ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে আমের কেজি পাঁচ টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৯ জুলাই ২০১৮

  ঠাকুরগাঁওয়ে আমের কেজি পাঁচ  টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৮ জুলাই ॥ জেলায় এবার আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় চায়ের দামে আম বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে আম ব্যবসায়ীরা। গত বছর আম চাষ করে লাভের মুখ দেখলেও এ বছর লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। বর্তমানে আমের যে মূল্য বাজারে চলছে এভাবে চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে অনেক চাষী আম চাষ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরেজমিনে আম চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর গাছে গাছে প্রচুর মুকুল আসে। সেই সঙ্গে বেশি লাভের আশায় গাছের পরিচর্যা করায় প্রতিটি গাছে এখনও থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। এছাড়া এবারের মৌসুমে তীব্র তাপদাহ ও গরম আবহাওয়ার কারণে সময়ের আগে গাছেই আম পাকতে শুরু করে। জেলার আম চাষীরা জানান, এবার আমের প্রচুর ফলন হওয়ায় আমের দাম অনেক সস্তা। আর আমরা যে টাকা দিয়ে বাগান কিনেছি তার অর্ধেক টাকাও এই মৌসুমে পাবো কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। বর্তমান বাজারে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা দরে। এত কম দামে যদি আম বিক্রি হয় তাহলে লাভ তো দূরে থাক আসল পুঁজিও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এদিকে খুচরা আম ব্যবসায়ীরা জানান, বাগান থেকে আমরা ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে আম ক্রয় করেছি কিছু লাভের আশায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাজারে অতিরিক্ত আমের কারনে সেই আমের দাম ক্রেতারা ১০ টাকা কেজি দরেও নিতে চাইছে না। প্রতি বছর আম বিক্রি করে মোটামুটি আমাদের সংসার চলে যায় কিন্তু এবার আমের দাম কম হওয়ায় এক কাপ চা খেতে হচ্ছে এক কেজি আম দিয়ে। আম বিক্রি করে নিজেদের সংসার চালানো তো দূরেই থাক নিজেই চলতে পারি কিনা সেটি নিয়ে ভাবছি আমরা। অন্যদিকে ক্রেতারা সস্তায় আম পাওয়ায় তারা খুশিতে প্রতিদিন আত্মীয় স্বজনের জন্য আম কিনতে ভিড় করছেন খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে দোকানে। যে দোকানে যত কম দাম তার দোকানে ততই ভিড় বেশি হচ্ছে। শহরের বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে আম বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর জেলার বিখ্যাত সূর্যাপুরী আম প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১৩শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা কিন্তু এবার তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা দরে। এছাড়া হিম সাগর আম মণ প্রতি বিক্রি হয়েছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে। যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে আটশ’ থেকে একহাজার টাকায়। গোপালভোগ গত বছর ১২শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা, এ বছর সাতশ’ থেকে নয়শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ল্যাংড়া আম গত বছর দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা, এ বছর এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও একটি উন্নয়নশীল জেলা। এ জেলায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়। অন্যান্য সবজি ও ফলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে আম রয়েছে। এর মধ্যে সূর্যাপুরী আমটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমের ফলন ভালই হয়েছে। তবে বিগত বছরের চেয়ে এবার মূল্য কম পাচ্ছেন এই নিয়ে কৃষকরা কিছুটা মর্মাহত হলেও ফলনের দিক থেকে বেশি হওয়ায় তা আবার কিছুটা পুষিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি ঠাকুরগাঁও জেলায় আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে এই বিপুল উৎপাদিত আমগুলো সংরক্ষণ করে কৃষকরাও লাভবান হবেন, সেই সঙ্গে দেশের সরকারও এই আম বিদেশে রফতানি করে লাভবান হবেন।
×