ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিন জাতীয় অধ্যাপকের অনুভূতি

যে সম্মান পেলাম তা মাথায় তুলে নিলাম

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১০ জুলাই ২০১৮

যে সম্মান পেলাম তা মাথায় তুলে নিলাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘জাতীয় অধ্যাপক সম্মাননা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সারাজীবন শিক্ষকতায় ও দেশকে যতটুকু দিয়েছি এই দেশ ও শিক্ষাখাত আমাকে দিয়েছে তার চেয়ে আর অনেক বেশি। সারাজীবন জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা রক্ষা করে যেতে চাই। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। যে সম্মান পেলাম তা মাথায় তুলে নিলাম। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত দেশের তিন জাতীয় অধ্যাপক- ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ও অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। ইউজিসির উদ্যোগে এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় অধ্যাপকদের সম্মানে এ ধরনের কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইউজিসি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন। ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা, অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম, অধ্যাপক ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি ও অধ্যাপক ড. মোঃ আখতার হোসেন ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ইউজিসি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম ইউজিসিকে ধন্যবাদ জানান। বক্তব্যে তিনি তার শিক্ষকদের স্মৃতিচারণ করেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, স্কুলজীবন থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব শিক্ষকের কাছে শিখেছি আজ তাদের কথা বেশি মনে পড়ছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কথা। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে যে অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি তাদের প্রত্যেকের জন্যই আজ আমি এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি বলে আমি মনে করি। সারাজীবন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ম্যাট্রিক পাসের আগেই বাংলায় পড়ালেখা করে শিক্ষকতা করার বিষয়টি নির্ধারণ করেছিলাম। যখন পড়ালেখা করি তখন কোনদিন ভাবতেও পারিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারব, জাতীয় অধ্যাপক তো দূরের কথা। আজ যে ‘অযাচিত’ সম্মাননা আমাকে দেয়া হয়েছে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমি দেশকে যা দিয়েছি, শিক্ষকতায় যতটুকু দিয়েছি, এই দেশ ও দেশের শিক্ষাখাত আমাকে তার চেয়ে বেশি ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি যে সম্মান পেলাম তা মাথায় তুলে নিলাম। অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, দেশের বাইরে কাজের সুযোগ পেয়েও দেশ ছাড়িনি। প্রফেসর এফ আর খান অনেকবার আমাকে আমার কাজের কথা চিন্তা করে বলেছিলেন তুমি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আস। আমি যাইনি। কিন্তু আজ জানলাম আমি না গিয়ে ভুল করিনি। দেশ আমাকে যা দিয়েছে, দেশের জন্য কাজ করে যে তৃপ্তি পাই তা অন্য দেশে পেতাম না। সম্মাননা পাওয়া আমার জন্য অনেক আনন্দের। যদিও সম্মাননা পাওয়ার উদ্দেশে কোন কাজ করিনি। দেশের জন্য আজীবন কাজ করে যেতে চাই। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এ তিন অধ্যাপক হচ্ছেন জ্ঞানের বাতিঘর। তাদের জ্ঞানের মশালে গোটা দেশ ও জাতি আলোকিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞানের সূতিকাগার। আর এই শিক্ষকরা সেই সূতিকাগারের উজ্বল নক্ষত্র। যে দেশ শিক্ষায় যত উন্নত সে দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত সমৃদ্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সকল সূচকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উচ্চশিক্ষায় বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আজ আমরা সবচেয়ে বেশি আনন্দিত। এই তিন বরেণ্য শিক্ষককে সম্মানিত করে দেশ ও জাতি সম্মানিত হলো। সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, দেশ দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ শিক্ষকরা দেশকে আলোকিত করেছেন। আমরা এমন শিক্ষকের জন্য গৌরবান্বিত। বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে এসব শিক্ষাব্যক্তিত্বদের জীবন দর্শন অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এমন বরেণ্য ব্যক্তিদের অনুসরণ করলে আলোকিত হবে জীবন। এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তিন জাতীয় অধ্যাপককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সূচনা করা হয়। তিন শিক্ষাবিদকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। ক্রেস্ট তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
×