ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্স-বেলজিয়াম

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১০ জুলাই ২০১৮

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্স-বেলজিয়াম

জিএম মোস্তফা ॥ রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের লড়াই শুরু আজ। ফাইনালে ওঠার মহারণে প্রথম সেমিফাইনাল খেলতে মাঠে নামবে ফ্রান্স-বেলজিয়াম। সেন্ট পিটার্সবার্গে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় একে অপরের মুখোমুখি হবে এই দুই দল। শেষ চারের মহারণ জিতে কে যাচ্ছে ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে? ভক্ত-অনুরাগীদের সেই উত্তরটাও মিলে যাবে আজ। রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই চমকপ্রদ পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছে ফ্রান্স-বেলজিয়াম। জার্মানি, স্পেন, আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিলের গায়েও ফেবারিটের ‘ট্যাগ’ লাগানো ছিল বিশ্বকাপের একুশতম আসরে। কিন্তু গতিশীল ফুটবল খেলে বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে ফ্রান্স-বেলজিয়াম। এবারের বিশ্বকাপে এই দুই দলই ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধতায় ডুবাতে সক্ষম হয়েছে। যে কারণেই এবারের বিশ্বকাপের এই সেমিফাইনালকেই ‘ফাইনাল’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন ফুটবলবোদ্ধাদের অনেকেই। ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার এই টুর্নামেন্টে এবারসহ ১৩ বার অংশ নিয়েছে বেলজিয়াম। তাদের সর্বোচ্চ অর্জন সেমিফাইনাল। তাও আবার ১৯৮৬ বিশ্বকাপে! প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় পর আবারও স্বপ্নের বিশ্বকাপের শেষ চারের টিকেট কাটল বেলজিকরা। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের সবকটিতেই জয় পেয়েছে রবার্তো মার্টিনেজের দল। যেখানে পানামা, তিউনিসিয়া এমনকি ইংল্যান্ডের মতো দলকেও পরাজয়ের স্বাদ উপহার দিয়েছেন তারা। শেষ ষোলোতে এশিয়ার শেষ প্রতিনিধি জাপানের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ৩-২ গোলে জয়ের নজির গড়ে হ্যাজার্ড-লুকাকুরা। তবে বেলজিয়ামকে কঠিন পরীক্ষাটা দিতে হয় কোয়ার্টার ফাইনালে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ব্রাজিল। কিন্তু পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষেও ২-১ গোলে জিতে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় বেলজিয়াম। দলে অসাধারণ মাপের ফুটবলার রয়েছে বেলজিয়ামের। এডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুইন কিংবা রোমেলু লুকাকু কিংবা ফেলাইনিরা টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন দারুণভাবে। আজও শেষ চারে ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচেও তাই নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেয়ার চেষ্টা করবেন তারা। এদিকে ১৯৯৮ বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল ফ্রান্স। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই তাদের সেরা সাফল্য। ২০০৬ সালেও সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল বিশ্বকাপ জয়ের। কিন্তু সেবার ইতালির কাছে জয়রথ থেমে যায় তাদের। তবে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই অসাধারণ পারফর্ম করেছে ফরাসীরা। গ্রুপ পর্বে কোন ম্যাচ না হারা দিদিয়ের দেশমের দল দ্বিতীয় রাউন্ডেই চমক দিয়েছে গোটা ফুটবল দুনিয়াকে। যেখানে বর্তমান ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে দেন কিলিয়ান এমবাপে-এ্যান্টনি গ্রিজম্যানরা। শেষ ষোলোর সেই ম্যাচে ফ্রান্স ৪-৩ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কাটে। শেষ আটেও ফরাসী সৌরভ ছড়িয়ে ভারানে-গ্রিজম্যানরা ২-০ গোলে হারায় লাতিন আমেরিকার আরেক শক্তিশালী দল উরুগুয়েকে। তবে ফ্রান্সের অগ্নিপরীক্ষা আজ বেলজিয়ামের বিপক্ষেই। ম্যাচটা যে চ্যালেঞ্জিং হবে সেটা শিষ্যদের আগেই মনে করিয়ে দিলেন ফ্রান্সের অভিজ্ঞ কোচ দিদিয়ের দেশম। এ প্রসঙ্গে ম্যাচের আগের দিন তিনি বলেন, ‘বেলজিয়ামের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচটি বেশি চ্যালেঞ্জিং। দারুণ সব ম্যাচ জিতে শেষ চারে এসেছে তারা। এখানেও চমক দেখাতে মুখিয়ে আছে বেলজিয়াম। কিন্তু আমরা তাদের চমকের শিকার হতে চাই না। আমরা বেশ সতর্ক অবস্থানে। বেলজিয়ামকে কোন ধরনের সুযোগ দিতে রাজি নই আমরা। শুরুতেই তাদের চাপে ফেলাই হবে আসল উপায়।’ দেশম এখানেই থেমে থাকেননি। সহজ জয় হলেও উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে দল অনেক ভুল করেছে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে দেশম বলেন, ‘এক ভুল বার-বার করা যাবে না। বিশেষ করে সেমিফাইনালে যখন প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম। যারা ইতোমধ্যে নিজেদের যোগ্যতা ও সামর্থ্য দেখিয়েছে। ম্যাচ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা সত্যিই দুর্দান্ত। কোন পরিস্থিতি কিভাবে সামলাতে হয় শেষ দু’ম্যাচে তারা তা করে দেখিয়েছে। তাই দলের সবাইকে ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছি, আর বুঝাচ্ছি- বেলজিয়ামের বিপক্ষে ওই ভুল করা যাবে না।’ পরিসংখ্যানের আলোতে দেখা যায় ইউরোপের দুই প্রতিবেশী বেলজিয়াম ও ফ্রান্স মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাসটা যথেষ্টই দীর্ঘ। ৭৩ বার দেখা হয়েছে দুই দলের। যেখানে ফরাসীদের জয় ২৪টি আর বেলজিয়ানদের ৩০টি। বাকি ১৯ ম্যাচ হয়েছে ড্র। ২৩ ম্যাচ অপরাজিত রবার্তো মার্টিনেজের বেলজিয়াম। ২০১৬ সালে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের বিপক্ষে শেষ কোন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হেরেছিল তারা। এখন পর্যন্ত চলতি আসরের দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪ গোল করেছে বেলজিয়াম। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছে ফ্রান্স। অবশ্য শেষ চারে আগের পাঁচ লড়াইয়ের তিনটিতেই হেরেছে ফরাসীরা। ১৯৯৮ সালে ক্রোয়েশিয়া ও ২০০৬ সালে পর্তুগালকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের পাঁচ ম্যাচে মাত্র চারটি গোল হজম করেছে ফ্রান্স।
×