ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বল্প সুদে ঋণ দিলে চলচ্চিত্র আবার ঘুরে দাঁড়াবে ॥ ফারুক

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৯ জুলাই ২০১৮

   স্বল্প সুদে ঋণ দিলে চলচ্চিত্র আবার ঘুরে দাঁড়াবে ॥ ফারুক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত দুই অভিনয়শিল্পী ফারুক ও ববিতা। সম্মাননাপ্রাপ্তিতে অনুভূতি ব্যক্ত করেন সেলুলয়েডের বরেণ্য দুই শিল্পী। সেই অনুভূতি প্রকাশের সূত্র ধরে উঠে আসে এদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা। এই শিল্পের বিকাশে বর্তমান সরকারের উদ্যোগের কথা। প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সম্ভাবনার পথে ধাবিত হওয়ার কথা। দেশের প্রতি চলচ্চিত্রশিল্পীদের দায়বদ্ধতাসহ নানা বিষয়। সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি ্যক্ত করে আকবর হোসেন পাঠান ফারুক বলেন, আজীবন সম্মাননা এমনিতে পাওয়া যায় না। এজন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। এই সম্মান আমার একার নয়। সবার। আমার হৃদয় থেকে এই সম্মান সবাইকে উৎসর্গ করলাম। এই প্রাপ্তিতে বারবার আজকে একটি নাম মনে পড়ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। এই মহামানব ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদ থেকে এদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণের আইনটি পাস করিয়ে আনেন। সেই বিশেষ দিবসটির সূত্র ধরে মনে পড়ে ১৯৮৩ সালের কথা। চলচ্চিত্রের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান হয়েছিল এফডিসিতে। আসলে সেটা বঙ্গবন্ধুর চলচ্চিত্র দিবস ছিল না। ওটা ছিল ওই সময়ের সরকার প্রধানকে আনন্দ দেয়ার উৎসব। শুনেছি সেই সময়ের রাষ্ট্রপ্রধান নাকি গুনগুন করে গাইতেন। অনেক সময় নাকি নাচতেনও। তিনি নিজেকে শিল্পী মনে করতেন। কিন্তু এদেশের জনগণ তাকে বলত স্বৈরাচার। ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য এই স্বৈরশাসকের একদল লাঠিয়াল আমার কাছে এসেছিল। তারা আমাকে প্রশ্ন করে, বঙ্গবন্ধুর নাম বলতে না দিলে আপনি নাকি অনুষ্ঠানে যাবেন না। আমি বললাম, হ্যাঁ। আমাকে বলা হলো, বঙ্গবন্ধুর কথা আপনি বলতে পারবেন না এবং আপনাকে ওই অনুষ্ঠানে যেতে হবে। তাকে বললাম, এটা কি ধরনের কথা? এই যে বাইস্কোপ বানাই, সেটা বানানোর সুযোগটা কে দিয়েছে? বঙ্গবন্ধু। তখন তারা রক্তচক্ষু দেখিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, যা খুশি করুন আমার কোন দুঃখ নাই। আক্ষেপ করে ফারুক বলেন, আমরা চলচ্চিত্র বানাই। কিন্তু দেখাতে পারি না। টুকে রেজ্যুলেশনের ছবি দেখানোর প্রজেক্টর আমাদের নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, এই মেশিন যেন শিগগিরই আসে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বর্তমান সরকার উদারমনা। চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সিনেমা হল মালিক ও নির্মাতাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিলে চলচ্চিত্রশিল্পী আবার ঘুরে দাঁড়াবে। রাজনৈতিক কারণে আমাকে ধাক্কা খেতে হয়েছে। পঁচাত্তরের পর থেকে ১৯বার আমাকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কারণ আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলি। এটাই আমার দোষ। ৫৭ বছর আমি বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আদর্শকে লালন করে আছি। স্বাধীনতার পর দেশের এতটা উন্নয়ন আগে হয়নি। নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকালে দেখবেন, ওই চোখ কথা কয়। বলে, আরে তোরাই তো আমার ছেলে। তোরাই তো এদেশটাকে সোনার বাংলা বানাবি। বঙ্গবন্ধুর চোখ বলে, এদেশের কোন মানুষ যেন কষ্ট না পায়। উন্নয়ন কখনো থামাবা না। বঙ্গবন্ধুর ওই চোখ বলে, এদেশের কৃষক-শ্রমিক যেন বঞ্চিত না হয়। ওই চোখ বলে, এদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। একটি মানুষও যেন অশিক্ষিত না থাকে। ওই চোখ বলে, এদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে হবে। এদেশের মাটিকে ভালবাসতে হবে। ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তে ভিজে আছে এই এদেশের মাটি। বঙ্গবন্ধুর ওই চোখ এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চোখে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তাই আমাদের স্লোগান হোক ‘ভালবাসার মানুষ চাই’। শেখ হাসিনাকে বারবার দেখতে চাই। কারণ, আমরা তার কাছ থেকে ভালবাসা পাই। মাথায় হাত রেখে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘তুই অনেক বড় হবি’Ñ ববিতা ॥ অনুভূতি ব্যক্ত করে ফরিদা আখতার ববিতা বলেন, আনন্দের এ মহালগ্নে মনে পড়ছে একমাত্র সন্তান অনীর কথা। মনে পড়ছে, আমার বাবা-মা, মেন্টর জহির রায়হানকে। স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন তুই একদিন অনেক বড় হবি। লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে ঘুরেছি সারা বিশ্ব। বুড়িগঙ্গা থেকে বলগা অতিক্রম করে সারা বিশ্ব ঘুরে এই পতাকা তুলে ধরেছি। বিশ্ব অঙ্গনে গিয়ে অনুভব করেছি, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ যেন একই মালায় গাঁথা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ আমার কাছে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এতে আমি গর্ব অনুভুব করেছি। মনে হয়েছে, এই মহান নেতা বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের পিলার। মহাত্মা গান্ধী, চে গুয়েভারাদের তিনি অতিক্রম করে গেছেন। হিমালয়ের চেয়ে বড় এই নেতার স্বপ্নের পথ ধরে আজ আমরা পৌঁছে গেছি গ্লোবাল ভিলেজে। বিশ্ব অঙ্গনে আজ আমাদের অনেক অর্জন। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে থাকা এক গর্বিত দেশ। ইতিহাসের এই মহানায়কের উত্তরাধিকার আজ প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তার ঐকান্তিকতায় স্থবির ও মুখ থুবড়ে পড়া চলচ্চিত্রশিল্প আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জীবনের সঙ্গে চলচ্চিত্রের সম্পর্কের উল্লেখ করে ববিতা বলেন, চলচ্চিত্র হচ্ছে জীবনের প্রতিফলন। আমাদের পোড় খাওয়া যাপিত জীবনের না বলা গল্প, মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ নানা বিষয় উঠে আসে এই শিল্পমাধ্যমে। এভাবেই এই শিল্পমাধ্যমটি আদর্শিক সমাজ গঠনের হাতিয়ার। সে কারণেই একজন চলচ্চিত্রশিল্পী হিসেবে দেশ ও সমাজের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। এই দায়বদ্ধতা থেকেই আমার অবিরাম পথচলা। জীবনের আর আমার কিছুই চাওয়া নেই। শুধুই ভালবাসা। সেই ভালবাসাতেই বারবার ফিরে আসবো ধানসিঁড়ি নদীর এই চিরসবুজ বাংলায়। এই অভিনেত্রী নায়করাজ রাজ্জাকের স্মৃতি ধরে রাখতে রাজ্জাক ফিল্ম ইনস্টিটিউট অথবা বাংলাদেশ রাজ্জাক ফিল্ম আর্কাইভ নামকরণের আবেদন জানান। জীবনের শেষ সময়ে প্রয়াত শিল্পী রানী সরকারের বাসস্থান ও চিকিৎসা সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিল্পীদের জন্য স্বল্পমূল্যে বাসস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারী উদ্যোগ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
×