ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাখাইনে রোহিঙ্গা বসতিতে গড়ে তোলা বৌদ্ধ আদর্শ গ্রাম উচ্ছেদ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ জুলাই ২০১৮

রাখাইনে রোহিঙ্গা বসতিতে গড়ে তোলা বৌদ্ধ আদর্শ গ্রাম উচ্ছেদ শুরু

চট্টগ্রাম অফিস/স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ রাখাইন রাজ্যে ফেলে আসা রোহিঙ্গাদের বসতিসমূহ ধ্বংস করে গড়ে তোলা বৌদ্ধ আদর্শ গ্রাম আন্তর্জাতিক চাপের মুখে উচ্ছেদ করেছে মিয়ানমার। জাতিসংঘের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা আউং সান সুচির নির্দেশনায় পুলিশ নবপ্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধ গ্রামগুলো উচ্ছেদ করেছে বলে ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হওয়ায় মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাখাইনে স্থাপিত বৌদ্ধ গ্রাম উচ্ছেদ করার বিষয়টি সুচি সরকারের জন্য নতুন একটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এতে সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ রাখাইনে (মংডু শহরের কাছে) রোহিঙ্গাদের গ্রামে স্থাপিত বৌদ্ধ গ্রাম উচ্ছেদ করেছে পুলিশ। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য শীঘ্রই মিয়ানমারে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। সূত্রে জানানো হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় ১০-১২টি গাড়িযোগে মংডু জেলা পুলিশের একাধিক দল থিনবাওগুই গ্রামে যায়। এটি রোহিঙ্গাদের গ্রাম ছিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ভিটা ও জমিতে অন্তত অর্ধ শতাধিক ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। যেখানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনকে বাস করতে বরাদ্দ দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার সন্ধ্যার দিকে পুলিশ এসব ঘর ভেঙ্গে ফেলা শুরু করে। মঙ্গলবার সকালেও ওসব গাড়িতে করে পুলিশ দল বাকি ঘরগুলো ভেঙ্গে দেয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরতায় পালিয়ে এসে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। একই বছরের ২৩ নবেম্বর চাপের মুখে পড়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার শর্তে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে বিভিন্ন টালবাহনা শুরু করে মিয়ানমার। এ পর্যন্ত একটি পরিবারও তারা ফেরত নেয়নি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি করতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। সেনাবাহিনীর অত্যাচারে ও রাখাইন-রোহিঙ্গা জাতিগত দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ২০১৬ সালে ১০ অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলে মিয়ানমার থিনবাওগুয়ে গ্রামে শতাধিক ঘর নির্মাণ করে সেখানে বৌদ্ধ বসতি স্থাপন করেছিল। ওই গ্রামের প্রবেশমুখে একটি অস্থায়ী বৌদ্ধ মঠও স্থাপন করা হয়। টাঙ্গানো হয়েছিল বিশাল সাইনবোর্ড ও বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকা। গত বছরের অক্টোবর-নবেম্বর মাসে বানানো হয় অর্ধশত বৌদ্ধ বসতি। সেখানে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম ও মিয়ানমার সীমান্তের জিরো লাইনে বসবাসরত বান্দরবানের দুর্গম এলাকার কিছু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বসতির ব্যবস্থা করেছিল স্থানীয় প্রশাসন ও রাখাইন যুবকরা। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার শীঘ্রই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পক্ষে কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সচেতন মহল। এদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য শীঘ্রই মিয়ানমারে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে কিনা, ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে কিনা, তাদের চলাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কী অবস্থা হবে, সেটি দেখতে তিনি মিয়ানমারে যাবেন। সেখানে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়ে গেলে প্রত্যাবাসন দ্রুততার সঙ্গে শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র সচিব মঙ্গলবার গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশ কিছু নাম যাচাই-বাছাই হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, সহসাই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল। আমার মনে হয়, বাংলাদেশে এটি যত দ্রুততার সঙ্গে এগিয়েছে, অন্য দেশে তত দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়নি। রোহিঙ্গা ডাকাতের লাশ উদ্ধার ॥ টেকনাফে নিখোঁজ থাকার ১৯ দিন পর নাফনদী হতে এক রোহিঙ্গা ডাকাতের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ হ্নীলা আনোয়ার প্রজেক্ট সংলগ্ন পূর্বে নাফনদী হতে ভাসমান অবস্থায় নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের এমআরসি নং-৬৩০২৩, শেড ১০১৭/৫ কক্ষের বাসিন্দা মৃত উলা মিয়ার পুত্র ও শীর্ষ ডাকাত রশিদুল্লাহর লাশ উদ্ধার করে।
×