স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আর তারই চেষ্টায় চলচ্চিত্র শিল্পেরও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয়। আমাদের চলচ্চিত্র কোন এক সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এখন কিন্তু আবার চলচ্চিত্রের সেই জগতটা ফিরে এসেছে। তবে আমি চাই আমাদের চলচ্চিত্র ও শিল্পীরা আরও আধুনিক হবে। কেননা এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ। সম্প্রতি আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উত্থাপন করেছি। আমাদের সিনেমা তৈরি বা পরিবেশনার ক্ষেত্রেও আধুনিকতা আসুক। ডিজিটাল পদ্ধতির এই চলচ্চিত্র আরও বেশি করে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে যাক’- রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে রবিবার বিকেলে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, আমরা আরও উন্নতমানের ছবি বানাতে চাই। যে ছবি সমাজ সংস্কারে একটা ভাল ভূমিকা রাখবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, আমাদের সংগ্রামের সঠিক ইতিহাসের চিত্রগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। কোন দিকেই আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। শিল্পের দিক থেকে, বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য বলছি, আমরা বিশ্বমানের চলচ্চিত্র বানিয়ে যেন এগিয়ে যেতে পারি। তার জন্য যা যা করা দরকার আমি সবই করব।
বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পূর্বঘোষিত ২৬টি ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য সচিব আবদুল মালেক ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপি।
এ সময় চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য চিত্রনায়িকা ফরিদা আকতার ববিতা ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছেন তৌকীর আহমেদ নির্মিত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’। সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী তার ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের জন্য। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও কুসুম শিকদার। তাদের অভিনীত চলচ্চিত্রের নাম যথাক্রমে ‘অস্তিত্ব’ ও ‘শঙ্খচিল’।
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এস এম কামরুল হাসানের ‘ঘ্রাণ’। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পান যৌথভাবে একান্তর মিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ‘জন্মসাথী’ ছবির জন্য। একান্তর মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন মোজাম্মেল হক বাবু এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে মফিদুল হক।
সেরা কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেলেন মেহের আফরোজ শাওন ও ওয়াকিল আহমেদ। ছবির নাম যথাক্রমে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ও ‘দর্শন বিসর্জন’।
পার্শ্ব চরিত্রের সেরা অভিনেতা হিসেবে যৌথভাবে পুরস্কার পেয়েছেন আলীরাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে) এবং সেরা অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)। সেরা খল চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম ‘অজ্ঞাতনামা’ ছবির জন্য। ‘শঙ্খচিল’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আনুন রহমান খান। শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকারের পুরস্কার পেলেন ইমন সাহা ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ ছবির জন্য। ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ সিনেমার ‘বিধিরে ও বিধি বিধি’ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কার পেয়েছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক মোঃ হাবিব ‘নিয়তি’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার তৌকীর আহমেদ ‘অজ্ঞাতনামা’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার যৌথভাবে অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম ‘আয়নাবাজি’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা সৈয়দ রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডারকনস্ট্রাকশন), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবজি), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ (শঙ্খচিল), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান (আয়নাবজি), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক বিপন নাথ (আয়নাবাজি), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা পুরস্কার পেলেন যৌথভাবে সাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি)। শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান মানিক ‘আন্ডারকনস্ট্রাকশন’ ছবির জন্য।
সবশেষে ছিল চলচ্চিত্র শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে টিকে থাকার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশকেও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগুতে হবে। আমরা সেভাবেই আমাদের শিশু-কিশোরদের গড়ে তুলতে চাই এবং শিক্ষাই তাদের বিকাশের একমাত্র চাবিকাঠি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার তার তেজগাঁও কার্যালয়ে দেশব্যাপী সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০১৮ এর নির্বাচিত জাতীয় পর্যায়ের ১২ জন সেরা মেধাবীর মাঝে পুরস্কার বিতরণকালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসস’র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে উন্নত ও সমৃদ্ধভাবে গড়ে তোলার মূল হাতিয়ার হলো শিক্ষা। কেউ যদি শিক্ষিত হয় তাহলে যেকোন প্রতিকূল পরিবেশে সে টিকে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘সবাইকে একটা কথাই বলব, শিক্ষাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। এর চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নেই। এই সম্পদ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, ছিনতাই করতে পারবে না। শিক্ষাটা যদি থাকে জীবনটাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায়।’ ডিজিটাল বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দেশের আরও দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছি, যার মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে নেটওয়ার্কটা চালু হবে। সমুদ্র থেকে বাংলাদেশের সর্বত্র যোগাযোগ স্থাপনে আমাদের স্যাটেলাইট কাজ করবে। শিক্ষায়, স্বাস্থ্যসেবায় সব কিছুতেই অবদান রাখতে পারবে। তিনি বলেন, ‘সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে, আরো জটিল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির সন্নিবেশ ঘটাচ্ছে, যেগুলো চালাতে ভবিষ্যতে অনেক দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের শিশুরাই একদিন সবকিছু পরিচালনা করবে। সেই সুযোগটাই আমরা সৃষ্টি করতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন, জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক একটি জাতি আমরা গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’ অনুষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাই একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর এই শিক্ষাটাই তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা তাদের সন্তানদের দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এবং রেহানা আমাদের ছেলেমেয়েদের একটা কথাই বলি, একটাই সম্পদ সেটা হচ্ছে শিক্ষা। তোমরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা এতো মেধাবী, আমি মনে করি, বিশ্বে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বেশি মেধাবী।’ ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের একটু সুযোগ করে দিলে তারা অত্যন্ত ভাল করে। আমাদের ছেলেমেয়েদের আমরা সেভাবেই গড়তে চাই যেন আগামী দিনে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় তারা এগিয়ে থাকে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার এজন্যই মেধা অন্বেষণ কর্মসূচীর বাস্তবায়ন শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে-বিদেশে বহু জায়গায় গিয়ে আমার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। গ্রাম বাংলায় সোনার টুকরো ছড়িয়ে আছে। আমরা সেই সোনার টুকরোগুলো খুঁজে বের করছি। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছি।’ সরকার বিজ্ঞান, কারিগরি শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করছে, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান, মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদানসহ শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। আর দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষাটাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার।’