ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৯ জুলাই ২০১৮

 বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সেবা দিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রথম বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)। চুক্তির ফলে স্যাটেলাইট থেকে নৌযানে অত্যাধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। রবিবার সচিবালয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা বিপণনের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বিসিএসসিএলের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ ও বিসিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন। এ সময় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার উপস্থিত ছিলেন। চুক্তির আওতায় স্যাটেলাইটের একটি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিসিএসসিএল সেবা দিতে শুরু করতে পারে বলে বিসিএসসিএল এমডি জানিয়েছেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ নদী ও সমুদ্র পথে চলমান জাহাজগুলোতে উচ্চগতির টেলিযোগাযোগ সেবা না থাকায় সেখানে টেলিফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও টেলিযোগাযোগের অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে বিসিএসসিএল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার অধীনে বন্দর, ফেরি-ঘাট, জাহাজ ও অন্যান্য স্থাপনায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রয়োজনীয় সেবা দেবে। ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র ও স্থানীয় নদী চ্যানেলগুলোতে থাকা জাহাজগুলো স্থলভাগের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবাগ্রহণ ও টেলিভিশন দেখা যাবে। একই সঙ্গে নৌযানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। জাহাজে অবস্থানরত নাবিক ও যাত্রীরা সর্বক্ষণিক টেলিযোগাযোগের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন নৌবন্দর ও বাতিঘরেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়া হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ চুক্তিটি হচ্ছে বিসিএসসিএলের সেবা বাজারজাত করার প্রথম সমঝোতা চুক্তি। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, এই স্যাটেলাইটের মালিকানা নাকি দুই ব্যক্তি নিয়ে নিয়েছেন। আজকে আমাদের স্যাটেলাইট কোম্পানি চুক্তি স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে এটি বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ। অনেকে এ কথাও বলেছিলেন, স্যাটেলাইট বানাইছে কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এই কথাটির জবাব সম্ভবত আজকে আমরা দিতে পারছি। এই পারাটা আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে সর্বপ্রথম নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হচ্ছে। এ জন্য আমার মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি গর্বিত। অভ্যন্তরীণ নৌপথে ও সাগরে যেসব নৌযান চলাচল করবে সেগুলোর অবস্থান, গতিবিধি এবং সার্বিক অবস্থা আমরা জানতে পারব স্যাটেলাইটের সেবা গ্রহণের মাধ্যমে। পুরনো তিনটি লাইট হাউস আধুনিকায়নের সঙ্গে আরও সাতটি লাইট হাউস করছি। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন সচিব আবদুস সামাদ বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরে বছরে ৪ হাজার নৌযান চলাচল করে। এগুলোর গতিবিধি আমরা নিরীক্ষণ করে থাকি। স্যাটেলাইট সেবার মাধ্যমে এগুলো আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারব। অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে ৩৫ হাজার জাহাজ চলাচল করে। স্যাটেলাইট সেবার মাধ্যমে আমরা দুর্ঘটনা রোধ করতে পারব। যেটা সার্বিক জিডিপিতে বড় কন্ট্রিবিউশন হবে। উল্লেখ্য ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হয়। ২৩ মে স্যাটেলাইটটি এর জন্য নির্দিষ্ট জিওস্টেশনারি স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব অবস্থানে পৌঁছায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০ ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪ সি-ব্যান্ডের। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ইন অরবিট টেস্ট (আইওটি) সফলভাবে শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে এর নেটওয়ার্ক এ্যাকসেপটেন্স রিভিউ (এনএআর) চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত হবে বলে বিসিএসসিএল জানিয়েছে।
×