ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্দোলনকারীদের কার্যক্রমের সঙ্গে জঙ্গীবাদের মিল আছে -ভিসি

১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে কোটা সংস্কার কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৯ জুলাই ২০১৮

 ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে কোটা সংস্কার কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন ১৫ কর্মদিবসের মধ্যেই সরকারের কাছে জমা দিচ্ছে সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। প্রথম বৈঠকে কোটার বিষয়ে দেশী-বিদেশী তথ্য সংগ্রহেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানকে পৃথক দুই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে পদযাত্রা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক। তবে ফেসবুকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের পদক্ষেপের সঙ্গে জঙ্গী কর্মকা-ের মিল আছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। রবিবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনায় সরকার গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রথম বৈঠক। মন্ত্রিপরিষিদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে প্রায় দেড় ঘণ্টা এই বৈঠক চলে। কমিটির অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদ, বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব আকতারী মমতাজ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান। কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বিধি) আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বেঁধে দেয়া ১৫ দিন সময়ের মধ্যেই তারা প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করবে। এ লক্ষ্যে আগামী সাত দিনের মধ্যে কোটা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন তারা। আবুল কাশেম বলেন, প্রথম বৈঠকে মূলত কমিটির কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোটা সংক্রান্ত দেশে-বিদেশে যত তথ্য রয়েছে বা বিভিন্ন সময় গঠিত কমিশন বা কমিটির যেসব রিপোর্ট রয়েছে তা যত দ্রুত সম্ভব সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে সেসব প্রতিবেদন সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেসব রিপোর্ট, প্রতিবেদন বা তথ্য পাওয়ার পর দ্বিতীয় বৈঠকে বসবে কমিটি। তিনি বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, পিএসসির প্রতিবেদন, বিভিন্ন সময় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের কমিশন বা তাদের ব্যক্তিগত রিপোর্টও রয়েছে। যত দ্রুত পারি সেগুলো সংগ্রহ করব। আমরা এটা নিয়ে সর্বক্ষণিক কাজ করতে চাচ্ছি। এটা আসলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চেষ্টা করছি সংগ্রহ করার। এগুলো সংগ্রহের ওপর পরবর্তী সভা নির্ভর করবে। কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া হবে সেই প্রশ্নে আবুল কাশেম বলেন, চেষ্টা করছি যত দ্রুত পারি, কর্মপরিধি অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার মধ্যেই রয়েছি। কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনায় ‘এক্সপার্ট বোর্ড’ করা হবে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিবেদনগুলো সংগ্রহের পর সভা করে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কোট সংস্কার নিয়ে কমিটি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন কি না জানতে চাইলে কাশেম বলেন, আন্দোলনকারী যারা তারা তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করছে। আসলে তারা অনেকেই তথ্য না জেনেও আন্দোলন করছে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু চাচ্ছেন এ বিষয়ে ভাল-সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য, সেজন্য শক্তিশালী কমিটি বাস্তবধর্মী এবং তথ্যগত যে বিষয় রয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদযাত্রায় প্রতিবাদ ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে পদযাত্রা করেছেন কিছু শিক্ষক। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রা করেন তারা। ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের’ ব্যানারে এ পদযাত্রা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ শিক্ষক। যেসব স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়েছে শিক্ষকরা সেসব স্থান প্রদক্ষিণ করেন। পদযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিরাজ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান ও ইউল্যাবের ভিজিটিং অধ্যাপক আজফার হোসেন। অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক। সরকার তা মেনে নিয়েছে। তার পরও যৌক্তিক আন্দোলনে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত লজ্জাজনক, দুঃখজনক ও অবিশ্বাস্যও বটে। কারণ পাকিস্তান ও ব্রিটিশ শাসনামলে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। আন্দোলন যখন চলছিল তখন সমাজের সকল অংশ যেভাবে তাদের সমর্থন দিয়েছিল তাতেই বোঝা যায় শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা অসন্তোষজনক। সরকারও সেটা স্বীকার করেছে। সরকার সেটা স্বীকার করে কমিটি গঠন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কমিটি গঠনে বিলম্ব করেছে, বিলম্ব করার কারণে আবার আন্দোলন হয়েছে। এই আন্দোলন যদি তারা অব্যাহত না করত তাহলে কমিটি গঠন হতো না। আন্দোলনকারীদের কর্মকান্ড জঙ্গীবাদের বহির্প্রকাশ- উপাচার্য ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পদক্ষেপের সঙ্গে জঙ্গী কর্মকান্ডের মিল আছে বলে অভিযোগ এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সব কাজই জঙ্গীবাদের বহির্প্রকাশ। নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা ফেসবুক লাইভে এসে জঙ্গীদের মতো করে ভিডিও বার্তা দিয়ে কর্মসূচী বা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে। উপাচার্য বলেন, অনেক সুস্পষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, একটি বড় অপশক্তি ক্রিয়াশীল আছে। উদাহরণ হিসেবে বলব ফেসবুক লাইভে তাদের ভিডিও বার্তার কথা। আমার কয়েক সহকর্মী একটি লাইভ ভিডিও দেখিয়েছেন। সেটি দেখলাম। দেখার পর মনে হলো জঙ্গীগোষ্ঠী তালেবান ও বোকোহারাম যেমন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানি ও নাশকতার অপপ্রয়াস নেয়, কোটা আন্দোলনকারীদের ভিডিওতে ঠিক তেমন একটি প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি। বলেন, ভিডিওতে দেখা গেলো, আন্দোলনকারীরা একটি চেয়ারে বসা। সেখান থেকে বিভিন্ন কর্মপন্থার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কর্মসূচী পালনের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এই বার্তায় একটা কথা আছে, আমরা মৃত্যুকে ভয় পাব না। এটা খুব উগ্র চরমপন্থী। এ ধরনের মতাদর্শ-ভাবাদর্শ প্রচারের ভিডিও আমি নিজে দেখেছি। এমন ভিডিও দুই-তিন ঘণ্টা পরপর ছাড়া হচ্ছে। জঙ্গী কর্মকান্ডের আরেকটি বহির্প্রকাশ হলো, তারা অশুভ কাজ সম্পাদনের জন্য নারীদের ব্যবহার করে। একইভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে মেয়েদের হলগুলোতে গভীর রাতে ২০-২৫ ছাত্রীকে দিয়ে উচ্চৈস্বরে চিৎকারের মাধ্যমে মিছিল করানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থী কোন ধরনের কাজ আমরা বরদাশত করব না। তাদের এমন মনোভাবের সঙ্গে জঙ্গী কর্মকা-ের মিল আছে। তারা কারা? কোন রাজনৈতিক অশুভশক্তি, আমরা তা জানি না। সেটা বের করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদেরকে সহায়তা করব আমরা। ঢাকায় আনা হয়েছে আহত তরিকুলকে ॥ রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার ও রাবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলায় আহত শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি এক সপ্তাহেও। উন্নত চিকিৎসার জন্য রবিবার সকালে তরিকুলের সহপাঠীরা একটি এ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। সরকারী হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়ার পর তরিকুল বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীর রয়্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালটির চিকিৎসক সাঈদ আহমেদ বাবুর তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল। এই চিকিৎসক জানান, তরিকুলের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। তার পা এবং কোমরের হাড় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে আহত কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল ইসলাম নুরের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে বলছে তার পরিবার। একটি বেসরকারী হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
×