ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ড যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ক্রোয়েশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১০ জুলাই ২০১৮

ইংল্যান্ড যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ক্রোয়েশিয়া

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েই সেমিফাইনাল খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া। ২০ বছর পর আবার সেরা চারে উঠে এসেছে তারা। বুধবার তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিধর ইংল্যান্ড। কোয়ার্টারে এবারের বিশ্বকাপের আরেক চমক স্বাগতিক রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে স্মরণীয় এ অর্জনে নাম লিখিয়েছে ক্রোয়েটরা। ইংলিশদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকেট পেতে আত্মবিশ্বসী কোচ জøাতিকো দালিচ। সুখবর, শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পেরেছেন রাশিয়া-বধের অন্যতম নায়ক দোমাগোজ ভিদা। সেদিন জয়ের পর ‘গ্লোরি টু ইউক্রেন’ বলে চিৎকার করেন তিনি। পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ফিফার ডিসিপ্লিনারি কামিটির নজরে পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হতে হয়নি। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্বপ্নের সেমিতে আরও এক চমক দেখানোর অপেক্ষায় ক্রোয়েশিয়া। অপেক্ষায় গোটা ফুটবলবিশ্ব। এবার দুই দশক আগের সেই সাফল্যকে ছাড়িয়ে যেতে চান দালিচ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ চ্যালেঞ্জ তার দল জিততে সামর্থ্য বলে জানান তিনি। গেল দুই ম্যাচের আত্মবিশ্বাসেই নিজের দলকে এগিয়ে রাখছেন ক্রোয়েশিয়া কোচ, ‘ইংল্যান্ডকে হারানোর মতো যথেষ্ট শক্তি আছে কিনা? অবশ্যই। সবাই দেখেছে আমরা কীভাবে সেমিফাইনালে উঠেছি। আমাদের যাত্রা সহজ ছিল না। গ্রুপ পর্ব থেকেই সেরা দলগুলোর বিপক্ষে লড়তে হয়েছে আমাদের। সর্বশেষ দুটি ম্যাচে আমরা ইংল্যান্ডের চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু সেরা পারফর্ম করে জয় ছিনিয়ে এনেছি। এতে প্রমাণ হয়, আমরা থামতে চাই না। অবশ্যই আমরা এগিয়ে যাব। ইংল্যান্ড অবশ্যই ভাল দল। তারা এতটা চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়লেও সুইডেনের বিপক্ষে ২ গোল দিয়ে জিতেছে। তারা তরুণ, গতিময় ও জীবন্ত একটা দল। ওদের সঙ্গে জেতা অবশ্যই কঠিন। কিন্তু এ বিশ্বকাপে ফেবারিট বলে কিছু নেই। সব ম্যাচই ৫০-৫০। তাই আমাদেরও সুযোগ আছে।’ দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্ক ও কোয়ার্টারে টানা দুটি ম্যাচে টাইব্রেকারে জয় সত্যি সহজ নয়। সেটি উল্লেখ করে ক্রোয়েট কোচ দলিচ আরও বলেন, ‘এটা দারুণ ম্যাচ ছিল। এখন খুব হাল্কা অনুভব করছি। টানা দুটি পেনাল্টিতে গড়ানো ম্যাচে স্নায়ু স্বাভাবিক রাখা কঠিন। কিন্তু ছেলেরা দারুণ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তারা দেখিয়েছে যে কোন অবস্থার জন্য ওরা প্রস্তুত। সামনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই। গেল দুই ম্যাচে আমাদের সাফল্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরও ভাল কিছুর জন্য তৈরি রাখছে। এবার সবাই দেখেছে ভাগ্য আমাদের সঙ্গে আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও আমরা ভাগ্যের সহায়তা পাব। একই সঙ্গে ছেলেরা যেমন খেলছে তাতে ফাইনালে উঠা অসম্ভব নয়। আমরা রাশিয়ার বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে পিছিয়ে পড়েছিলাম কিন্তু আবার ম্যাচে ফিরেছি। ডেনমার্কের বিপক্ষেও এমন হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়, আমরা পিছিয়ে পড়েও ফিরতে পারি।’ টানা দুই ভাগ্য পরীক্ষায় জয়ের পর দল নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী কোচ জøাতকো দালিচ। ভাগ্য সহায় বলে এবারের বিশ্বকাপে তাদের জন্য ভাল কিছু অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন তিনি। ক্রোয়েশিয়া কোচ বলেন, ‘পুরো ম্যাচে আমি নিজেকে সংযত রেখেছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের শেষদিকে রাশিয়া যখন গোল দিল তখন থেকেই মনে ভয় ধরে যায়। দ্বিতীয় রাউন্ডের পর এ ম্যাচটিও পেনাল্টিতে গড়াক তা আমি চাইনি। কারণ একটি ম্যাচে আপনি ভাগ্যের সহায় পাবেন। কিন্তু আরও একটি ম্যাচে সেটা অসম্ভব। কিন্তু আমাদের ভাগ্য সত্যিই ভাল ছিল। রাকিটিচের শেষ শট পোস্টে ঢোকা অবধি আমি বিশ্বাস রাখতে পারছিলাম না যে জিতব। রাকিটিচ গোল করার পর নিজেদের ভাগ্যকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। অবশ্যই আমরা এ ম্যাচে ভাগ্যবান যে জিততে পেরেছি। এছাড়া এ দল নিয়ে প্রত্যাশা অনেক ছিল। অল্পতে তাই চোখের পানি ফেলার কিছু নেই। কিন্তু আমরা এখন ২০ বছর পর সেমিফাইনালে। এটা বিশাল উপলক্ষ। আবেগতাড়িত হওয়ার মতো উপলক্ষ।’ চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলছে ক্রোয়েশিয়া। লুকা মদরিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মানদুকিচদের অসাধারণ পারফর্মেন্সে বড় বড় সব দলকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে এসেছে তারা। এমতাবস্থায় ফাইনালে খেলতে না পারলে সেটে আরও বেশি কষ্টের হবে বলেও মনে করেন দালিচ, ‘এখন ফাইনালে পৌঁছতে না পারলে সেটা হবে নিদারুণ কষ্টের ব্যাপার। ছেলেরা যেভাবে মাঠে লড়েছে, নিজেদের সেরাটা দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে সেজন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। আমরা গর্বিত। দুর্দান্ত টিম-স্পিরিট নিয়ে এখন যেকোন কিছুই সম্ভব। আমরা ইংল্যান্ডের জন্য প্রস্তুত।’
×