ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় আমন আবাদে শঙ্কা

মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ৬০ গ্রামের মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৯ জুলাই ২০১৮

মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায়  ৬০ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৮ জুলাই ॥ পটুয়াখালীর সাগরপারের জনপদ কলাপাড়ায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে অন্তত ৬০ গ্রামের কুড়ি হাজার কৃষক পরিবার। পারছে না আমনের বীজতলা করতে। পানি সরবরাহের খাল, কালভার্টসহ সব দখল করে মাছ ধরার লোকজন নিয়ন্ত্রণ করছে। পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতায় বৃষ্টি থামার চারদিন পরেও এখন পর্যন্ত চাষের জমি কোমর থেকে হাঁটুসমান পানিতে ডুবে আছে। কৃষক চাষাবাদ তো দূরের কথা বাড়িঘর থেকে চলাচল করতে পারছে না। তক্তা, গাছের সাঁকো তৈরি করে বাড়ি থেকে বেড় হচ্ছেন। কৃষকসহ সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পানি চলাচলের স্লুইস সংযুক্ত খালসহ পানি চলাচলের কালভার্ট দখল করে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মাছ ধরায় এমন বিপাকে পড়েছেন কৃষক। এবছর আমন মৌসুম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বীজতলা করতে পারছে না। খাল দখল করে দেয়া বাঁধ কেটে দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করেছে। এখন চলছে দখলদারদের তালিকা তৈরির কাজ। কিন্তু কৃষকের দুরবস্থা কাটছে না। সম্প্রতি টানা চারদিনের বৃষ্টিতে জমানো পানিতে এখনও বন্দী হয়ে আছে চাষের জমি। তিন/চার দিন আগে বৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু পানি ওঠা-নামার পথ রুদ্ধ করে মাছ ধরায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দী দশায় পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক। সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের এক চতুর্থাংশ এলাকা এখন পানিবন্দী দশায় রয়েছে। দুটি পৌরসভায় রয়েছে জলাবদ্ধতা। কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের মহিপুর ইউনিয়নের বিপিনপুর গ্রামের বাসিন্দা আবিদ হাসান সেমিপাকা একটি ঘরসহ বাড়ি করেছেন। এখন পানিবন্দী। একটি সাঁকো করেছেন তক্তা দিয়ে তার ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। জানালেন, বিপিনপুর সড়কের যেখান দিয়ে পানি নামার কথা সেই কালভার্ট আটকে বাড়িঘর করেছে একটি মহল। স্থানীয় বাসীন্দা স্বপন মুসল্লি জানান, দালাল বাড়ির কালভার্ট তো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মহাসড়কের দুই পাশে অন্তত তিন বিলের পানিতে বন্দী রয়েছেন চার শ’ পরিবার। একই দশা নিজামপুর, কোমরপুর, সুধীরপুর, পুরানমহিপুর গ্রামের মানুষের। ডালবুগঞ্জ ও মহিপুর ইউনিয়নের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের জন্য সেতু বাদ দিয়ে করা ক্লোজারটি এখনও অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের কৃষিকাজের অন্তরায় হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুম না আসতেই গাববাড়িয়ার ক্লোজারের কারণে ডালবুগঞ্জ, মিঠাগঞ্জ, বালিয়াতলী, ধুলাসারের আংশিক এলাকার পানি ওঠানামার পথ সোনাতলা নদীর সঙ্গে শাখা নদীর পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তেগাছিয়া থেকে ডালবুগঞ্জ বাজার, সাপুড়িয়ার জয়বাংলা বাজার থেকে মধুখালী হয়ে ডালবুগঞ্জ পর্যন্ত এবং কাটাভাড়নির শাখা নদী থেকে বিশাল এলাকার পানি নামতে পারে না। যা খনন করে কৃষকরে দুর্ভোগ লাঘবের কথা। কাটাভাড়ানির শাখা গত বছর কিছু অংশ খনন করা হলেও বাকি অংশ খনন না করায় চারটি ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের কৃষক এখনও পানিবন্দী দশায় রয়েছে। টিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শিমু জানান, পায়রা বন্দর থেকে মহাসড়কের ফোর লেন সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে। দু’টি স্পটে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হস্তক্ষেপে পানি নামানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও তার ইউনিয়নের বিশাল এলাকা পানিবন্দী। তার দাবি পানি চলাচলের জন্য মোটা পাইপ দেয়া প্রয়োজন। এছাড়ও সবক’টি ইউনিয়নের পানি চলাচলের খালে দেদার বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালী মহল মাছ ধরায় পানি বন্দীদশা কাটছে না মানুষের। এক চতুর্থাংশ এলাকা পানিবন্দী হয়ে আছে। ফলে আমন আবাদের সময় এসে গেছে, কিন্তু কৃষক বীজতলা করতে পারছেনা। প্রশিক্ষিত, যান্ত্রিক উপায়ে চাষাবাদ করা নীলগঞ্জের কৃষক গোলাম সরোয়ার জানান, তাদের এলাকার সাপুড়িয়ার খালের বাঁধ অপসারনে তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ৭/৮টি বাঁধের একটিও অপসারন করা হয়নি। তারপরও কৃষকরা জমানো পানির মধ্যে সেচ দিয়ে বীজতলা করতে বাধ্য হচ্ছে। সব ক’টি ইউনিয়নের একই দশা। পানি ওঠানামার খালে বাঁধ আর বাঁধ। স্লুইস গেটে জাল পাতা। কৃষক যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মসিউর রহমান জানান, সবক’টি ইউনিয়নেই কমবেশি জলাবদ্ধার সমস্যা রয়েছে। তবে মহিপুর আর লালুয়ায় সবচেয়ে বেশি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তানভীর রহমান জানান, খালের পানি চলাচলের স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে বাঁধ দেয়া লোকজনকে কেটে দেয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এখন দখলদারদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। কৃষিকাজের সমস্যা নিরসনে শীঘ্রই খালের বাঁধ অপসারনে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো হবে।
×