ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

‘মহেশখালীর সালামতরা ১০/১২ জনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে’

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ জুলাই ২০১৮

  ‘মহেশখালীর সালামতরা ১০/১২ জনকে ধরে নিয়ে  হত্যা করে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কক্সবাজারের মহেশখালীর সালামত উল্লাহ খানসহ ১৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী রবীন্দ্র লাল দে ও পঞ্চম সাক্ষী সুধীর কর্মকার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী রবীন্দ্র লাল দে বলেন, একাত্তরের ৬ মে পাকিস্তানী আর্মিসহ দক্ষিণ রাখাইনপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরে আক্রমণ করে মূর্তি ভাংচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর ১০/১২ জনকে ধরে গোরকঘাট বাজারের দক্ষিণে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাদেরকে গুলি করে মেরে খালে ফেলে দেয়। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীদেরকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ জুলাই। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন ,আমার নাম রবীন্দ্র নাথ দে। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৭ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম গোরকঘাটা দক্ষিণ হিন্দুপাড়া, থানা মহেশখালী, জেলা কক্সবাজার। আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করি। আমি ইউনিয়ন পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত সচিব। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ২০ বছর। তখন আমি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৬ মে বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে আমি গোরকঘাট বাজারে যাই। সেখানে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই থানার সামনে গোরকঘাট ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের সামনে শান্তি কমিটির নেতা ও সদস্যরা জড়ো হচ্ছে। তাদের মধ্যে ছিল মোঃ রশিদ বিএ, সালামত উল্লাহ খান, মৌলবি মোঃ জাকারিয়া শিকদার, তার বড় ভাই মোঃ হাশেম শিকদার (বর্তমানে মৃত) বড় মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন (বর্তমানে মৃত) সাহাব মিয়া চৌধুরী (বর্তমানে মৃত) নুরুল ইসলাম, বাদশা মিয়াসহ প্রায় শতাধিক লোক জড়ো হয়। ওই দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা একযোগে মহেশখালী গোরকঘাট আই ডব্লিউ টিএ জেটি ঘাটের দিকে চলে যায়। ওই সময় ৭/৮টি ইজ্ঞিনচালিত বোটে করে প্রায় শতাধিক পাকিস্তানী আর্মি জেটি ঘাটে উপস্থিত হলে শান্তি কমিটির লোকজন নানান সেøাগান দিয়ে তাদেরকে রিসিভ করে। তারপর তারা দক্ষিণ রাখাইনপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরের মূর্তি ভাংচুর ও লুটপাট করে মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই সময় আমি ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৩০০/৪০০ গজ দূরে আড়ালে থেকে এই ঘটনা দেখতে পাই। এরপর আমার বর্ণিত আসামিরা একযোগে পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে গোরকঘাট বাজারে প্রবেশ করে হিন্দু দোকানি বিমল চৌধুরী, হিমাংশু বিশ্বাস, সাধান বিশ্বাস, অতুল পাল ,উপেন্দ্র লাল চৌধুরী , অজুণ কর্মকারসহ ১০/১২ জনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে খালে ফেলে দেয়া হয়।
×