ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল সিটি নির্বাচন

দিনরাত নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে ব্যস্ত সাদিক-সরোয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৯ জুলাই ২০১৮

  দিনরাত নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে ব্যস্ত সাদিক-সরোয়ার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে বরিশালে। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে গুরুত্ব বেড়েছে সমর্থকদেরও। দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর ঘর গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও ধানের শীষের প্রার্থী দলের যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। তারা দিনরাত দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ দুই দলের মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে দলীয় মনোনয়নযুদ্ধে সরব অপর প্রার্থীদের ঘরোয়া বৈঠকে আনতে পারেননি। আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করবেন। প্রচারের বেশি সময় না থাকায় তারা মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকেই দলের নেতাকর্মীদের একত্রিত করতে কাজ করছেন। বিশেষ করে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা বেশি সময় দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের একত্রিত করতে। তাদের ঘরোয়া বৈঠকে নেতাকর্মীদের প্রচার প্রচারের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মতবিনিময় ॥ আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি (সাদিক) বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অভিজ্ঞ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ আমার জন্য একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার। তিনি (সরোয়ার) বরিশালে চারবার এমপি ছিলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। তার মতো একজন প্রার্থীর বিপক্ষে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, এটা সত্যি আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। সাদিক আব্দুল্লাহ আরও বলেন, আমি কারও বিরুদ্ধাচারণ করতে চাই না, এটাও একটা পরিবর্তন বলে আমি মনে করি। অনেকেই আমার বিরুদ্ধে বলতে পারে কিন্তু আমি কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বলতে চাই না। বিগত বছরগুলোতে আমি বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছি। হয়ত কারও ভাল লেগেছে, কারও লাগেনি। মনোনয়ন পাওয়ার পরে বিগতদিনের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী বরিশালে কোনম শো-ডাউন করতে দেইনি। কারণ বিগতদিনে আমি যা করেছি তাতে বরিশালের মানুষ আমাকে চেনেন ও ভালবাসেন। ছোট দলগুলোর ঐক্যপ্রক্রিয়া ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ছোট দলগুলোর ঐক্যপ্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের ভোটের হিসেবে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ঐক্যপ্রক্রিয়ার কারণে বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার হারাতে পারেন হেফাজত ইসলামের ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ হারাতে পারেন নগরীর ভূমিহীন ও কলোনিবাসীর ভোট। হেফাজতে ইসলামের বরিশালের আমির মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহাবুব মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হয়ে। সম্প্রতি তিনি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাত করে বরিশালে ফিরে আলেম সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে হেফাজতের পাশাপাশি আলেম সমাজ ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। ওবায়দুর রহমান মাহাবুব আলেম সমাজকে নিয়ে ভোটের মাঠে নামার ঘোষণায় কপাল পুড়তে পারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের। কারণ হেফাজতে ইসলাম সমর্থকরাই বিএনপির ‘ভোটব্যাংক’। আর তাই বিএনপির পথের কাঁটা হতে পারেন হেফাজতের আমির ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহাবুব। অপরদিকে সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ঐক্যে ফাটল ধরেছিল। কিন্তু প্রার্থিতা নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে দফায় দফায় বৈঠক চলছে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। দুই দলের মেয়র প্রার্থীই আশা করছেন, দ্বন্দ্ব নিরসন করে তারা একক প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে সমঝোতার পথেই হাঁটছেন। তবে দু’জনের মধ্যে কে প্রার্থী থাকছেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ভোটের সমীকরণে কিছুটা টানাপোড়নে আছে আওয়ামী লীগও। কারণ বাম সংগঠন দুটির মেয়র প্রার্থী নগরীর ভূমিহীন ও কলোনিবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয়। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহকে কিছুটা ভোট হারাতে হতে পারে। কারণ বাম সংগঠনের অনুসারীরা সাধারণত তাদের প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে থাকেন। সাদিক আব্দুল্লাহকে সমর্থন জানাতে সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী সমাবেশ ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সমর্থন জানাতে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তা ॥ সদ্য শেষ হওয়া গাজীপুর ও খুলনার সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রাথমিক নিরাপত্তা ছক তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন উপলক্ষে এ সিটিতে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে সেনা মোতায়েনের কোন পরিকল্পনা নেই ইসির। নির্বাচনে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে র‌্যাব ও বিজিবি’র সদস্যরা। প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা আচরণ বিধি প্রতিপালন করছে কি না তা দেখভালে অন্যান্য নির্বাচনের মতো এ সিটিতেও আনুপাতিক হারে মাঠে থাকবে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া ওয়ার্ড সংখ্যা বেশি থাকায় এ সিটিতে তুলনায় বেশি সংখ্যক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। থাকবে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি ইভিএমে ভোট। প্রতীক বরাদ্দ ১০ জুলাই ॥ আগামী ১০ জুলাই সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এরপরই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করবেন। আর আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।
×