ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরেণ্য অভিনয়শিল্পী রীনা রহমান

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৯ জুলাই ২০১৮

বরেণ্য অভিনয়শিল্পী রীনা রহমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রীনা রহমান। দেশের অন্যতম একজন গুণী অভিনয়শিল্পী। একাধারে তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্র, টিভি নাটক টেলিফিল্ম এবং খন্ড ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া তিনি একজন বলিষ্ঠ মঞ্চকর্মী হিসেবে সংশ্লিষ্টদের কাছে নন্দিত হয়েছে। বর্তমানে মুক্তালয় নাট্যাঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নিয়মিতভাবে মঞ্চে অভিনয় করে চলেছেন। অভিনয় শিল্পে অবদানের জন্য বেশকিছু পুরস্কার অর্জন করেছেন। তবে জাতীয়ভাবে তিনি কোন পুরস্কার পাননি। এ নিয়ে অবশ্য তার কোন আক্ষেপ নেই। নিরন্তর অভিনয় করে চলেছেন। রীনা রহমান ১৯৫৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুছা খাঁ, মাতার নাম লতিফা নেছা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ‘এ বাড়ি ও বাড়ি’ নাটকের মাধ্যমে প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে নিয়মিত মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতে থাকেন। ১৯৭৯ সাল থেকে নিয়মিত পেশাদার অভিনয় শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন রীনা রহমান। এরই মধ্যে নৈমিত্তিক শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয়ে যাত্রা শুরু হয় তার, পাশাপাশি শুরু হয় চলচ্চিত্রে অভিনয়। শত শত মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। দেশের এমন কোন জেলা নেই যেখানে তিনি অভিনয় করেন নি। এমনকি দেশের বাইরে যেমন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ স্যাটেলাইট টেলিভিশন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলে তার অভিনীত নাটক, টেলিফিল্ম প্রচার হয়েছে। কয়েক শ’ একক নাটক, ধারাবাহিক নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন রীনা রহমান। প্রায় ৭০টি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বাংলার মুকুটহীন নবাব আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বহুবার নবাব সিরাজউদ্দৌলায় লুৎফা ও ঘষেটি বেগমের চরিত্রে দেশের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করে হয়েছেন প্রশংসিত, কুড়িয়েছেন খ্যাতি। ১৯৮৯ সালে স্বামী মজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েন রীনা রহমান। অভিনয় কর্মের মাধ্যমে চার সন্তানকে মানুষ করতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এভাবে পথ চলতে চলতে আজ বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে এসে অনেকটাই অসহায় জীবনযাপন করছেন। দেশের অভিনয় অঙ্গনের করুণ দশায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের বিশেষ গ্রেডের এই শিল্পী রীনা রহমানও অনেকটা কর্মহীন করুণ পথেই চলছেন। দেশের প্রথিতযশা প্রভাবশালী অঙ্গন থেকে এমনকি দেশের শিল্পীবান্ধব সরকার যদি দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এ গুণী শিল্পী রীনা রহমানের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তা হলেই হয়ত জীবনের শেষ ক’টি দিন শঙ্কাবিহীন কেটে যাবে রীনা রহমানের। এদিকে সম্প্রতি ‘মুক্তালয় নাট্যাঙ্গন সম্মাননা পদক ও উপহার ২০১৭’ পেয়েছেন বিশিষ্ট অভিনয় শিল্পী রীনা রহমান নাট্যচর্চায় ২০ বছর অতিক্রমে ২০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছর দেশের একজন নিবেদিত প্রাণ অভিনয় শিল্পী রীনা রহমানকে ‘মুক্তালয় নাট্যাঙ্গন সম্মাননা পদক ও উপহার’ প্রদান করে মুক্তালয় নাট্যাঙ্গন। এ বছর মুক্তালয় নাট্যাঙ্গনের প্রথম ‘মুক্তালয় নাট্যাঙ্গন সম্মাননা পদক ও উপহার ২০১৭’-এর জন্য মনোনীত হন মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার ও চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট অভিনয় শিল্পী রীনা রহমান। সম্প্রতি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রীনা রহমানকে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট এবং উপহার হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন রীনা রহমানের মতো একজন গুণী অভিনয়শিল্পীকে জাতীয়ভাবে সম্মানিত করা উচিত। দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে তার যে অবদান তাতে তাকে জাতীয়ভাবে সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তার কাজের স্বীকৃতি দিলে কিছুটা হলেও শিল্পী হিসেবে আত্মতৃপ্তি নিয়ে চলে যেতে পারবেন। এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠন এবং ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মুক্তালয় নাট্যাঙ্গনের সদস্যরা।
×