ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়তে চান কোচ মার্টিনেজ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১০ জুলাই ২০১৮

ইতিহাস গড়তে চান কোচ মার্টিনেজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ৩২ বছর আগের সাফল্য পুনরাবৃত্তি হয়েছে। শুধুমাত্র ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে পেরেছিল বেলজিয়াম। সেটিই আজ পর্যন্ত সেরা নৈপুণ্য দেশটির। তবে গত বিশ্বকাপ থেকেই যে দলটিকে দেশের ফুটবল ইতিহাসে ‘সোনালি প্রজন্ম’ বলা হচ্ছিল, তারাই এবার সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে। এই সোনালি প্রজন্মের সাফল্যটা এসেছে কোচ রবার্তো মার্টিনেজের হাত ধরে। শিষ্যদের নিয়ে দারুণ সন্তুষ্ট এ কোচ এখন আরও বড় কিছুর লক্ষ্য নিয়েই এগুচ্ছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে কৌশলী ও হট ফেবারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে দেয়ার ম্যাচে তার কৌশলগত ছক এখন দারুণ প্রশংসিত। চলমান রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ চারে ফ্রান্সের বিপক্ষে জিতলেই প্রথমবারের মতো স্বপ্নের ফাইনালে উঠবে তারা। রচিত হবে নতুন ইতিহাস। এখন সেই ছকই কষছেন মার্টিনেজ। মার্টিনেজ কি স্বপ্ন পূরণে অবদান রাখতে পারবেন? বিশ্বকাপ শুরুর আগেও এ কোচকে নিয়ে খোদ বেলজিয়ামে ছিল সংশয়। অনেক ফুটবলবোদ্ধাই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তার সাফল্য নিয়ে। যদিও বেলজিয়াম দলটিকে নিয়ে কোন ধরনের সংশয় ছিল না। কারণ, সামর্থ্য ও শক্তিমত্তার বিচার করলে বর্তমান বিশ্বের অনেক দলের চেয়ে বহুদূর এগিয়ে গেছে বেলজিকরা। বিশেষ করে, দলের কয়েকজন খেলোয়াড় বর্তমান ফুটবল বিশ্বে নিজেদের অবস্থানটাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যেতে পেরেছেন। এর মধ্যে মারুয়ান ফেলাইনি, কেভিন ডি ব্রুইন, রোমেলু লুকাকু, এডেন হ্যাজার্ডরা এখন অন্যতম তারকা খেলোয়াড় যেকোন পর্যায়ের ফুটবলে। নিজেদের যোগ্যতা তারা প্রমাণ করেছেন দুর্দান্ত ফুটবল প্রদর্শনীর মাধ্যমে। আর সে কারণেই চলমান রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের কঠিনতম লড়াইয়ে জয় তুলে নিতে পেরেছে বেলজিয়াম। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ২-১ গোলে পরাজিত করে অন্যতম হট ফেবারিট ব্রাজিলকে। সেই ম্যাচে মার্টিনেজের খেলার ছক দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। ম্যাচে আধিপত্য ধরে রাখলেও বেলজিকরা জিততে দেয়নি ব্রাজিলিয়ানদের। যদিও এ ম্যাচে গ্রুপ পর্বের দুর্ধর্ষ বেলজিয়ামকে দেখা যায়নি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর জন্যই ইতিহাস রচিত হয়। বেলজিয়ামের ফুটবলে এখন সেই ইতিহাস রচিত হয়ে গেছে সোনালি প্রজন্মের বীর সেনানীদের মাধ্যমে। পুরনো সাফল্য ছোঁয়া হয়ে গেছে, এবার সেটাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বেলজিয়ামের। কারণ, বিশ্বকাপের ইতিহাসে ব্রাজিলকে হারানোই কোচ মার্টিনেজ এখন পর্যন্ত সেরা সাফল্য বলেই মনে করছেন। সেটা মনে করছেন এমনকি বিশ্বের সব ফুটবলবোদ্ধারাই। মার্টিনেজের পূর্বসূরী মার্ক উইলমটস ব্যর্থ হয়েছিলেন ৪ বছর আগে। ব্রাজিলে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হেরে বিদায় নিয়েছিল বেলজিয়াম। এছাড়া ২০১৬ সালের ইউরোতেও বিদায় নিয়েছিল একই ভাবে। অবশেষে সোনালি প্রজন্মের পায়ে ফলেছে স্বর্ণালি সাফল্য। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে ধ্বংসের মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিল এই বেলজিয়ামই। ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে জাপানের কাছে হেরে বিদায় নেয়ার শঙ্কাটা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ৩ গোল করে জয় তুলে নেয় তারা, যা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে বিরল ঘটনা। আর ব্রাজিলের বিপক্ষে কৌশলে একেবারেই পরিবর্তন আনেন মার্টিনেজ। সেই ছকে ফেলাইনি ভিন্ন দায়িত্বে অবতীর্ণ হন। তিনি রক্ষণভাগের দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে ওঠেন এবং ব্রাজিলিয়ানদের কড়া আক্রমণগুলো রুখে দেন। এ বিষয়টি বারবারই আলোচনায় উঠে আসছে। মার্টিনেজ বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল যে ব্রাজিলের মতো দলের বিপক্ষে খেলার জন্য বিকল্প কোন ছকই আসলে বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে। সে কারণে যেভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম সেটা ছিল ভিন্নধর্মী এবং সাফল্য আসার ক্ষেত্রে খুবই কঠিন একটি কৌশল। আর ছেলেরা যেভাবে এটাকে অন্তরে নিয়েছিল সেটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার ছিল।’ অথচ মার্টিনেজ একজন স্প্যানিশ হওয়াতে তার সাফল্য পাওয়া নিয়ে ছিল দ্বিধাবিভক্তি। তবে কথা বলেননি তিনি, দেখিয়েছেন কাজে। এ বিষয়ে মার্টিনেজ বলেন, ‘বেলজিয়ামের সংস্কৃতি এবং বৈচিত্র্যময়তা নিয়ে আমার কোন ধরনের ধারণাই ছিল না। কিন্তু আমি যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিল সবই ফুটবলকে ভিত্তি করে। আমার মধ্যে অন্য কোন বিষয় কাজ করেনি। মঙ্গলবারের সেমিফাইনালে আরেকবার মার্টিনেজের দিকে তাকিয়ে থাকবে বেলজিয়াম। সে ম্যাচে তাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে সহকারী কোচ থিয়েরি অঁরি। ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসে সর্বাধিক গোলদাতা অবশ্যই ফরাসী ফুটবলের দুর্বলতাগুলো দেখিয়ে দেবেন শিষ্যদের। এখন শুধু স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে মাঠে নেমে সব পরিকল্পনা কার্যকর করাটাই বাকি।
×