ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১০ জুলাই ২০১৮

ঢাকা ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা প্রোক্টরের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ অবস্থান, ঘোরাফেরা এবং কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, আবাসিক হল ও হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন, চরমপন্থী ও উগ্র ভাবাদর্শ প্রচারে ও কর্মকা-ে কেউ সংশ্লিষ্ট থাকলে তার বিরুদ্ধেও নেয়া হবে ব্যবস্থা। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেয়া হবে। এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনাগুলোর তদন্তে উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলসমূহে সাম্প্রতিককালে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রেক্ষাপট বিবেচনা ও সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য গত ৫ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারী চাকরিতে নিয়োগে কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা গত কয়ে মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে, যার কেন্দ্র বিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আন্দোলনের মধ্যে এক রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে রীতিমতো তা-ব চালানো হয়। আন্দোলনকারীদের নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে একটি ছাত্রী হলে রাতভর চলে উত্তেজনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে কোটা পদ্ধতি আর না রাখার কথা বলায় আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন এখনও হয়নি এমন কথা বলে একটি গ্রুপ আন্দোলনে নামলে ওই কর্মসূচীতে হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবারের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনাগুলোর তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রভোস্ট কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও হোস্টেলগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ছাত্রত্ব নেই এমন কাউকে হলে থাকতে দেয়া হবে না। ‘অছাত্রদের’ হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে নোটিস টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে। হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোন অভিভাবক বা অতিথিও হলে অবস্থান করতে পারবে না জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রয়োজনে হল কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেবে। আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, আবাসিক হল ও হোস্টেলসমূহে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন, চরমপন্থী ও উগ্র ভাবাদর্শ প্রচারে ও কর্মকা-ে কেউ সংশ্লিষ্ট আছে কি না সে বিষয়ে সতর্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ও হল প্রশাসনকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সদস্য ও চরমপন্থীরা যাতে কোন অবস্থাতেই হলে প্রবেশ অথবা অবস্থান করতে না পারে সে বিষয়ে হল প্রশাসন ‘সর্বোচ্চ সতর্ক ও তৎপর’ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয় প্রভোস্ট কমিটির সভায়। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সকল হলে অবস্থানরত ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হল প্রশাসন নিয়মিত মতবিনিময় সভা করবে। কর্তৃপক্ষের ঘোষণার বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক ধারা ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করে এ ধরনের কাজ যেন কেউ না করতে পারে, তাই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যেকোন সাংস্কৃতিক বা ইতিবাচক কোন অনুষ্ঠানকে বাধা দেয়ার জন্য এটি করা হয়নি। তারিকুল ইসলামের মুক্তি দাবি আসিফ নজরুলের ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষার্থী মোঃ তারিকুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন অনুষদটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সামনে ‘আইনের শাসন চাই, মিথ্যা বানোয়াট হিংসাত্মক মামলা প্রত্যাহারসহ তারিকুলের মুক্তি চাই’ ব্যানারে এই কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধনে ছিলেন আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, আইনের শিক্ষার্থী হয়েও সে মানবাধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। তাকে পূর্বের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছি। এ সময় সারাদেশের যত শিক্ষার্থী কোটা আন্দোলনে গ্রেফতার হয়েছে তাদের যেন হয়রানি না করা হয় এই দাবি জানান আসিফ নজরুল।
×