ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতীয় হাইকমিশন কোন দলের মুখপাত্র জানতে চান রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৯ জুলাই ২০১৮

 ভারতীয় হাইকমিশন কোন দলের মুখপাত্র জানতে চান  রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আইনী পরামর্শক লর্ড কার্লাইলকে ভারতে প্রবেশের অনুমতি না দিতে নয়াদিল্লীতে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জোরালো সুপারিশ পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রবিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় হাইকমিশনের এ অবস্থানের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশের কোন দলের মুখপাত্র? রিজভী বলেন, লর্ড কার্লাইল চলতি সপ্তাহেই দিল্লী সফর করে ১৩ জুলাই ফরেন করেসপন্ডেন্ট ক্লাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ও কারাদ-ের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্য দেয়ার কথা। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আনইজীবী লর্ড কার্লাইলকে ভারতের ভিসা না দেয়া হলে প্রমাণিত হবে যে খালেদা জিয়াকে কারাদ- দেয়ার পেছনে ভারতীয় হাইকমিশনের ভূমিকা রয়েছে। রিজভী বলেন, বাংলাদেশের একটি ভোটারবিহীন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় হাইকমিশন কর্মকর্তাদের ভূমিকা ঔপনিবেশিক শাসকদের মতো। যেন তারা বাংলাদেশে তাদের প্রভুদের টিকিয়ে রাখতে ওঠে পড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ভারত সফরে গিয়ে সেখানকার শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আয়োজিত আলোচনা সভায় বলেন, বিএনপি ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিএনপি হচ্ছে চীন ও পাকিস্তানপন্থী। রিজভী বলেন, জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় রাখতে বিভিন্ন নীতি নির্ধারকদের কাছে নতজানু হয়ে লেজ নাড়িয়ে ভারতীয় কৃপা আদায়ের জন্য এইচ টি ইমামের মতো আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও নেতারা এমন ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছেন, যা দেশে বিরল। এটি যেন মোড়লের কাছে নিজের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করা। বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বীকারোক্তিতেই বলেছেন তিনি ভারতকে সবকিছু দিয়েছেন, প্রতিদান চাননি। কিন্তু এখন প্রতিদান পেতে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন সেখানে। দেশের স্বাধীনতাকে অপমানিত করে তিনি দিল্লীর দরবারে করুণা ভিক্ষা করছেন। দিল্লীতে গিয়ে এইচ টি ইমাম বলেছেন বিএনপিকে সুযোগ দেবেন না। রিজভী বলেন, এইচ টি ইমামকে বলতে চাই, ভারত সুযোগ দেয়ার কে? বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সুযোগও দেবে দেশের জনগণ। আপনার বক্তব্যে বোঝা যায় দেশের সরকার পরিবর্তনের চাবিকাঠি ভারত। তবে জনগণকে পাশ কাটিয়ে দেশে আর কোন ভোটারবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ প্রমুখ। আজ বিএনপির অনশন মহানগর নাট্যমঞ্চে : রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে আজ সোমবার প্রতীকী অনশন কর্মসূচী পালন করবে বিএনপি। রবিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, পূর্বঘোষিত অনশন কর্মসূচী সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে পালিত হবে। ঢাকায় পালিত হবে মহানগর নাট্যমঞ্চে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। কর্মসূচী পালনে ঢাকা মহানগর পুলিশ মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। অনশনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের নেতাদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের ও সংহতি প্রকাশের কথা রয়েছে। নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে হবে- গয়েশ্বর ॥ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, অতীতে যেভাবে স্বৈরাচার সরকারের পতনে আন্দোলন করা হয়েছে সেভাবে নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে। রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্বেচ্ছাসেবক ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। গয়েশ্বর বলেন, জনগণ মাঠে নামলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নাই। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার বিষয় আছে। কে কিভাবে যাবে বলা যায় না। সত্য প্রতিষ্ঠিত হতে একটু সময় লাগলেও যে কোন সময় তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সত্য কখনও মিথ্যার স্রোতে ভেসে যায় না। গয়েশ্বর বলেন, আওয়ামী লীগের কোন আদর্শ নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাই সব। ক্ষমতায় থাকলে তাদের আয়ে বরকত বাড়ে। ক্ষমতা না থাকলে তাদের কিছু থাকে না। তারা ক্ষমতায় গেলে জনগণের কিছু হয় না, জনগণ কিছু পায় না শুধু নেতারা পায়। আর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নেতারা কিছু পায় না, জনগণ পায়। বিএনপির নেতারা আদর্শ বিক্রি করে না। গয়েশ্বর বলেন, এখন দেশে কেউ গুলিতে নিহত হলে তার খোঁজ পাওয়া যায় না। কিন্তু একটা সময় ছিল কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলে লাশের কফিন কাঁধে নিয়ে মিছিল হতো। রাস্তা দিয়ে যখন লাশ কাঁধে কোন মিছিল হতো তখন রাস্তার পাশ থেকে সাধারণ মানুষ সেই মিছিলে অংশ নিত। সেভাবে দাবি আদায় হতো। কিন্তু এখন গুলিতে কেউ নিহত হলে তার লাশটাই পাওয়া যায় না। তাহলে কিসের কফিন নিয়ে মানুষ মিছিল করবে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সোহেল রানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, এ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ। রাজধানীতে যুবদল উত্তরের বিক্ষোভ মিছিল ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে না দেয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর। রবিবার সকাল ১০টা থেকে মগবাজার থেকে শুরু করে হাতিরঝিল গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে যুবদল নেতাকর্মীদের স্লোগান ছিল এমন- ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’। বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফা কামাল রিয়াদ প্রমুখ।
×