ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাক্স হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে র‌্যাব, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ওষুধ প্রশাসনের যৌথ অভিযানের পর তিন ঘণ্টার মধ্যেই মালিক সমিতি ও চট্টগ্রাম বিএমএ এ সিদ্ধান্ত নেয় অভিযান ঠেকাতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর ফটকে তালা

স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ ॥ অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় চট্টগ্রামে হাসপাতাল মালিকদের ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৯ জুলাই ২০১৮

স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ ॥ অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় চট্টগ্রামে হাসপাতাল মালিকদের ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চিকিৎসাসেবায় মারাত্মক অব্যবস্থাপনার প্রেক্ষাপটে রবিবার র‌্যাব-স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে অভিযান শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে এর প্রতিবাদে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণার এ কর্মসূচীকে সমর্থন দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার পক্ষ থেকে। দুপুর ১টা থেকে নগরীর সবক’টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ ঘোষণার আগে স্থানীয় বিএমএ কার্যালয়ে জরুরী সভা শেষে প্রাইভেট হসপিটাল এ্যান্ড ল্যাব ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী খান তাদের কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি থাকা রোগীরা এ ঘোষণার আওতায় পড়বে না। এছাড়া বেসরকারী পর্যায়ে চিকিৎসকরা প্রয়োজনে চমেক হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতে পারবেন। রবিবার দুপুরে বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি নামের একটি প্যাডে সভাপতি হিসেবে ডাঃ আবুল কাশেম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাংবাদিক কর্তৃক বেসরকারী চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর নগ্ন হামলার প্রতিবাদে জেলা, উপজেলাসহ সবস্তরের প্রাইভেট প্রাকটিস, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বেসরকারী ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন সাংবাদিক কন্যা শিশু রাফিদা খান রাইফার চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতির বিষয়টি দুটি তদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসার পর এই নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রিপোর্টে বিশেষজ্ঞসহ ৩ চিকিৎসককে দায়ী করা হয়। যারা স্থানীয় ম্যাক্স হসপিটালে চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ ঘটনার পর তাদের ২ জনকে অব্যাহতি ও ১ জনকে ওই হসপিটালে চিকিৎসা সেবায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বিএমএ নেতারা অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেলেও সাংবাদিক সমাজ এ নিয়ে বিএমএকে কখনও দোষারোপ করেনি। যারা সাংবাদিক কন্যার অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে। এ অবস্থায় রবিবার চট্টগ্রামে র‌্যাব, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার অভিযোগ নিয়ে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে শুরু হয়েছে যৌথ অভিযান। শুরুতেই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র‌্যাব সদস্যদের নিয়ে অভিযান শুরু হয় মেহেদীবাগের ম্যাক্স হসপিটালে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে অভিযান। অভিযানে বেরিয়ে আসে ব্যাপক ত্রুটি, অব্যবস্থাপনা, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারসহ অন্য ক্লিনিক এমনকি বিদেশ থেকে অবৈধপন্থায় ল্যাব টেস্ট করিয়ে আনার বিষয়টি। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন চট্টগ্রামের সাংবাদিক কন্যা রাইফা খানের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক সমাজ আন্দোলন করছে। ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত রিপোর্টে ওই ম্যাক্স হসপিটালের বিশেষজ্ঞসহ ৩ চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলা ও অন্যান্য বিষয়াদির চিত্র উঠে এসেছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকদের পক্ষে বিএমএ নেতারা বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টায় রয়েছেন। সাংবাদিক নেতারা বারবার ঘোষণা দিয়ে আসছেন সাংবাদিক সমাজ বিএমএর বিরুদ্ধে নয়। ভুল বা অবহেলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে। এরপরও গোটা সাংবাদিক সমাজের বিরুদ্ধে কতিপয় বিএমএ ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ড্যাব নেতারা বিষোদগার করে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে আরেকটি তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। যারা ইতোমধ্যে ম্যাক্স হসপিটালের ১১টি অনিয়ম চিহ্নিতও করেছে। এদিকে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও রবিবার থেকে শুরু হয়েছে বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে র‌্যাব, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসনের যৌথ অভিযান। সকালে অফিস সময় শুরু হওয়ার পর কয়েকটি ক্লিনিক ও বেসরকারী হাসপাতালে র‌্যাব সদস্যরা হাজির হয়। প্রথমে শুরু হয় ম্যাক্স হসপিটালে অভিযান। সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা দেড়টা নাগাদ চলে এই অভিযান। অভিযানে বেরিয়ে আসে অব্যবস্থাপনা, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের মজুদ, যোগ্যতাবিহীন ল্যাব কর্মী ও সরকারী নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় নানা বিষয়াদির অনুপস্থিতি। ফলে ম্যাক্স হসপিটালকে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোর অবসান ঘটাতে সময় দেয়া হয় ১৫ দিন। এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগেই অর্থাৎ বেলা ১টার দিকে বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিকদের সংগঠনের নেতা ডাঃ লিয়াকত আলী খান জিইসি মোড়স্থ বিএমএ কার্যালয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামে একযোগে তাৎক্ষণিকভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে চিকিৎসা দান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে নগরীর সবক’টি বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি ক্লিনিক ও হাসপাতালের প্রধান ফটকও বন্ধ করে দেয়া হয়। যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডাঃ দেওয়ান মেহেদী হাসান ও ওষুধ প্রশাসনের চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক গুলশান জাহান। র‌্যাবের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কর্মকর্তা মিমতানুর রহমান। ম্যাক্স হসপিটালে অভিযান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করেন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম, ডাঃ মোঃ মেহেদী হাসান ও গুলশান জাহান। মূল ব্রিফিং করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম। বেলা ২টা নাগাদ ব্রিফিংকালে তিনি অভিযানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ২৯ জুন যে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে সে ঘটনার সঙ্গে এ অভিযানের কোন সম্পর্ক নেই। ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও চিকিৎসা জগতে যে অব্যবস্থাপনা, ত্রুটি, অবহেলা, ভুল চিকিৎসা, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের জমজমাট প্রয়োগ চলছে এটি নিয়মিত সেই অভিযানেরই অংশ। ম্যাক্স হসপিটালে অভিযানের যে চিত্র পাওয়া গেছে তিনি তার জানান দিয়ে বলেন, যে হসপিটালে চিকিৎসা নিতে আসে ভুল বা অবহেলাজনিত কারণে রোগী মারা যায় সে ধরনের হাসপাতাল বা ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়াই ভাল। তবে বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারী নিয়ম কানুন রয়েছে। এছাড়া অব্যবস্থাপনায় জড়িতদের সময় দিয়ে বিভিন্ন শর্ত সম্পন্ন করার বিষয়টিও রয়েছে। তিনি জানান, এই ম্যাক্স হসপিটালের রোগ নিরূপণ কেন্দ্রে সব রোগের পরীক্ষা না করার প্রমাণ তারা পেয়েছেন। অথচ, এই হসপিটালের প্যাডে প্রতিদিন রিপোর্ট হয় এবং তা অন্য ক্লিনিক বা ল্যাব এমনকি বিদেশ থেকে করে আনার প্রমাণও তারা পেয়েছেন। হসপিটালটির আটতলা ভবনের তৃতীয় তলায় রোগ নিরূপণ কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি তারা পেয়েছেন। এছাড়া পাওয়া গেছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের মজুদ। এমন ওষুধও পাওয়া গেছে, যে ওষুধের মূল্য ৫ টাকা, সেগুলোতে ৫০ টাকার স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ম্যাক্স হসপিটাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের বিভিন্ন রিপোর্ট পপুলার, এপিকসহ বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করিয়ে নিজেদের নামে চালিয়ে দেয়ার প্রমাণও তারা পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, যে ডাক্তার রিপোর্ট তৈরি করতেন তার স্থলে অন্য ডাক্তারের স্বাক্ষর থাকার প্রমাণও তারা পেয়েছেন। এছাড়া কিছু কিছু রিপোর্টের স্যাম্পল বিদেশেও পাঠিয়েছেন। সরকারী অনুমোদন ব্যতিরেকে এ ধরনের স্যাম্পল বিদেশে পাঠানো সম্পূর্ণ বেআইনী বলে ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম জানান। অভিযানে পাওয়া গেছে, দুবছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ম্যাক্স হাসপাতালের ফার্মেসির লাইসেন্স। এছাড়া হাসপাতালে অনুমোদিত কোন ফার্মাসিস্টও নেই। ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন রেজিস্ট্রেশন নাম্বারও নেই। ত্রুটিপূর্ণ লাইসেন্সে, অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স দ্বারা এই হসপিটালটি যে পরিচালিত হচ্ছে তার প্রমাণও তারা পেয়েছেন। ম্যাক্স হসপিটাল অভিযান শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালত গোল পাহাড় মোড় এলাকা সংলগ্ন সিএসসিআর নামের আরেকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষে জানানো হয়েছে অভিযান চলবে। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লিস্ট করেছেন। ঢাকার ন্যায় চট্টগ্রামেও অভিযান চলবে। এদিকে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে দুপুর থেকে চিকিৎসা ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ায় এবং রোগী ভর্তি না করার ঘটনায় চট্টগ্রামে চিকিৎসা সেবায় রীতিমতো বিপর্যয় নেমে এসেছে। রোগীর স্বজনদের চলছে আহাজারি। মুমূর্ষু ও জটিল রোগীদের নিয়ে স্বজনরা দৌড়াচ্ছেন সরকারী চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে এমনিতেই ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীতে ঠাসা। বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়ায় এ চিত্র রীতিমতো ভয়ানক। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিএসসিআর নামের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছিল। শুরুতে বেরিয়ে আসে এই ক্লিনিকে একটি ফার্মেসির লাইসেন্স নিয়ে দুটি ফার্মেসি পরিচালিত হয়ে আসছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম জানান, এই হাসপাতালের একটি ফার্মেসি নিচতলায় এবং অপরটি ৭ম তলায়। এর মধ্যে নিচতলার ফার্মের লাইসেন্স থাকলেও সপ্তম তলার ফার্মের কোন লাইসেন্স নেই। এছাড়া আরও বহু অনিয়ম পাওয়া গেছে তা তারা নথিভুক্ত করছেন। এরপর অন্যান্য লিস্টেড হাসপাতালেও অভিযান চলবে। কিন্তু তার আগেই সবকটি বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালের প্রবেশ মুখের সাটার ও ফটক বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মালিক কর্তৃপক্ষ। বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির চট্টগ্রাম বিএমএর পক্ষ থেকে সমর্থন দেয়া হলেও তাদের পক্ষে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রদান করা হয়নি। আকস্মিকভাবে পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়া বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ ঘোষণা ও এ অবৈধ প্রক্রিয়াকে বিএমএর পক্ষে সমর্থন দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে যুগপৎভাবে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। যেখানে অপ ও ভুল চিকিৎসায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত রোগীদের জীবনহানি ঘটছে, সেখানে সরকার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত ও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারী হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সরকারী পর্যায়ের অভিযানকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি রোগীদের জিম্মি করে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রাখার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিই-বা হতে পারে। চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে সাংবাদিক কন্যা রাইফা খান মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক সমাজ সোচ্চার হওয়ার পর একে একে বেসরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও জালিয়াতির জঞ্জাল তথা থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার মতো হওয়ায় চিকিৎসক সমাজ অনেকটা প্রতিশোধস্পৃহায় মেতে উঠেছে বলে প্রতীয়মান। অথচ চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীনসহ দুটি কমিটির রিপোর্টেই সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যু দিয়ে বিশেষজ্ঞ তিন চিকিৎসকের সেবাদানে অবহেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও হাসপাতালের নিয়োগকৃত দুই চিকিৎসককে ইতোমধ্যে কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এ অবস্থায় নিজেদের ত্রুটি ঢাকতে এবং অন্যান্য ক্লিনিক হাসপাতালের অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও জালিয়াতির জঞ্জাল ঢাকতে আকস্মিকভাবে বেসরকারী সব ক্লিনিক হাসপাতালে রবিবার দুপুর থেকে চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা সকল মহলকে ক্ষুব্ধ করেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারী পর্যায় থেকে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গৃহীত না হলে চিকিৎসা গ্রহণকারীদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় যে নেমে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএমডিসিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ॥ বিশেষ প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের মেহেদীবাগ এলাকায় ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় দোষী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের করা পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সভায় তদন্ত কমিটির দুটি রিপোর্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্তের সুপারিশ অনুযায়ী ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়ে অনিয়ম আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দূর করার নির্দেশ দেন তিনি।
×