ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দশ বছর পর

পঞ্চম কৃষি শুমারির তথ্য সংগ্রহ শুরু আগামী এপ্রিলে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ জুলাই ২০১৮

 পঞ্চম কৃষি শুমারির তথ্য সংগ্রহ শুরু আগামী এপ্রিলে

ওয়াজেদ হীরা ॥ দেশে পঞ্চমবারের মত কৃষি (শস্য, মৎস ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি-২০১৮ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কৃষি শুমারির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যেই তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হবে। এ লক্ষ্যে জোন (এলাকা) গঠন করা হয়েছে। পরিসংখ্যান আইন অনুযায়ী আদমশুমারি এবং অর্থনৈতিক শুমারির পাশাপাশি কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি পরিচালনা করার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানা গেছে, আগামী ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হবে কৃষিশুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ। দেশের অর্ধেক এলাকাব্যাপী এটি চলবে এক মাস। এর পর দ্বিতীয় ধাপে আরও একমাস অন্য এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। দেশের সকল থানা ও কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান হতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। জানা গেছে, কৃষি (শস্য, মৎস ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি পরিচালনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ এবং অগ্রগতি পর্যাবেক্ষণে বেঞ্চমার্ক তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যেই গত মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আয়োজিত ‘কৃষি (শস্য, মৎস ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি-২০১৮’ এর প্রস্তুতিমূলক কর্মকা-ের ওপর প্রশিক্ষণ কর্মশালা করেছেন। গত ২৪ জুন প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনীতে কৃষিশুমারি নিয়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে তেমনি কর্মশালার মাধ্যমে জোন গঠনের কাজ শুরু করে সংস্থাটি। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৫০ হাজার শুমারি গণনাকারী, ২৪ হাজার ৭০০ জন সুপারভাইজার, মাস্টার ট্রেইনার, জোনাল অফিসারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা থাকবেন। অথচ যানবাহন কেনা ব্যতীত প্রকল্পের বাকি কাজে এখনও ধীর গতি। তবে অন্যান্য কাজও খুব দ্রুতই শেষ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ শুমারির মাধ্যমে শস্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদসহ পোল্টি সাব-সেক্টরে ও বড় পরিসরে পর্যায়ক্রমিক পরিসংখ্যান তৈরি করা হবে। এছাড়া কৃষি খাতের কাঠামোগত পরিবর্তন সংক্রন্ত উপাত্ত, ভূমি ব্যবহার, চাষের প্রকার ও ফসল বৈচিত্রের পরিসংখ্যান, সেচ, কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত উপাত্ত থাকবে। দেশের সকল সাধারণ খানা (পরিবার) এবং কৃষি বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক খানায় শুমারি পরিচালিত হবে। দেশের শহর ও পল্লী এলাকায় একই সঙ্গে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শুমারি শেষে প্রত্যেক গণনাকারী গণনা বই থেকে একটি খানা তালিকা প্রস্তুত করবে। তালিকায় মোট পরিচালনাধীন জমির পরিমাণ, হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল ও মহিষ ইত্যাদির সংখ্যা এবং খানা মৎস্য চাষ ও মৎস্য শিকারে জড়িত কি না এ বিষয়ক তথ্য থাকবে। ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। ‘কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি-২০১৮’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম-সচিব জাফর আহাম্মদ খান জানান, আগামী ২০১৯ সালের এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে শুমারির তথ্য সংগ্রহ কাজ সম্পন্ন করা হবে। দেশের সব খানা এবং কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছেন, জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে কৃষি খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ জীবনে দারিদ্র্য দূরীকরণ জাতীয় পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য, যা কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মহাপরিচালক মোঃ আমীর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা মিটিং করেছি। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রিন্টিং, প্যাকেজিংসহ এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। আশা করছি আগামী বছরের শুরুতেই গণনাকাজ শুরু হবে। এছাড়াও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট যেসব কাজ হয়নি তাও দ্রুত সময়ে শেষ হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি। উল্লেখ্য, দেশে প্রতি দশ বছর অন্তর কৃষিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। দেশে সর্বশেষ-২০০৮ সালে কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত চারটি কৃষিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো ১৯৭৭ সালে প্রথম, ১৯৮৩-৮৪ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯৬ সালে তৃতীয় এবং ২০০৮ সালে চতুর্থ কৃষিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়।
×