ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে সাজাপ্রাপ্ত সেই বাদল ফরাজীকে মুক্ত করতে হাইকোর্টে রিট

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৯ জুলাই ২০১৮

ভারতে সাজাপ্রাপ্ত সেই বাদল ফরাজীকে মুক্ত করতে হাইকোর্টে রিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিনা অপরাধে ভারতের কারাগারে প্রায় ১০ বছর বন্দী থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরিয়ে আনা বাদল ফরাজিকে কারামুক্ত (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক) করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে বাদল ফরাজিকে জেলখানায় আটক রাখা কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না-মর্মে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ববি হাজ্জাজের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে (এনডিএম) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। বিনা অপরাধে ভারতের কারাগারে প্রায় ১০ বছর বন্দী থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরিয়ে আনা বাদল ফরাজিকে কারামুক্ত করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। এতে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পররাষ্ট্র সচিব ও আইজি প্রিজনকে বিবাদী করা হয়েছে। রবিবার হাইকোর্টের দুই আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার কাউছার সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন। পরে আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাদল ফরাজি নির্দোষ। তাকে ফিরিয়ে আনা হলেও কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নির্দোষ ব্যক্তিকে কেন কারাগারে রাখা হবে? বাদল ফরাজি নির্দোষ এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ রবিবার আমরা আদালতের নজরে আনি। আদালত আমাদের লিখিত আবেদন করতে বলেন। পরে আমরা লিখিত আবেদন করি।’ আগামীকাল (সোমবার) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানি হতে পারে। উল্লেখ্য, ভারতের দিল্লীর তিহার জেলে খুনের মামলায় আসামি হয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে জেল খাটার পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন বাদল ফরাজি নামে এক যুবক। তাকে সে দেশ থেকে ফিরিয়ে এনে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে তাকে জেট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে ভারত থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়। জানা যায়, বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের কাছে ১৭ নম্বর ফারুকি রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজি ও সারাফালি বেগমের ছেলে বাদল। টি এ ফারুক স্কুলের অষ্টম শ্রেণী পাস বাদলের ইচ্ছা ছিল তাজমহল দেখবে। এমন ইচ্ছায় ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল অভিবাসন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশের পরই সেখানকার একটি খুনের অপরাধে বাদলকে আটক করে বিএসএফ। হিন্দী বা ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে বিএসএফের কর্মকর্তাদের বোঝাতেই পারেননি যে খুনের অভিযোগে যে বাদলকে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন। ২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লীর অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু শুধু দু’জনের নাম এক হওয়ায় বাংলাদেশী নাগরিক বাদল ফরাজিকে আটক করে বিএসএফ। পরে ওই খুনের অভিযোগে ভারতীয় দ-বিধির ৩০২ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় বাদলের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লীর সাকেট আদালত বাদলের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়। দিল্লী হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। পরে বাদল ফরাজির স্থান হয় দিল্লীর তিহার জেলে। বিনা দোষে এই সাজা মেনে না নিয়ে বাদল ফরাজি দিল্লীতে বাংলাদেশ হাই-কমিশনের সহায়তায় সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু শীর্ষ আদালতও বাদলের আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জেলেই কাটাতে হয়েছে বাদলকে। পরে ভারতীয় একটি এনজিও বাদল ফরাজির ঘটনা জানতে পেরে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে। ঢাকার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় ২০০৪ সালের বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। ববি হাজ্জাজের এনডিএমকে নিবন্ধন নয় কেন ॥ ববি হাজ্জাজের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে (এনডিএম) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নিবন্ধন না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের নেয়া সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও উপ-সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল হক টুটুল।
×