ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানির চাপে কমল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১১ জুলাই ২০১৮

আমদানির চাপে কমল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সদ্য সমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়েনি। এ সময়ে উল্টো আরও কমে গিয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে। অর্থবছর জুড়েই আমদানির চাপ বেশি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, গেল অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল প্রায় ৩৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩০০ কোটি) ডলার। আগের বছরের জুনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়। এরপর বেশ কয়েকবার উঠানামা করে গত মাসে তা আবার ৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধ করতে হয়। সাধারণত, আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে যায়। এ কারণেই রিজার্ভের ওঠানামা হয়েছে। গত সপ্তাহে এক দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার আকু পেমেন্ট করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনও এত বেশি অর্থ আকুর জন্য পরিশোধ করতে হয়নি। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। ওই দিন রিজার্ভ হয় ৩১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গেল অর্থবছরের শুরুতে যে পরিমাণ রিজার্ভ ছিল শেষ পর্যন্ত তা থাকেনি। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। সেটা থাকলে সে দেশের আর্থিক সক্ষমতা ভাল বলে ধরে নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে তাতে প্রায় ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তবে শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকেই আর্থিক সক্ষমতা হিসেবে না দেখার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রিজার্ভ। রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো আকুর আমদানি বিল বকেয়া রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৬ বছরের মাথায় সেই রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এ হিসাবে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়েছে ৩২ গুণ। রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বাড়লে রিজার্ভ কমে। গত বছর থেকে সাম্প্রতিক সময়ে রফতানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির ধারা নিম্নমুখী। সম্প্রতি রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। আগামী ঈদের আগে রেমিট্যান্স বাড়লে রিজার্ভের পরিমাণও আরও বেড়ে যাবে। এ দিকে আমদানি ব্যয়ও আগের চেয়ে বাড়ায় দুশ্চিন্তাও বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে দেখা গেছে, সম্প্রতি ইতিবাচক ধারায় ফিরছে রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধি। গেল অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে খুব কম। প্রায় ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। এ সময়ে রফতানি আয়েও কাক্সিক্ষত গতি আসেনি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে আয় করেছে তিন হাজার ৬৬৭ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র পাঁচ দশমিক ৮১ শতাংশ। গত অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল এক দশমিক ৩৫ শতাংশ। যা গত দেড় দশকে এত কম প্রবৃদ্ধি হয়নি। অন্যদিকে গত অর্থবছরের (২০১৭-১৮) দেশের হাওড় অঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গায় বন্যার কারণে প্রচুর চাল আমদানি করতে হয়। এ জন্য আমদানি বেড়ে যায়। এ ছাড়াও অন্যান্য পণ্য ও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিও বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি বেড়েছে ৩১ শতাংশ। আর এ সময়ে অন্যান্য পণ্য আমদানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
×