ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুদ হ্রাসের প্রভাবে ব্যাংকিং খাত থেকে রাজস্ব কমতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১১ জুলাই ২০১৮

সুদ হ্রাসের প্রভাবে ব্যাংকিং খাত থেকে রাজস্ব কমতে পারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঋণে সুদের হার কমানোকে কেন্দ্র করে এ বছর ব্যাংকগুলোর আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক ধাক্কা লাগার আশঙ্কা করছেন ব্যাংক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা বলছেন, হঠাৎ করে গ্রাহকদের সিঙ্গেল ডিজিটে সুদ দিতে গেলে ব্যাংকগুলোর এ বছর সুদ আয় কমে যাবে ১ থেকে ২ শতাংশ। এর প্রভাবে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যেতে পারে, যা টাকার অংকে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার মতো। এদিকে বাজেটে ব্যাংক খাতের কর্পোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানোর ফলে ব্যাংক খাত থেকে আরও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আয় হবে সরকারের। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ঋণে সিঙ্গেল ডিজিটে সুদ দেয়ার ফলে ব্যাংকগুলোর আয় আগের বছরের চেয়ে এবার কমে আসবে। ফলে এই খাত থেকে সরকারের রাজস্বও কিছুটা কমে যাবে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মেয়াদী আমানতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি থাকার ফলে আমরা ইচ্ছে করলেও আমানতে সুদ কমাতে পারছি না। অথচ ঋণে আমরা সুদ কমাচ্ছি। ফলে ব্যাংকের ব্যয় না কমলেও আয় ঠিকই কমে যাবে। এ বছর আমরা এটা মেনে নিয়েছি। একটি বেসরকারী ব্যাংকের এমডি নাম প্রকাশ না করে বলেন, গত মাসেও ব্যাংকগুলো কয়েকটি খাতের ঋণে ১১ থেকে ১২ শতাংশ হারে সুদারোপ করেছে। এখন সেই সুদ হঠাৎ করে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হলে ব্যাংকের ২ থেকে ৩ শতাংশ লোকসান গুণতে হবে। তার মতে, এই লোকসানের প্রভাব গিয়ে পড়বে ব্যাংকের মুনাফায়। আর মুনাফা কমে গেলে সরকারের রাজস্বও কমে যাবে। প্রসঙ্গত, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে কর্পোরেট কর বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে কর্পোরেট কর বাবদ আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত অর্থবছরের চেয়ে সরকার এই অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব পাবে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাংক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব কমে যাওয়ার প্রকৃত হিসাব দেয়া না গেলেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি উল্লেখ করেন, এমনিতেই কর্পোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর ফলে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আয় হবে। এর সঙ্গে হঠাৎ করে ঋণে সুদহার কমানোর ফলে ব্যাংকের আয়ে একটা বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যা সরকারের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। জানা গেছে, কর্পোরেট করের মধ্যে ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ হয়। মোট কর্পোরেট করের ৭০ শতাংশ আয় হয় এই খাত থেকে। আবার এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) অফিসের অধীনে ভ্যাট দেয়া শীর্ষ ১০টি খাতের অন্যতম হচ্ছে ব্যাংক খাত। এর আগে, বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে বাজেটে ব্যাংক খাতের কর্পোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) এক শতাংশ কমানো হয়েছে।
×