ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিসিক নির্বাচন

সিলেটে মাজার জিয়ারত করে বড় দুই দলীয় প্রার্থীর প্রচার শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ জুলাই ২০১৮

সিলেটে মাজার জিয়ারত করে বড় দুই দলীয় প্রার্থীর প্রচার শুরু

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ মঙ্গলবার প্রতীক হাতে পেয়ে হযরত শাহজালালের (র.) মাজার জিয়ারত করেন বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী। নৌকা হাতে নিয়ে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বললেন অতীতের মতো ভবিষ্যতেও আপনাদের খেদমত করে যেতে চাই। সিলেট নগরবাসীর জন্য একটি আদর্শ নগরী গড়ে তুলতে আপনাদের সমর্থন প্রয়োজন। আশা করছি সবাই সহযোগিতা করবেন। ধানের শীষ হাতে নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বললেন নগরীর উন্নয়নে আমি জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাব। সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র আপনাদের পাহারা দিতে হবে। কোন ধরনের অশুভ শক্তি চালবাজি করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। মঙ্গলবার উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। প্রার্থীরা কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে নির্বাচন কার্যালয়ের দিকে ছুটতে থাকেন। কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতিতে একাকার হয়ে যায় নির্বাচন অফিস প্রাঙ্গণ। পর্যায় ক্রমে ৭ মেয়র, ১৮৯ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দরগাহ এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরুর সময় তিনি সমবেত নাগরিকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরপরই কামরান ছুটে যান হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে। জিয়ারতে ছুটে যান বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হকও। জিয়ারত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন নির্বাচনী প্রচার। বেলা ২টার পর থেকে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে মাইক যোগে প্রচার শুরু হয়। বিকাল না গড়াতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার টানানো শুরু হয়ে যায়। প্রতীক নির্ধারিত থাকায় আগেভাগে তাদের পোস্টার ছেপে রেখে দেয়া হয়েছিল। সময়ের অপেক্ষায় প্রতীক পেয়েই সবার আগেই তাদের পোস্টার লাগানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। ‘ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের’ অমুক ভাইয়ের চিন্তাধারা নগরীর উন্নয়ন করা ইত্যাদি স্লোগান সহকারে নগরীর অলিগলিতেই চলছে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে শহরের নিত্যদিনের চিত্র অনেকটা পাল্টে যায়। প্রতীক ও প্রার্থী নিয়ে প্রচারের সঙ্গে যোগ দেন কর্মী-সমর্থকরা। এদিকে সকল প্রচেষ্টা বিফল হয়ে দল ও জোটের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপ কাঁধে নিয়েই বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হককে মাঠে নামতে হলো। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বাস গাড়ি ও জোটের বিদ্রোহী প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এখন আরিফের মুখোমুখি। মাঠে আরিফের ভোটের হিসাব অনেকটাই উলট-পালট হয়ে গেছে। দলের ও জোটের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মূলত তার ভোটের উপরেই ভাগ বসাবেন। বিগত নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে এই ভোট তার হিসাব মতে তার পক্ষেই ছিল। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে শীর্ষ নেতারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে দল জোটের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমন করতে পারেননি। প্রত্যাহারের শেষ দিন সোমবার বিকেল পর্যন্ত আরিফুল হক আশায় বুক বেঁধে ছিলেন কিন্তু বহিষ্কার খড়গ মাথায় নিয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম দলের নির্দেশ, অনুরোধ উপেক্ষা করে নিজের অনড় অবস্থানের কথা প্রকাশ করার পর দলের ভেতর হতাশার ছায়া নেমে আসে। স্থানীয় বিএনপির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বদরুজ্জামান সেলিমকে ভেতরে ভেতরে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আরিফুল হকের মেয়র পদে থাকার গত পাঁচ বছর তিনি নিজের স্বাধীন মতো চলাফেরা করেছেন। দলের কর্মী সমর্থকরা তার কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পায়নি। দলীয় কর্মকা-েও তার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল না। এই বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। এই নির্বাচনের কয়েক মাস পূর্ব থেকে দলের আরিফ বিরোধী অংশ ভেতরে ভেতরে একাট্টা হতে থাকে। আরিফুল হকের এই বিরূপ আচরণ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নালিশও দিয়েছেন। যে কারণে বিএনপির একাধিক প্রার্থী আরিফের বিরোধিতা করে নিজেরা মনোনয়ন লাভের প্রচেষ্টা চালান। অপরদিকে ভোটের মাঠে ভোট যোগানদানকারী জামায়াতে ইসলামী বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় দলের ভেতর জামায়াত প্রেমিক নেতারাও নীরব হয়ে গেছেন। বিএনপির বিদ্রোহী ভাবাপন্ন অংশটি সেলিমকে মাঠে নামিয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। আপাতদৃষ্টিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিমের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ না করলেও এই পক্ষটি আরিফুল হকের বিপক্ষে মাঠে কাজ করবে। এই মুহূর্তে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে অন্যতম চালিকা শক্তি ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রভাব দৃশ্যমান। ছাত্রদল নিজেদের অসন্তোষ নিয়ে মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। পদ বঞ্চিতরা সঙ্গত কারণেই প্রার্থী আরিফুল হকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছাত্রদলের দুই গ্রুপকে সন্তুষ্ট করে নিজের পক্ষে মাঠে নামানো কষ্টকর হবে আরিফুল হকের পক্ষে। সব মিলয়ে চতুর্মুখী চাপ মাথায় নিয়ে নির্বাচন সামল দিতে হচ্ছে আরিফুল হককে। মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের পর মেয়র প্রার্থী সাতজন প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মেয়র নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক ॥ সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান লড়বেন দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী লড়বেন ধানের শীষ প্রতীকে। নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম পেয়েছেন বাস গাড়ি প্রতীক, মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের পেয়েছেন টেবিল ঘড়ি, ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন পেয়েছেন হাতপাখা প্রতীক, সিপিবি-বাসদ মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর মই ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের পেয়েছেন হরিণ মার্কা। সকালে নির্বাচন অফিস থেকে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। শুরু হয়েছে প্রচারে। কামরানের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন ॥ সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাদ আসর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে মির্জাজাঙ্গালস্থ এ কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে কামরানের নির্বাচনী প্রচার শুরু ॥ বদর উদ্দিন কামরান প্রতীক পেয়েই ছুটে যান হযরত শাহজালালের (র.) দরগায়। জিয়ারত-মোনাজাত শেষে আনুষ্ঠানিক প্রচারের অংশ হিসেবে মাজার প্রাঙ্গণে উপস্থিত জনতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। মঙ্গলবার সকালে সিলেট জেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে কামরানের প্রতীক (নৌকা) ঘোষণা হওয়ার পর নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি ছুটে যান হযরত শাহজালাল (র.) দরগায়। তিনি নেতাদের নিয়ে প্রথমেই সেখানে জিয়ারত করেন। এ সময় নৌকার লিফলেট বিতরণ করা হয়। মাজার জিয়ারত আরিফের ॥ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত করেছেন বিএনপি মনোনীত আরিফুল হক চৌধুরী। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দরগাহ মাজারে যান আরিফ। এ সময় তার সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা ও কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। সেলিমকে বহিষ্কার বিএনপির ॥ সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলের স্বার্থবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত থাকার’ অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
×