ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর সিটির জন্য ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ জুলাই ২০১৮

গাজীপুর সিটির জন্য ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প

আনোয়ার রোজেন ॥ নগরপিতা নির্বাচিত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) জন্য ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প পেতে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থীকে দুই লাখ ভোটেরও বেশি ব্যবধানে হারানো জাহাঙ্গীরের জন্য এটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘উপহার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, গত বছরের জুলাই মাসে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়নি। এক বছর পর অবশেষে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জিসিসি আওতাভুক্ত বিভিন্ন নতুন এলাকার অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। এসব এলাকায় নতুন পাকা সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যমান সড়ক প্রশস্ত করা হবে। এতে যানজট কমে আসবে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন করে ড্রেন নির্মাণ এবং বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে। ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (রাস্তা ও ড্রেন)’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় উপস্থাপনের কথা রয়েছে। অনুমোদন পেলে জিসিসি কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জিসিসির একটি সূত্র বলছে, ৫৭ ওয়ার্ড ও ৩২৯ বর্গকিলোমিটার বিস্তীর্ণ জিসিসির ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ২৬ হাজার। সীমানা আয়তনে জিসিসি দেশের সবচেয়ে বড় সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রতি আগের মেয়র বিএনপির এম এ মান্নানের অসহযোগিতামূলক মনোভাবে সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সূত্র বলছে, বিভিন্ন মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামি হওয়ায় এমএ মান্নান তার মেয়াদকালে কয়েকবার বরখাস্ত হয়েছেন। বরখাস্ত হওয়ার আগে নির্বাচিত মেয়র হিসেব তিনি ১৮ মাস নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু এ সময়ে তেমন কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। বর্তমান প্রকল্পটি পাস হলে সিটি কর্পোরেশনের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসন হবে। জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী তহবিল (জিওবি অনুদান) হতে দেয়া হবে ৫২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ১৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল হতে খরচ করা হবে। প্রকল্পের পটভূমিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এবং ছয়টি ইউনিয়ন (কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, বাশন, কাউলতিয়া, গাছা ও পুবাইল) নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ছয়টি ইউনিয়ন (প্রায় ৮৫ বর্গকিলোমিটার) পশ্চাৎপদ ও অনুন্নত। এসব এলাকার বেশিরভাগ রাস্তা কাঁচা। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যমান পাকা সড়কের প্রশস্ততা কম হওয়ায় যানজট লেগেই থাকে। বর্ষাকালে কাদাপানিতে এসব রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হয় এবং অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার দরুন সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। এমন প্রেক্ষিতেই সম্ভাব্যতা যাচাই করে ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (রাস্তা ও ড্রেন)’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রাক মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সুপারিশের আলোকেই প্রকল্প ব্যয় ৬৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা চূড়ান্ত করা হয়। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, ইতোমধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৮ হতে জুন ২০২১ করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত এলাকার নতুন সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যমান সড়ক প্রশস্তকরণ এবং ড্রেন নির্মাণ করা হবে। ফলে যানজট হ্রাসের মাধ্যমে জনসাধারণের চলাচল, পণ্য পরিবহন সহজ হবে এবং জলাবদ্ধতা কমবে। জানা গেছে, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে ১৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণ, ১২২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ এবং ২২৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করা হবে।
×