ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বাঙালী নারীর রোমান্টিকতার প্রতিচ্ছবি সুশান্তের বনলতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ জুলাই ২০১৮

বাঙালী নারীর রোমান্টিকতার প্রতিচ্ছবি সুশান্তের বনলতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনুপ্রাণিত এক চিত্রকর সুশান্ত কুমার অধিকারী। সেই সুবাদে শিল্পীর ক্যানভাসে যেন অনূদিত কবির কালজয়ী কবিতা ‘বনলতা সেন’। রোমান্টিকতার প্রতীকে পরিণত হওয়া কবিতাটি থেকে ভাবনা তাড়িত হয়ে ছবি এঁকেছেন এই শিল্পী। চিত্রকর্মগুলো হয়ে উঠেছে বাংলার নারীদের রোমান্টিকতার প্রতিচ্ছবি। সেসব ছবি নিয়ে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালায় চলছে এই শিল্পীর প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘বনলতা’। বনলতাকে আশ্রয় সুশান্ত কুমার তার ক্যানভাসে সেই রোমান্টিক নারীকেই খুঁজেছেন। বঙ্গললনার রোমান্টিক রূপের সে অন্বেষণ তিনি যেমন করেছেন চারপাশের প্রতিদিন দেখা সাধারণ নারীদের মাঝে। একইভাবে তিনি বাংলা সাহিত্যের রোমান্টিক ও ¯িœগ্ধময় নারীদেরও মেলে ধরেছেন চিত্রপটে। তাই রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার লাবণ্য ও কেটি কিংবা হৈমন্তী, নজরুলের নার্গিস ও সুলতানা কিংবা পথের ধারে ঘুটে কুড়ুনির মাঝেও সুশান্ত সন্ধান করেছেন প্রেমের আধার সেই নারীকে। চিত্রণের আঙ্গিকে শুধু বিষয়কেই প্রাধান্য দেননি সুশান্ত অধিকারী। করণকৌশলে যোগ করেছেন ভিন্নমাত্রা। বেশিরভাগ ছবি এঁকেছেন ওয়াশ টেকনিকে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঙ্গল স্কুলে এই ওয়াশ টেকনিকের প্রবর্তন করেছিলেন। তার ছাত্র নন্দলাল বসু বিশ^ভারতীর কলাভবনে যেয়ে ওয়াশ টেকনিকের পাশাপাশি ওপেক রঙেরও ছবি এঁকে প্রাচ্যশিল্পকে ঋদ্ধ করেছেন। সুশান্ত কুমার অধিকারীও প্রচলিত জল রঙের পদ্ধতি এড়িয়ে স্বতন্ত্র এক কৌশলে এঁকেছেন চিত্রকর্ম। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, প্রেম সব কালে সব যুগে বিরাজমান। সময়ের নিরিখে শুধু বদলে যায় পাত্র-পাত্রী। আমি তাই বনলতাকে কেন্দ্র করে বাংলার নারীদের রোমান্টিক ও ¯িœগ্ধ রূপটিকে তুলে ধরতে চেয়েছি। ২৭টি চিত্রকর্ম নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। সোমবার থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। আইভি জামানের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর সমাপ্তি ॥ কাঠ, পাথর ও মার্বেলের আশ্রয়ে দারুণ দক্ষতায় ভাস্কর্য গড়া এক শিল্পী আইভি জামান। প্রকৃতি-পরিবেশসহ যাপিত জীবনের নানা বিষয়কে উপজীব্য করে এগিয়ে যায় তাঁর শিল্পসম্ভার। শিল্প সৃজনে এই শিল্পী ভারতীয় ভাস্কর্যরীতির পরিবর্তে ধাবিত হন ইউরোপীয় আধুনিকতার পথে। তেমন দৃষ্টিনন্দন কিছু ভাস্কর্য নিয়ে ২৫ জুন থেকে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে শুরু হয় এই ভাস্করের চতুর্থ একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী। অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের সহযোগিতায় জাদুঘরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘সাহসী ভাস্কর্যের ভুবনে’ শীর্ষক ১৬ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে বিকেলে সমাপনী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আইভি জামানের ভাস্কর্য ও পেইন্টিং প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও শিল্প সমালোচক অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ড. ফরিদা জামান, অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের চেয়ারম্যান নীলু রওশন মুর্শেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক নাজমা খান মজলিশ। আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের ভাস্কর্য ও পেইন্টিং শিল্পীদের মধ্যে আইভি জামান অন্যতম একজন। সৃষ্টিশীল বিভিন্ন ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম সৃজনের মাধ্যমে তিনি আপন প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। ভাস্কর্য ও চিত্রকর্মের আঙ্গিকে তিনি সমকালীন নারী শিল্পীদের একজনে পরিণত করেছে। প্রদর্শনীর অধিকাংশ কাজই বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ। একই পরিচ্ছন্ন ও নিপুণতায় নির্মিত আইভি জামানের ভাস্কর্য। এই কারণেই শিল্পীর প্রতিটি কাজই উঁচুমানের। শিল্প সৃজনে তিনি স্পেস থেকে বিভিন্ন ফর্ম গড়েছেন। সমগ্র স্তব্ধতার মধ্যে গতি খুঁজেছেন। পাথরের ব্লক, মার্বেলের ব্লক কিংবা কাঠের ব্লক দিয়ে স্পেসকে প্রতিরোধ করেছেন। এই প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে তিনি এ্যাবস্যুলেটকে খুঁজে পেয়েছেন। আর ভাস্কর হিসেবে তার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো নিজেকে পাথর, মার্বেল কিংবা কাঠের মধ্যে শিল্পকে রূপান্তরিত করা।
×