ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কে কার সমর্থক, কে একঘরে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১১ জুলাই ২০১৮

কে কার সমর্থক, কে একঘরে

হঠাৎই ধাঁধা লাগে চোখে, বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথম রাউন্ডেই জার্মানির বিদায়, কিন্তু জার্মান পতাকা উড়ছে বার্লিনের নানা মহল্লায় (বার্লিনে ১৬টি জেলা), বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, জানালায়। তার মানে, পরাজয়েও লজ্জা হয়নি, মুখ লুকোয়নি। পতাকা শোভিত। নামায়নি। দিব্যি উড়ছে। ভাল করে ঠাওর করলে ধাঁধা কাটে, জার্মানির পতাকা উল্টো। জার্মানির পতাকা নিচ থেকে উল্টো করে ধরলেই বেলজিয়ামের পতাকা হয়ে যায়। একই রক্ত। জার্মান পতাকা কালো-লাল-হলুদ। বেলজিয়াম পতাকা কালো-হলুদ-লাল। জার্মান পতাকা নয়, বাড়ির ছাদ-বারান্দা-জানালা থেকে লাপাত্তা, হাওয়ায় আন্দোলিত বেলজিয়ামের পতাকা। জার্মানির দ্বিতীয় টিভি চ্যানেল জেডডিএফ (তউঋ), সরকারী, রবিবার রাতে এক প্রতিবেদনে মজার তথ্য দিয়েছে, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলে সেমিফাইনালে ইইউ (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন)-এর সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।’ ব্রেক্সিটে ব্রিটেন একঘরে, ইইউভুক্ত নয় আর। ইংল্যান্ড এখন ইইউর দোস্ত নয়, দুষমন, চোখের বালি। ইইউর কোন দেশের ফুটবল পাগল ইংল্যান্ডকে সমর্থন করছে না। বার্লিনের কোন বাড়ির ছাদে, বারান্দায় ইংল্যান্ডের পতাকাও চোখে দেখিনি এখনও। যদিও বার্লিনের স্যাইনেব্যার্গে, ভিলমারসডর্ফে, প্রেন্সলাউয়ারব্যার্গে, শার্লোটেনবুর্গে বিস্তর বিলেতির বাস। কর্মসূত্রে। ব্যবসায়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও কম নয়। ব্রেক্সিটের কারণেই বোধহয় ইংল্যান্ডের পতাকা উত্তোলনে লজ্জিত ঠিক যে বিশ্বকাপ ফুটবল (২০১৮) ইউরোপের পদতলে, তবে ইউউর বলা যাবে না। বলা যেত, যদি ব্রেক্সিটের হাঙ্গামা, বদমাইশি না থাকত। ইইউ কেন বিভক্ত, ইইউর কোন্ দেশ কোন্ দেশকে সমর্থন করছে, জেডডিএফ চটজলদি জরিপে বলছে, ‘জার্মানিসহ অস্ট্রিয়া, ইতালি, সুইজারল্যান্ড এবং অবশ্যই বেনেলুক্স (বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-লুক্সেমবুর্গ) এমনকি নর্ডিকসদেশ (সুইডেন-ডেনমার্ক-নরওয়ে-ফিনল্যান্ড-আইসল্যান্ড) বেলজিয়ামের পক্ষে, ঘোরতর সমর্থক।’ কেন পক্ষে বা সমর্থন করছে, বলা হয়নি আদৌ। আমরা জানি, পরোক্ষে সূক্ষ্ম রাজনীতি। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস, ইইউর হেড কোয়ার্টার, ইইউর সব রাজনীতি, অর্থনীতির ঘোরপ্যাঁচ, পলিসি, বিধান এখানেই। অবশ্য, বেলজিয়াম বা ব্রাসেল ইইউর নীতিনির্ধারণে মাতব্বর নয়। তবু বেলজিয়ামকে তোল্লাই দেয়, যেমন কলকাতাকে ঢাকা। শিল্প সাহিত্য সব ক্ষেত্রে। জার্মানির পাশের দেশ বেলজিয়াম, মাত্র ২৮ ফুট সড়ক পেরোলেই (আখেন) বেলজিয়াম। সীমান্তের বালাই চোখেও পড়ে না। উপরন্তু, বেলজিয়ামের দশ শতাংশের বেশি জার্মানভাষী। তো, জার্মানদের বেলজিয়ামপ্রীতি স্বাভাবিক। বেলজিয়ান নারীরা নাকি জার্মান পুরুষ খুব পছন্দ করে। জার্মান পুরুষরা বেলজিয়ান নারীদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, বিশেষত, ষাট দশক থেকে জার্মানির জিগরি দোস্ত ফ্রান্স। রাজনৈতিক প্রেম। কিংবা রাধাকৃষ্ণ-লীলা। বিরহ, মনোমালিন্যও আছে। তবে, ‘না ছাড়িব দোঁহে।’ রাজনীতির-লীলা যতই একাত্ম হোক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জার্মানিই কুবের। ফ্রান্সকে খাটো চোখেই দ্যাখে। বশে রাখে। জার্মানি সবচেয়ে ধনী দেশ ইউরোপে। চোখ রাঙায় সারাক্ষণ ইইউ-দেশে। ফুটবলে জার্মানির শত্রু ফ্রান্স (আগে ছিল ইতালি)। শত্রুতা কতটা, বহুমানিত দৈনিক ফাতস্ (ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে ৎসাইটুং) লিখছে, ‘ফ্রান্সকে সমর্থন করছে না জার্মানরা (২০১৮ বিশ্বকাপ ফুটবলে), সমর্থকরা চোখ-মুখ-কান বন্ধ করে বেলজিয়ামের পক্ষে। বেলজিয়ামের পতাকা ওড়াচ্ছে বাড়িতে। জার্মান পতাকা উল্টিয়ে।’ ফ্রান্স একঘরে নয়। ইইউর নানা দেশ সমর্থন না করলেও। ফ্রান্সের সমর্থক আফ্রিকার ফ্রেঞ্চভাষী সব দেশ। কেউ ভাবতেই পারেনি ক্রোয়েশিয়ার মারকুটে প্রতাপ, সব প্রতিপক্ষকে ‘হেলায় করিয়া লঙ্কা জয় বিজয়ী সমরে।’ ক্রোয়েশিয়া ইইউভুক্ত, কিন্তু ইইউর পশ্চিমা দেশ সমর্থক নয়। ‘পুঁচকে ঢুকেছে তালেগোলে ফোঁকরে/কী করে, হায়রে, কী করে!’ বার্লিনের ডাকসাইটে, ভ্রু-উঁচু দৈনিক ড্যের টাগেস্পিগেল সরেজমিন তদন্ত রিপোর্টে লিখছে, ‘ক্রোয়েশিয়ার সমর্থনে মরিয়া ইইউর পূর্ব ইউরোপ। এমনকি পরাজিত রাশিয়াও।’ রিপোর্টে খোঁচাও আছে, ‘ক্রোয়েশিয়াও একদা কমিউনিজমে মশগুল ছিল। এখন সম্পূর্ণত থাক বা না থাক। পুতিন ক্রোয়েশিয়াকে বাহবা দিয়েছেন কমিউনিজমের আঘ্রাণে।’ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিশ্বকাপ ফুটবলে দেশভিত্তিক বিভক্ত সমর্থনে, সমর্থকের আহ্লাদে, গরিমায়, তেজ ও বলীয়ানে।
×