ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিব বর্ষ

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৯ জুলাই ২০১৮

মুজিব বর্ষ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ ও ২০২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচী পালন করা হবে দেশব্যাপী। এমনিতে প্রতিবছর জাতির জনকের জন্মদিন উপলক্ষে ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস এবং ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার দিনটিকে স্মরণ করে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। তবে মহীরুহসম কোন জাতীয় ব্যক্তির জন্মশতবর্ষ মানে আরও বিশেষ কিছু অবশ্যই, যা ইতিহাসে চিরস্থায়ী দাগ রেখে যেতে সক্ষম হতে পারে। সঙ্গত কারণেই আমরা আশা করব যে, মুজিব বর্ষের বছরব্যাপী কর্মসূচী ও অনুষ্ঠানমালা তেমনই জাঁকজমকপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও আড়ম্বরপূর্ণ হবে। এর জন্য এখন থেকেই যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে পূর্ণ হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের জন্মের শত বছর। আর ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছর। এ কথা বলা মোটেও অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশও। এ কথা তো ইতিহাসের অবিসংবাদী সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বোধ করি অপূর্ণ ও অধরাই থেকে যেত। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি সত্তরের নির্বাচনে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে তিনি বজ্রকণ্ঠে যে ভাষণ দেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তা হয়ে আছে এক চির অম্লান মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অমল ধবল স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। তিনি এবং কেবল তিনিই তাঁর বলিষ্ঠ সুযোগ্য সুদৃঢ় অনমনীয় অকুতোভয়, সর্বোপরি দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাধীনতার সুবর্ণ তোরণে। এর পরের ইতিহাস সবার জানা এবং তা বিশ্ববাসীরও অজানা নয়। ভাষণটি ইতোমধ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি পেয়েছে। কেবল একটি ভাষণ ‘ওয়ার্ল্ডস ডুকমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির গৌরব বহির্বিশ্বে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশকে অভিহিত করেছেন ‘বিশ্ব নেতা’ হিসেবে, যা অনুসরণীয় হতে পারে অন্যান্য দেশের। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। বাস্তবায়িত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ অন্তত ১০টি মেগা প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথ ঘিরে। এসবই মাত্র কয়েক বছরে সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। এও ইতিহাসের এক অমোঘ সত্য যে, জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ তথা মুজিব বর্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে তাঁরই কন্যার হাত ধরে। অতঃপর জাতির জনকের প্রজ্বলিত দীপ্ত শিখা তথা সমুজ্জ্বল আলো পৌঁছে যাক বাংলার ঘরে ঘরে, মাঠ-ঘাট প্রান্তরে, আকাশে-বাতাসে সর্বত্রÑ এই আমাদের প্রত্যাশা।
×