ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অতি বৃষ্টিতে নয় জেলা বন্যা কবলিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ জুলাই ২০১৮

অতি বৃষ্টিতে নয় জেলা বন্যা কবলিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে দেশের নয়টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। মঙ্গলবার সচিবালয়ে দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলীর (এসওডি) হালনাগাদকৃত খসড়া এবং বন্যা পরিস্থিতির পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের সেই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়নি। নয়টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার ও নীলফামারী জেলা বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকি ৭ জেলা হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, সিলেট ও সুনামগঞ্জ। বন্যাকবলিত নয়টি জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এই জেলাগুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র করেছিলাম, সেখানে কিন্তু বেশি লোক আশ্রয় নেয়নি। একমাত্র মৌলভীবাজারেই তিন থেকে পাঁচদিন পানি ছিল। সেখানে আমি মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ দু দিন অবস্থান করে বন্যার পানি ও মানুষের কষ্ট সব দেখে ব্যবস্থা নিয়েছি। সেখানে ইনশাআল্লাহ কোন রকমের সমস্যা হয়নি। এ ছাড়া আরও ৩৫টি জেলায় ৭৫ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি। এই জেলাগুলোতে শুকনো খাবার এ জন্য দিয়েছি যে এই জায়গায় পানি হতে পারে। এ জন্য আগাম শুকনো খাবার রেখেছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেন, গত ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৬৪টি জেলায় এক কোটি ১২ লাখ টাকা ও সাড়ে ৫ হাজার টন জিআর চাল দেয়া হয়েছে। বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে তা মেরামত ও তৈরি করার জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের কাছে ৫০ হাজার বান্ডিল টিন ও ১৫ কোটি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। যাতে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে যেখানে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে সেগুলো মেরামত করা যায়। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে এক হাজার টন চাল ও ২ কোটি টাকা নগদ রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক প্রয়োজন মনে করলে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া প্রত্যেক জেলায় ১৫০-২০০ টন চাল মজুদ রয়েছে এবং ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতে রয়েছে। বন্যার সময় ও বন্যার পরবর্তী সময়ে যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। আগামীতে বড় ধরনের বন্যার কোন আশঙ্কা আছে কী না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনে হয় না। পাহাড় ধসের কারণে প্রাণহানি কেন রোধ করা যাচ্ছে না- এ বিষয়ে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ওখানকার লোকজন বাড়ি থেকে সরতে চায় না। দুর্যোগের সময় জেলা প্রশাসন মাইকিং করে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলে। অনেক সময় জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে এনে রাখাও হয়। এরপরও অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে পালিয়ে চলে যায়। এখন অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আমরা তাদের পুনর্বাসন করছি। আশা করি এই কষ্ট বেশিদিন থাকবে না। ঝড়-বৃষ্টির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম ২৫ থেকে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে তা চিহ্নিত করে আরেকটি নিরাপদ জায়গায় তাদের সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার পরিবার নিরাপদ জায়গায় চলে গেছে। বৃষ্টির জন্য মানুষ সরিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে আশা করি তাদের সরিয়ে নিতে সক্ষম হব। সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
×