ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘উই’ নিয়ে নিশা

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১০ জুলাই ২০১৮

‘উই’ নিয়ে  নিশা

ডিপ্রজন্ম : আপনার ছোটবেলার কথা দিয়েই শুরু করি... নিশা : আমার ছোটবেলা কেটেছে বনানীতে, আমার বাবা হাজী সাহাব উদ্দিন। সবকিছুই বাবার কাছে শেখা। সব জায়গায় বাবার সঙ্গী হতাম, কত জায়গায় যে গেছি বাবার হাত ধরে। বনানীতেই স্কুলের গ-ি পেরিয়ে ভর্তি হলাম আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে, এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বনানীর স্থানীয় হওয়ার সুবাদে দারুণ কাটছিল আমার দিন। বাবার স্নেহ, বড় ভাইদের আদর আমাকে, আমার শৈশবকে অনেক রঙিন করেছিল। ডিপ্রজন্ম : ব্যবসায়ী পরিবার। কীভাবে এরপরের গল্পটা শুরু হলো? নিশা : ঠিক বলেছেন, খুব দ্রুত জীবনটা ওদিকেই গেল। উচ্চশিক্ষা শুরুর দু-এক বছরের মাথায় বাবার ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যবসা দেখতে শুরু করলাম পুরোদমে, কাজকে করে নিতে লাগলাম আপন করে। এরপর এভাবেই চলছিল কিছুদিন। তখনও স্নাতক শেষ হয়নি। ২০০৬-এর শেষে দানা বাঁধে এক রোগ, যা আমাকে ভুগিয়েছে চার বছর। সময়টি অনেক খারাপ ছিল আমার জন্য, আমাকে মানসিকভাবে খুব দুর্বল করে দিচ্ছিল সময়টা। ডিপ্রজন্ম : পরিবার সম্পর্কে বলুন। নিশা : বিয়ে করেছি নিজের পছন্দে, স্বামী ব্যবসায়ী। বিয়েতে উকিল বাবা ছিলেন আমাদের রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদ। স্বামী, ছেলে আয়ানকে নিয়েই সুখের সংসার আমার। ডিপ্রজন্ম : আপনার একটি আইটি ফার্ম আছে, সেটা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম। নিশা : আমি বর্তমানে ই-ক্যাবের ইসির জয়েন্ট সেক্রেটারি। আমার গেমিংয়ের প্রতি নেশা ছিল প্রচুর, যেটা বলেছিলাম, দেশের বাইরে ট্রিটমেন্টে যাওয়ার আগেই, বাংলাদেশে যৌথভাবে একটা গেমিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ! যখন ফিরে আসলাম, প্রতিষ্ঠানটি নানা কারণে এগোলো না। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। হাল ছাড়িনি, নিজের আইটি নলেজ না থাকলেও গেমিং ইন্ডাস্ট্রির প্রতি প্রচ্ছন্ন একটা ভালবাসা ছিলই। নর্থ সাউথের বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলাম ‘রিভারি কর্পোরেশন’। বনানীতে বর্তমানে ১৬ জনের টিম কাজ করছে গেম ডেভেলপমেন্ট, এ্যাপসসহ বিভিন্ন কাজে। এর মাঝেই আরেকটি বড় ব্যাপার ঘটিয়েছিলাম। মহাখালীতে সম্পূর্ণ নিজের তত্ত্বাবধানে গার্মেন্টস চালিয়েছি নিজে কিনে, পরে অবশ্য সময় স্বল্পতা, ই-ক্যাব নিয়ে ব্যস্ততায় গার্মেন্টসটি বন্ধ করে দেই। বর্তমানে রিভারি কর্পোরেশন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গেমস আমরা এনেছি, আমাদের কাজগুলো নিয়মিত ডেভেলপমেন্টের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি। ডিপ্রজন্ম : ই-ক্যাব এবং উই সম্পর্কে আপনার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জানান পাঠকদের জন্য। নিশা : আগে থেকেই বেসিসের সদস্য ছিলাম। ই-ক্যাবের মূল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হলাম এরপর। কাজ করলাম এক বছর ধরে, নানা গুরুত্বপূর্র্ণ আয়োজন অনেকটা একলাই সফল করে তুলেছি নিজের সাংগঠনিক ক্ষমতা দিয়ে। ফলাফলও দ্রুত এসেছে, ই-ক্যাবের ইসিতে আসি। বর্তমানে জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছি। এর মধ্যেই এদেশীয় মেয়েদের ই-কমার্সে সাফল্য দেখে প্রতিষ্ঠা করলাম ‘ডড়সবহ ধহফ ঊ-ঈড়সসবৎপব ঋড়ৎঁস- বি’ যেখান থেকে আমি নারী উদ্যোক্তাদের নানাভাবে প্রস্তুত করছি ব্যবসায় দাঁড় করাতে। সাফল্য নিয়ে এসেছেন বড় একটি। উই-এর সদস্যদের দাবি ছিল, তারা বছরজুড়ে চলা মেলায় স্টল দিতে পারেন না অনেক বুকিং মানি হওয়ায়। কথাটা শুনেই উদ্যোগ নিলাম, ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট অভিনেত্রী শমী কায়সার বললেন, ‘নিশা তুমি কর। আমি আছি।’ মাত্র ১৫ দিনের মাথায় খুব বড় আঙ্গিকে নামিয়ে দিলাম মেলা, চারদিনের মেলায় দর্শনার্থী আনার জন্য কোনদিন- মেকআপ আর্টিস্ট ফ্রি, কোনদিন মেহেদী করানো ফ্রি, একদিন বাবার নামে স্মৃতিবৃত্তির আয়োজন করলাম, যার কারণে দর্শনার্থীও প্রচুর আসে। ডিপ্রজন্ম : আপনার গল্পটা অনেক নারীর জন্য অনুপ্রেরণার। এতকিছু সামলাচ্ছেন যেভাবে- নিশা : আসলে পরিবার, ব্যবসা, ই-ক্যাব সবকিছু মিলিয়েই এগিয়ে চলছি। আমি দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জীবনমান উন্নয়নে সারাজীবন কাজ করে যাব। আমার ভাই-বোনদের সমর্থন পেয়ে আসছি প্রথম থেকেই। প্রত্যেকেই আমার কাজের সহযোগী, আমি দোয়া চাই সবার। ডিপ্রজন্ম : তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ। নিশা : পরিশ্রম আর স্বপ্ন দেখার কোন বিকল্প নেই। আমরা সবাই মিলেই বাংলাদেশÑ এগিয়ে যাই চলো।
×