফাইনালে থেমে থাকতে চান না মডরিচ। বেড়েছে তার স্বপ্নের পরিধি, ‘দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলে আমি গর্বিত। সবচেয়ে সম্মানের এটা। বিশ্বকাপ জিততে পারলে হবে অকল্পনীয় রূপকথা। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরার চেয়ে বিশেষ আর কি হতে পারে।’ ক্রোয়েশিয়া আশাবাদী হতেই পারে, কারণ ভরসা দিচ্ছেন মডরিচ। তার আগে ইংল্যান্ড-বাধা অতিক্রম করতে হবে, সেটিও ভাল করে জানেন ক্রোয়েটদের সুপার হিরো। ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে মডরিচ বলেন, ‘বিশ্বকাপের অন্য ম্যাচগুলোর মতোই এটা খুব কঠিন ম্যাচ হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন আমরা সময়টাকে উপভোগ করতে চাই। অবশ্যই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। কারণ ওরা খুব শক্তিশালী। এতটুকু ভুল করা চলবে না। সতীর্থরা সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুত।’ লোকে তাকে চেনে মডফাদার হিসেবে। বিশ্বকাপের ৫টি ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছেন ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচের’ পুরস্কার। কোয়ার্টারে রাশিয়ার বিপক্ষে পুরো ১২০ মিনিট দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মডরিচ। দল উঠেছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত একটি ম্যাচের অপেক্ষায় এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। কিন্তু টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেললেও এখনই গোল্ডেন বল নিয়ে ভাবছেন না, ‘আমি সত্যি কথা বলতে ওইসব নিয়ে ভাবছি না। আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো দলের সাফল্য। ব্যক্তিগত পুরস্কার ভাল জিনিস কিন্তু বর্তমানে আমি শুধু দলের সাফল্য নিয়ে থাকতে চাই এবং সামনে এগোতে চাই।’ কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারায় স্বাগতিক রাশিয়াকে। ওই জয়ে ১৯৯৮ সালের পর আবারও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে আসে তারা। দলকে সেমিফাইনালে তুলতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন মডরিচ। সেদিন ম্যাচসেরাও হন তিনি। একটি গোল ছাড়াও পুরো ম্যাচে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ৩২ বছর বয়সী তারকা। তিনি বলেন, ‘আমাদের আসল লক্ষ্য কি দলের সকলেই তা বুঝতে পারছে। আমরা এখানে এসেছি শিরোপা জিততে।’ ক্রোয়েশিয়া আত্মবিশ্বাসের রসদটা গ্রুপপর্বে হট ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে হারিয়েই পেয়েছে, ‘আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সত্যি বলতে, ঐ ম্যাচটাই আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তবে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের ম্যাচটি। ফাইনালে উঠতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এ জন্য আমাদের সেরা পারফর্মেন্স করতে হবে।’ আজ সেমিতে নামার আগেই ফুটবলে সময়ের সেরা দুই তারকা লিওনেল মেসি ও রোনাল্ডোদের পাশে জায়গা করে নেন মডরিচ। বিশ্বকাপ চলাকালেই কাজানের এক হোটেলের বাইরে মেসি-রোনাল্ডোদের পেইন্টিং আঁকা হয়েছিল। দীর্ঘকায় সেই পেইন্টিং দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন সমর্থকরা। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল বাদ পড়ে গেলে তাতে ভাটা পড়ে। সেমিফাইনালের আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলতে সেখানে আঁকা হয়েছে লুকা মডরিচের ছবি। এ থেকে বোঝা যায়, কেবল ক্রোয়েশিয়াই নয়, রাশিয়ানরাও মডরিচের প্রেমে পড়ে গেছেন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, হট ফেবারিট ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ অনেক বড় দল যেখানে বিদায় নিয়েছে সেখানে শিরোপা থেকে মাত্র দুটি ম্যাচের দূরত্বে ক্রোয়েশিয়া। সুতরাং মাস্টার মডরিচকে ঘিরে তৈরি উন্মাদনাটাও স্বাভাবিক। আজও কী পারবেন তিনি? পারবেন স্বপ্নপুরুষ হতে?
×