ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পানামা পেপারসে নাম এসেছে এমন ৭ জনকে দুদকে তলব

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৯ জুলাই ২০১৮

 পানামা পেপারসে নাম এসেছে এমন ৭ জনকে দুদকে তলব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ উপায়ে কর ফাঁকি দিয়ে ও অর্থ পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশকারী বিশ্বে সাড়া জাগানো পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনায় এক বিদেশীসহ বাংলাদেশের সাত ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির উপ-পরিচালক এসএম আখতার হামিদ স্বাক্ষরিত পাঠানো চিঠিতে বিদেশে মুদ্রা পাচারের অভিযোগে তাদের তলব করা হয়েছে। বাংলাদেশীদের নাম প্রকাশের পর দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক কতৃক গঠিত তিন সদস্যের অনুসন্ধানী টিম কতৃক প্রায় ১৫ মাস পর তাদের তলব করেছে। টিমটি জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করছে। এর আগে এ সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। রবিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পৃথক পৃথক চিঠিতে তাদের আগামী ১৬ ও ১৭ জুলাই হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কাকারিতে নাম আসা বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০১৬ সালের এপ্রিলে দুদকের উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঁঞাকে প্রধান করে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। অনুসন্ধান দলের অন্য সদস্যরা হলেন- দুদকের সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান ও উপ-সহকারী পরিচালক রাফী মোঃ নাজমুস সাদাত। বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে যেসব বাংলাদেশীর নাম এসেছে, তাদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার জন্য গত মাসে নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এরপরই নড়েচড়ে বসে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনায় ১৬ জুলাই দুদকে হাজির থাকতে বলা চার ব্যবসায়ী হচ্ছেন ইউনাইটেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মাল্টি ট্রেড মার্কেটিং লিমিটেডের পরিচালক হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মঈনুল আহসান, আহমেদ ইসমাইল হোসেন এবং আকতার মাহমুদ। অপরদিকে, প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে যে তিনজনকে ১৭ জুলাই দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে তারা হচ্ছেন উইং লিমিটেডের পরিচালক এরিক জনসন আনড্রেস উইলসন, ইন্ট্রিডিপ গ্রুপের ফারহান ইয়াকবুর রহমান এবং ফেলকন শিপিংয়ের মাহতাবা রহমান। ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) সম্প্রতি দি পানামা পেপারস নামে নথি প্রকাশ করে; যেখানে ১ কোটি ১০ লাখ নথি ফাঁস করা হয়। ওই তালিকায় বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েক রাষ্ট্র প্রধানসহ শতাধিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজনের কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। যা বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতংয়ের অনুসন্ধানী সাংবাদিক বাস্তিয়ান ওবারমেয়ারের হাতে এসব নথি আসে। তারা এটাকে তুলে দেন আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক সংস্থা আইসিআইজের কাছে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭৮টি দেশের ১শ’ ৭টি সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তা প্রকাশ করে। কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত সাড়া জাগানো পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে এ পর্যন্ত রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ ৩৪ বাংলাদেশী ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া তথ্যে। অন্যদিকে, ২০১৭ সালের নবেম্বরে প্যারাডাইস পেপারসের প্রায় ২৫ হাজার নথি প্রকাশ করা হয়। যেখানে কয়েক বাংলাদেশী ও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার পরিবারের কয়েক সদস্য রয়েছেন। ওই বছরের ৫ নবেম্বর প্রথম দফায় প্রকাশ করা নথিতে যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির গোপন সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে সেখানে কোন বাংলাদেশীর নাম ছিল না। পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস হলো বিশ্বের ১৮০টি দেশের রাজনীতিক, সেলিব্রিটি ও বিত্তশালী মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের এক বিশাল ডাটাবেজ। পেপারসে বলা হয়, এসব ব্যক্তিকে কর দিতে হয় না কিংবা খুবই নিম্নহারে কর দেয়া যায় এমন দেশে বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
×