ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল সিটি নির্বাচন ॥ আজ প্রতীক বরাদ্দ

আওয়ামী লীগের উন্নয়ন, বিএনপির খালেদামুক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ জুলাই ২০১৮

আওয়ামী লীগের উন্নয়ন, বিএনপির খালেদামুক্তি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র বাকি ২০ দিন। নির্বাচন কমিশনের বৈধতা পাওয়া মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা কৌশলে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন। আজ ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে মাঠে নামবেন। এর পূর্বে অনুমতি না পেলেও কোন প্রার্থীই ঘরে বসে ছিলেন না। কৌশলে সামাজিক অনুষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সাংগঠনিক সভার ব্যানারে, সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রচার চালিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীদের সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে অরাজনৈতিক কোন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের মধ্যে পড়ে না, সে কারণে তারা কোন কিছু বলতে পারছেন না। এদিকে বরিশালে সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনে এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত ১৪৮ কাউন্সিলর প্রার্থী সিটি কর্পোরেশন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। প্রার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের লক্ষ্য ও ভোটারদের মনজয়ের ইস্যু। এর মধ্যে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ২০ দলীয় জোটের শরিক দল খেলাফত মজলিশের প্রার্থী অধ্যাপক একেএম মাহবুবুর রহমান সোমবার সকালে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন। একইদিন ৯ কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। ফলে বর্তমানে ছয় মেয়র প্রার্থী ও ১৩৯ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সূত্র মতে, কয়েকটি অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থীদের বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পৃথক পৃথক এজেন্ডা উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ভোটারদের মনজয় করতে সরকারের উন্নয়নকে পুঁজি করে প্রচার চালাচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারামুক্তিকে পুঁজি করে প্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীরা গরিব মানুষের অধিকার বাস্তবায়নকে পুঁজি করে প্রচার চালাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজে নির্বাচনী প্রচারে নামেননি। তবে তার বৃহৎ কর্মী বাহিনী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে শুরু করেছেন। ভোটাররা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কয়েক দফায় সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে স্থানীয় নেতারা ভোট দাবি করে তাদের কাছে গিয়েছিলেন। প্রচার চালানো ওইসব নেতা নগরী ও নগরবাসীর উন্নয়নের জন্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দলের হেভিওয়েটের নেতারাও সাদিক আব্দুল্লাহকে উন্নয়নের প্রার্থী হিসেবে তারকা চিহ্নিত করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে নেতারা বলেছেন, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নির্বাচিত করলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এবং সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করলে বৃহত্তর বরিশাল বিভাগে আরও উন্নয়ন হবে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাদিক আব্দুল্লাহকে নির্বাচিত করে নগরবাসীর উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার আহ্বান করা হয়েছে। এমকি মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিনও সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে শওকত হোসেন হিরনের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন। সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনকে উদাহরণ টেনে বলেন, শওকত হোসেন হিরন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দ্বারাই উন্নয়ন সম্ভব। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বরিশালের মানুষের চাওয়া-পাওয়াই আমার নির্বাচনী ইশতেহার। আমি বলব না আপনারা আমার পক্ষে লেখেন, আমি খারাপ কাজ করলে তা অবশ্যই লিখবেন। বরিশালের মানুষের স্বার্থে যেটা ভাল হবে সেটা লিখবেন। তিনি বলেন, বিগত দিনে আপনারা দেখেছেন আমি যা বলি তা করার চেষ্টা করেছি, ভবিষ্যতেও তাই হবে ইনশা আল্লাহ। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার সিটি নির্বাচনটি শুধু ভোটযুদ্ধ নয়, এর মাধ্যমে দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার কারামুক্তি ত্বরান্বিত করা হবে মর্মে প্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কর্মী বাহিনীর প্রচারের কৌশল হিসেবে বেগম জিয়ার কারামুক্তি ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরোয়ারের কর্মীদের প্রচারের বরাত দিয়ে ভোটাররা জানান, বিসিসি নির্বাচনে মজিবর রহমান সরোয়ারকে মেয়র নির্বাচিত করতে পারলে বরিশালে বিএনপির নেতারা আশ্রয় খুঁজে পাবে। এতে করে পুনরায় বরিশালে বিএনপি চাঙ্গা হবে। আর বিএনপি চাঙ্গা হলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা যাবে। এ প্রচার চালিয়েই ভোট প্রার্থনা করছেন বিএনপির সমর্থকরা। যদিও ইতোমধ্যে সরোয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সেখানে তিনি নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির কর্মীরা সরোয়ারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের সঙ্গে বেগম জিয়ার কারামুক্তির প্রসঙ্গ যুক্ত করে প্রচার চালিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের বাহিরে অন্যান্য দলের মেয়র প্রার্থী জয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন পুঁজি খাটাতে না পারলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসন আমলকে ‘দুঃশাসন’ উল্লেখ করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ে ভোটার এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের জয়ী হতে সুনির্দিষ্ট কোন একটি এজেন্ডায় আকড়ে থাকা চলছে না। ফলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এবং রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কথা বলে ভোটারদের মন গলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের ন্যায় উন্নয়নের স্বার্থে এবার সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়র নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খেলাফত মজলিশের প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার ॥ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন খেলাফত মজলিশের মেয়র প্রার্থী একেএম মাহবুব আলম। সোমবার সকালে তিনি নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিয়েছেন। একেএম মাহবুব আলম বলেন, কোন স্বার্থ বা চাপের মুখে নয়, ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জোটের স্বার্থে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। অপরদিকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে খেলাফত মজলিশের মেয়রসহ ৯ কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিয়েছেন। মহিলা আওয়ামী লীগের মতবিনিময় ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী উদীয়মান তরুণ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে বিপুলভোটে বিজয়ী করার জন্য জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ওয়ার্ডভিত্তিক মতবিনিময় সভা অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকালে নগরীর ১৯, ২০ ও ২১নং ওয়ার্ডের মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহানারা বেগম। ধারের টাকায় নির্বাচন করবেন চার মেয়র প্রার্থী ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীসহ পাঁচ মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয় বহন করবেন ধারের টাকায়। অন্যদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন নিজস্ব ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থে। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, নির্বাচন বাবদ একজন মেয়র প্রার্থী সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য তার ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের বাইরে বাবা এবং ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নিবেন ১১ লাখ টাকা। আর তার নিজস্ব সঞ্চিত অর্থ থেকে ব্যয় করবেন চার লাখ টাকা। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচনী ব্যয়ের পুরোটাই মেটাবেন নিজস্ব ব্যবসা থেকে সঞ্চিত অর্থে। অপর বিত্তশালী প্রার্থী জাপার ইকবাল হোসেন তাপস তার নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণ করেছেন ১২ লাখ টাকা। যার পুরোটাই তার নিজস্ব ব্যবসা থেকে সঞ্চিত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব নির্বাচনী ব্যয়ের পাঁচ লাখ টাকার চার লাখ টাকাই দেখিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার নেয়া। এ প্রার্থী বেতন থেকে সঞ্চিত এক লাখ টাকা নিজস্ব তহবিল দেখিয়েছেন। প্রার্থিতা বাতিল হওয়া মিতুর বিরুদ্ধে মামলা ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত ৪ নম্বর (১০, ১১ ও ১২) ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাকসুদা আক্তার মিতুর বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার শেষ কার্যদিবসে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ওই ওয়ার্ডের অপরপ্রার্থী তাসমিমা আহম্মেদ। মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।
×