ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে এখন আর ‘রাতকানা’ রোগ নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ জুলাই ২০১৮

দেশে এখন আর ‘রাতকানা’ রোগ নেই

সমুদ্র হক ॥ ‘রাতকানা’ রোগ দেশ থেকে প্রায় উধাও হয়ে গেছে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এখন আর উদাহরণ দেয়ার জন্য একজন রাতকানাকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। গত দশ বছরে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেন রাতকানা রোগকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। যা স্বাস্থ্য বিভাগের বড় সাফল্য। এ বছর জাতীয়ভাবে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেনের প্রাক্কালে মঙ্গলবার সকালে বগুড়ার সিভিল সার্জন শামসুল হক এই তথ্য জানিয়ে বললেন, দেশে বর্তমানে এক বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। তাদের অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব দূর করাসহ শিশু মৃত্যুর কারণের কয়েকটি রোগ থেকে রক্ষা করতে এক ডোজ করে নীল ও লাল রঙের ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এ বছর খাওয়ানো হবে আগামী ১৪ জুলাই। দেশে রাতকানা রোগ যেন আর কখনও না আসতে পারে সেজন্য প্রতিনিয়ত ফলোআপ করা হয়। এই রোগের বিজ্ঞান নাম ‘জেরোফথ্যালমিয়া’। বিটট্স স্পটও বলা হয়। যা চোখের ভেতরের এক ধরনের প্রতিবন্ধী রোগ। রাতকানা রোগের প্রধান উৎস অপুষ্টি ও ভিটামিন এ’র স্বল্পতা। যা শিশু জন্মের এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই এক লাখ ও দুই লাখ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিটের (আইইউ) উচ্চ শক্তির ক্যাপসুল খাইয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই ক্যাপসুল রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি, শারীরিক গঠনে উচ্চতা বৃদ্ধি, বুদ্ধি বৃত্তির (মেধা) বিকাশ ঘটাতে বড় ভূমিকা পালন করে। বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন আব্দুল ওয়াদুদ জানালেন, এই ক্যাপস্যুল শিশুদের সকল ধরনের মৃত্যু হার ২৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। বছরে দুইবারের এই ক্যাম্পেইনে শিশু মৃত্যু হার আরও কমে আসবে। খোঁজ খবর করে জানা যায়, বর্তমান প্রজন্মের মেধা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, শিশু বেলায় ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো। এর প্রমাণ মেলে ছোট্ট একটি উদাহারণে, যেমন- স্মার্ট ফোন, ট্যাব কম্পিউটার ব্যবহারে বড়রা যতটা জানে তার চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি জানে এই প্রজন্মের শিশুরা। তারা এই প্রযুক্তির সার্বিক দিক অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নখদর্পনে নিতে পারে। তাদের স্মৃতিশক্তিও বেশি। তারা মস্তিষ্কে যা ধারণ করে তা দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারে। তাদের দৃষ্টিও প্রখর। তবে স্মার্ট ফোন, ট্যাব ও কম্পিউটারের অধিক ব্যবহারে তাদের একটি অংশকে ছেলে বেলাতেই চশমা নিতে হচ্ছে। এরা যখন প্রবীণদের কাছে থেকে সেদিনের রাতকানা রোগের কথা শোনে তখন সতর্ক হয়। এই রাতকানা রোগ বর্তমান প্রজন্মের অজানা। নিকট অতীতে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দিনের আলোয় সবকিছু দেখতে পেলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গেই কোন কিছু দেখত না। তখন তাদের সাহায্যকারী লাগত। কখনও অন্ধদের মতো লাঠি নিয়ে চলত। রাতকানাদের কাছে রাত নেমে আসত অভিশপ্ত হয়ে। অতীতের অনেক লেখক তাদের গল্পে উপন্যাসে রাতকানাদের বর্ণনা দিয়েছেন। অনেক নাট্য ও চলচ্চিত্রকার রাতকানাদের নিয়ে নাটক লিখেছেন ও ছবি বানিয়েছেন। বিশেষ করে যে ছবিতে নতুুন জামাইয়ের ভূমিকায় রাতকানাকে দেখানো হয়েছে তা আপাত দৃষ্টিতে হাসির খোড়াক জুগিয়েছে। তবে এর গভীরে রাতকানাদের জীবনের যে বড় দুঃখ বোঝানো হয়েছে তা মর্মস্পর্শী। সেদিনের প্রতিবন্ধী রাতকানাদের জীবনের দুঃখ বেদনাগুলো পরিবার ও সমাজের মধ্যে প্রভাব ফেলত। ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেশ থেকে সেদিনের দুঃখ বেদনাগুলো দূর করে দিয়েছে।
×