ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বোনাস ইস্যুর ব্যাখ্যা বাজারে স্বচ্ছতা বাড়াবে

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৯ জুলাই ২০১৮

 বোনাস ইস্যুর ব্যাখ্যা বাজারে স্বচ্ছতা বাড়াবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের কারণ এতদিন ব্যাখ্যা করতে হলেও বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে তা ছিল না। যে কারণে অনেক দুর্বল কোম্পানি বোনাস শেয়ার দিয়ে ক্যাটাগরি ধরে রাখা ও অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া আইপিওতে আসা অনেক কোম্পানি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বোনাস শেয়ার দিয়েছে। তবে বোনাস শেয়ার ঘোষণার কারণ ও ফান্ড ব্যবহারের ব্যাখ্যা দেয়া বাধ্যতামূলক হওয়ার মাধ্যমে এসব সমস্যা লাঘব হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়বে। আইপিও ও রাইটের মাধ্যমে কোম্পানির বাইরে থেকে নতুন করে টাকা সংগ্রহ করা হয়। আর বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে কোম্পানির অর্জিত মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের বিতরণ না করে রেখে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে আইপিও, রাইট ও বোনাস সবক্ষেত্রেই কোম্পানির মূলধন বাড়ানো হয়। তবে আইপিও ও রাইটের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের কারণ ও ব্যবহারের ব্যাখ্যা দেয়া বাধ্যতামূলক থাকলেও বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে তা ছিল না। তবে গত ২০ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জারিকৃত এক নোটিফিকেশনে বোনাস শেয়ারেও তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, উন্নত বিশ্বে বোনাস শেয়ারকে লভ্যাংশ হিসাবেই বিবেচনা করা হয় না। এই বোনাস শেয়ারে কোম্পানি থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোন ধরনের সম্পদ প্রদান করতে হয় না। যাতে খুব সহজেই একটি দুর্বল কোম্পানিও বোনাস শেয়ার দিতে পারে। তবে বোনাস শেয়ারের ফান্ড ব্যবহারে ব্যাখ্যা দেয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায়, সেই সমস্যা লাঘব হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ব্যাখ্যা বাধ্যতামূলক না থাকার সুযোগে অনেক কোম্পানি কোন কারণ ছাড়াই বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে নিয়মিতভাবে। যাতে ব্যবসায় কোন প্রভাব পড়েনি। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর ব্যর্থতা আড়ালে পড়েছে। এছাড়া আইপিও ফান্ড ব্যবহারের আগেই অনেক কোম্পানিকে ইচ্ছা ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও বোনাস শেয়ার ঘোষণা করতে হয়েছে। শুধু ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে রক্ষা পেতে এমনটি করতে হয়েছে। আর দিতে হয় তাই বোনাস শেয়ার দিয়েছে এমন কোম্পানিও আছে। দেখা গেছে, জাহিন স্পিনিংয়ের পর্ষদ নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে ৫২ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনকে ৯৮ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে। তবে কোম্পানিটির ব্যবসায় কোন প্রভাব পড়েনি। ৫২ কোটি টাকা দিয়ে ৬ মাসে ৪৪ কোটি টাকার বিক্রয় করে। আর এখন ৯৮ কোটি টাকা দিয়ে বছরে ৮৭ কোটি টাকার বিক্রয় করে। এক্ষেত্রে সময়ের হিসাবে বরং ১ কোটি টাকার বিক্রয় কমেছে। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইয়াকিন পলিমারের আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। তবে কোম্পানিটি সে টাকা ব্যবহার না করতেই ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে শুধু ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে রক্ষা পেতে এই বোনাস শেয়ার দেয়া হয় বলে জানান কোম্পানিটির সচিব মোঃ আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, আইপিওতে টাকা উত্তোলনের পরে তা ব্যবহার না করতেই লভ্যাংশ দিতে হচ্ছে। না দিলে আবার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যেতে হবে। কিন্তু নগদ টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে বোনাস শেয়ার দেই। আইপিওর অর্থ ব্যবহার না হতেই ২০১৪ সালে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর বিষয়ে শাশা ডেনিমসের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আহসানুল হক সোহেল বলেন, ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করা লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ নগদ লভ্যাংশ দিলে সমস্যা তৈরি হতে পারে ভেবে বোনাস শেয়ার প্রদান করা হয়েছে। বোনাস শেয়ার প্রদানে অন্য কোন কারণ নেই। খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) তপন কুমার সরকার বলেন, বোনাস শেয়ার প্রদান কিছুটা ঝুঁকি হলেও শেয়ারহোল্ডারদের চাহিদা থাকায় তা প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, দেশে অনেক কোম্পানির মধ্যে অহেতুক বোনাস শেয়ার দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। অথচ শুধু দৃশ্যমান ব্যবসায় সম্প্রসারণ হবে এমন ক্ষেত্রেই বোনাস শেয়ার দেয়া উচিত। যার ব্যত্যয় ঘটছিল এবং অপব্যবহার হচ্ছিল। তবে বিএসইসির বোনাস শেয়ারের ফান্ড ব্যবহারের ব্যাখ্যার নির্দেশনায় সেই সমস্যা লাঘব হবে। একইসঙ্গে বোনাস শেয়ারে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি দেওয়ান নুরুল ইসলাম বলেন, প্রকৃতপক্ষে বোনাস শেয়ারে শেয়ারহোল্ডারদের কোন বেনিফিট নেই এবং এটি কোন লভ্যাংশ না। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করে।
×