ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাধা পেরিয়ে বিয়ার গ্রিলস আকিল জামান ইনু

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১০ জুলাই ২০১৮

বাধা পেরিয়ে বিয়ার গ্রিলস আকিল জামান ইনু

অনায়াসে সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ পাড়ি দেয়া, বরফ আবৃত পাহাড় বেয়ে ওঠা, মরুভূমি, সমুদ্রতল কিংবা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার কথা ভাবলেই যে নামটি ভেসে ওঠে মনের পর্দায় তিনি এডওয়ার্ড মাইকেল ‘বিয়ার’ গ্রিলস। জন্ম ৭ জুন, ১৯৭৪। পিতা কনজারভেটিভ পার্টির প্রয়াত রাজনীতিবিদ স্যার মাইকেল গ্রিলস। তার নামের সঙ্গে ‘বিয়ার’ শব্দটি যোগ করেন বড় বিান পেশায় টেনিস কোচ লারা ফাউসেট। চার বছর বয়সে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডোনাঘাডি থেকে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন ক্যামব্রিজ অঞ্চলে। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্নাতক ‘বিয়ার’ পড়াশোনা করেছেন ইটন হাউস, লুডগ্রুভ স্কুল, ইটন কলেজে। ইটন কলেজে ছাত্রাবস্থায় সেখানকার প্রথম পর্বতারোহণ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। পিতার কাছ থেকে অল্প বয়সেই শিখেছেন নৌচালনা, পবর্তারোহণ। কৈশোরেই দক্ষ হয়ে ওঠেন স্কাই ডাইভিং ও কারাতেতে। চর্চা করেছেন যোগ ও নিনজৎসু। ক্লাব স্কাউট হন আট বছর বয়সে। ইংরেজী, স্প্যানিশ, ফরাসী ভাষায় পারদর্শী বিয়ার গ্রিলস ২০০০ সালে বিয়ে করেন সারা গ্রিলসকে। তিন পুত্র জেস, মার্মাডিউক ও হাকলবেরি। শিক্ষাজীবন শেষে গ্রিলস যোগ দেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। স্পেশাল এয়ার সার্ভিসে থাকাকালীন ১৯৯৬-এ জাম্বিয়ায় প্যারাসুট দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিরতরে হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে পড়েন। মানব সেবায় অবদান রাখার জন্য সেনাবাহিনী গ্রিলসকে ২০০৪ সালে সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার পদে পদোন্নতি দেয়। আট বছর বয়সে পিতার দেয়া উপহারে এভারেস্টের ছবি দেখে তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন এভারেস্ট জয়ের। প্যারাসুট দুর্ঘটনার আঠারো মাসের মাথায় ২৩ বছর বয়সে ওঠেন এভারেস্ট চূড়ায়। তখন পর্যন্ত সেটি ছিল গিনেস রেকর্ড যদিও ১৯ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করে রব গল্টলেট সে রেকর্ড ভেঙ্গে দেন। টেলিভিশনে তার প্রথম উপস্থিতি ডিওডোরেন্টের একটি বিজ্ঞাপনে। অংশ নিয়েছেন সেনাবাহিনীর মাদকবিরোধী টিভি ক্যাম্পেনে। এ ছাড়াও হ্যারডসের বিজ্ঞাপন, অপরাহ উইনফ্রে শো, ফ্রাইডে নাইট উইথ জোনাথন রোজের মতো অনুষ্ঠানে তার সাবলীল উপস্থিতি দৃষ্টি কেড়েছে। ইন্টারনেটে পাঁচ পর্বের এক সিরিজে শিখিয়েছেন নগর জীবনে টিকে থাকার কৌশল। ওয়ার্নার ব্রাদার্স তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটানস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। গ্রিলসের প্রথম বই ফেসিং আপ যেটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয় দ্য কিড হু ক্লাইম্বড এভারেস্ট নামে উঠে আসে যুক্তরাজ্যে সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকায়। এ ছাড়াও দ্য ফ্রোজেন ওশেন; বর্ন সারভাইভার : বিয়ার গ্রিলস, মিশন সারভাইভাল সিরিজসহ প্রকাশিত হয়েছে আরও কিছু বই। ২০১১তে প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনী নাম মাড, সোয়েট এ্যান্ড টিয়ারস : দ্য অটোবায়োগ্রাফি। যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর-এ বর্ন সারভাইভার বিয়ার গ্রিলস প্রোগ্রামটি সাড়া ফেলে পৃথিবীজুড়ে। অনুষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারিত হয় ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড নামে। এই অনুষ্ঠানে গ্রিলস দেখান কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হয়। অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায় সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গে আরোহণ করতে, হেলিকল্টার থেকে প্যারাসুট জাম্প, প্যারাগ্লাইডিং, গভীর অরণ্যে আগুনের মধ্য দিয়ে দৌড়াতে। টিকে থাকার প্রয়োজনে সাপ, পোকা-মাকড়, কীট পতঙ্গ, সাপের খোলসে জমিয়ে রাখা প্র¯্রাব, হরিণের বিষ্টা, হাতির মল নিঃসৃত তরল পান করতে। কখনও লিপ্ত কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধে। বাঁশের ভেলা নিয়ে সাগর পাড়ি দেয়া, সাগরের তলদেশে কোন প্রকার যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই মাছসহ জলজ প্রাণী শিকার করে খেতে দেখা যায় তাকে। অকুতোভয়, দুর্দমনীয় মানসিকাতা নিয়ে তিনি দর্শকদের শিখিয়ে চলছেন কী করে ভয়কে জয় করে প্রতিকূলতার মাঝেও প্রকৃতিকে ব্যবহার করে টিকে থাকতে হয়। সারাবিশ্বে তার প্রতিটি পর্বে গড়ে দর্শক সংখ্যা ছিল ১.২ বিলিয়ন। ছোটবেলায় একটি ঘটনা বদলে দেয় বিয়ার গ্রিলসের জীবন। প্রচ- শীতে বাবার সঙ্গে বির হয়েছিলেন ঘোড়ায় চড়ে। গতির কারণে এক সময় ছিটকে পড়েন ঘোড়া থেকে। নিজেকে আবিষ্কার করেন ঠা-া নরম বালুতে। বাবা তাকে হাত ধরে টেনে তুলে বলেন, ‘তুমি কতটা ভাল অশ্বারোহী সেটা বড় কথা নয় বরং পড়ে গিয়ে তুমি কতবার ঘোড়ার পিঠে উঠে বসেছ সেটাই বড় কথা।’ কথাটা জীবনের বেলাতেও সত্য। সেই থেকে গ্রিলস হারার আগে হেরে যাওয়াতে বিশ্বাস করেন না। তার কাছে প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করে টিকে থাকার- অন্যদেরও তিনি সে বার্তাই দিতে চান।
×