ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা লিপি উন্নয়নে সুবিচার করেনি ইউনিকোড ॥ মোস্তাফা জব্বার

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১১ জুলাই ২০১৮

বাংলা লিপি উন্নয়নে সুবিচার করেনি ইউনিকোড ॥ মোস্তাফা জব্বার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা লিপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতামতকে অনেক ক্ষেত্রেই গৌণভাবে দেখেছে ইউনিকোড। ফলে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অক্ষর ব্যবহারে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হই। বাংলা ভাষার ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে বাংলা একাডেমি এবং আইসিএনএনের যৌথ উদ্যোগে বাংলা ভাষা অঞ্চলের জন্য বাংলা ইউনিকোড লিপি উন্নয়নে নিও ব্রাক্ষ্মী জেনারেশন প্যানেলের সঙ্গে বাংলাদেশের গবেষকদের দিনব্যাপী এক পারস্পরিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার, অধ্যাপক ড. উদয় নারায়ণ সিংহ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, ড. মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী, অধ্যাপক সৈয়দ শাহরিয়ার রহমান, সমীরণ গুপ্ত, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মোস্তফা কামাল, অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান খান, ড. স্বরোচিষ সরকার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়, গবেষক রাজীব চক্রবর্তী এবং থাইল্যান্ডের পিটিনান কুয়ারমর্নপাতানাসহ বিষয়সংশ্লিষ্ট গবেষকবৃন্দ। কর্মশালার ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নিও-ব্রাহ্মী জেনারেশন প্যানেলের কো-চেয়ার সমীরণ গুপ্ত। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশের বাঙালী বুকের রক্ত দিয়েছে। বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশেও আমাদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। মুনীর অপটিমার মাধ্যমে শহীদ মুনীর চৌধুরী বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়। বর্তমানে বাংলা লিপির উন্নয়নে কাজ করতে গেলে এই পটভূমিকে আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। ২০১০ সাল থেকে আমরা ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকে আমাদের ফন্টগুলোর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরি। কিন্তু আমরা যেভাবে বাংলা লিখি ইউনিকোড তা সমর্থন করে না। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ং, ঃ, ৎ, ্য’ লিখতে গেলে সামনে একটি ০ (চিহ্ন) ওঠে। এই ফন্টগুলো আমরা অন্যান্য অক্ষরের সঙ্গে যুক্ত না করলে লিখতে পারি না। ইউনিকোডে বাংলার বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় ফন্টও রয়েছে যা আমাদের কাজে লাগে না। অন্যদিকে, প্রয়োজনীয় অনেক ফ্রন্টই নেই। যেগুলো আমরা সংক্ষেপে সহজভাবে লিখতে পারি।’ তিনি বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকেই আমার ইউনিকোডে বাংলাভাষায় বাংলাদেশের মান প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করে আসছি। আরও বলেন, ‘ভারতের পে আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষালিপি ইউনিকোডে নিবন্ধিত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষাকে ইউনিকোড মানভুক্ত করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। বাংলা ভাষায় দাঁড়ি ও ডাবল দাঁড়ি ইউনিকোড মানে হিন্দী থেকে নিতে হয় তবুও বাংলাদেশ বিডিএস ১৫২০ : ২০১১ নামক কোডসেট প্রমিত করে এটি নিশ্চিত করেছিল যে, সব বর্ণকে ইউনিকোডভুক্ত করাটা কেবল কনসোর্টিয়ামের একটি সিদ্ধান্তের বিষয়। ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম তাদের ৬.০ সংস্করণেও এই দুটি বর্ণকে আলাদা করে কোডভুক্ত না করে হিন্দী থেকে ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। ২০১১ সালে ইউনিকোড ৫.২ সংস্করণে বাংলাদেশের ইউনিকোড মানের জন্য আবেদন করা হয়। এরপর ইউনিকোড ৫.২ সংস্করণ থেকে শুরু হওয়া ওয়েবে বাংলা বর্ণের স্বীকৃতিতে দাঁড়ি আর ডবল দাঁড়ি নিয়ে হিন্দী অক্ষর ব্যবহার করতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দেয় ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম। এর আগে ওয়েবে বাংলা অক্ষর ‘ড়, ঢ়, য়, ৎ’ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম শুধু দিল্লীর সাজেশনগুলোই গ্রহণ করে। আমাদের কোন প্রতিনিধি নেই সেখানে। ইউনিকোড বাংলাদেশের প্রতি সুবিচার করেনি। বাংলা ভাষা সম্পর্কে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়ার প্রয়াস প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৫২ সালে আমরা স্লোগান দিতাম ‘একটি হরফ একটি প্রাণ’। আমরা বাংলা ভাষা যেমন করে ব্যবহার করি সেভাবেই করব। কিন্তু বিকৃতি যেন না আস্ েআমরা চাই শিশুরা বাংলা ফন্টগুলোকে পরিষ্কারভাবে যেন চেনে। বাংলা হরফগুলোর যেন কোন বিকৃতি না হয় তা আমাদের নজর রাখতে হবে। ইউনিকোডে বাংলা লিখতে গেলে এখনও আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই জটিলতার নিরসন না করা হলে আমরা ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য এক চরম জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে রেখে যাব। এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভাষাবিজ্ঞানীসহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও মতামতকে বাংলা ইউনিকোড লিপি উন্নয়নে বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত ব্যবহারকে যুগোপযোগী এবং সহজসাধ্য করতে বেশ কিছু কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে আসছে। প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়ন ও প্রকাশ একাডেমির যুগান্তকারী কাজ বলে দুই বাংলাতেই স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ এবং যথাযথ করতে এই কর্মশালার আয়োজন করেছি। জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলা ভাষার এখন চরম দুর্দিন বিরাজ করছে। যদি আমাদের এটি ভাবতে হয় যে, আমরা যতই ডিজিটাল হচ্ছি বাংলা ভাষার দুর্দিন ততই বাড়ছে- তবে কেমন লাগবে একজন বাংলা ভাষাভাষী হিসেবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা ডিজিটাল যুগের বাসিন্দা থাকব বটে তবে বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার থাকবে না। এই কর্মশালা ইউনিকোড বাংলা লিপি উন্নয়ন এবং সার্বিকভাবে বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত ব্যবহারে আধুনিকায়ন ঘটাতে সহায়তা করবে।
×